আইপিএলে ভাগ্য বদলানোর আগে কাপ–প্লেট ধুচ্ছিলেন উড
‘পাউন্ডে কত হলো?’
স্বামীর দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন সারাহ উড।
১২ ফেব্রুয়ারির দুপুর, সাড়ে ১২টা তখনো বাজেনি। যে কারণে বেড়াতে যাওয়া পেছানো হয়েছে, সেটা মাত্রই শেষ হয়েছে। আইপিএল নিলামে টানাটানি পর্ব পেরিয়ে মার্ক উড থিতু হয়েছেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসে। ইংলিশ ফাস্ট বোলারের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ রুপি খরচ করেছে আইপিএলের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি। ৭ কোটি ৫০ লাখ রুপি শুনতে মন্দ নয়। কিন্তু এই অঙ্কটা তাদের জীবন আসলেই কতটা বদলে দেবে, সেটা বোঝার জন্য সারাহর পাউন্ডের অঙ্কটা জানা দরকার।
মুখের ওপর রুপিকে পাউন্ডে রূপান্তর করতে পারা স্বাভাবিক মানুষের কাজ নয়। উড দম্পতি সেটা করতে পারেননি, তবে জীবন যে বদলে যাচ্ছে সেটা ঠিকই আগ থেকে বুঝতে পারছিলেন দুজন। জীবন বদলে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তাই বাসন ধুতে ব্যস্ত মার্ককে টিভি দেখতে ডেকেছিলেন সারাহ।
মুহূর্তটা আরও আগেই আসতে পারত। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন ইংলিশ ফাস্ট বোলার। বর্তমানে যাঁরা এ কাজটা করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে উডই সবচেয়ে নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটারের কাটা ছুঁতে পারেন। এমন পেসারদের নিয়ে আইপিএলে টানাটানি বরাবরই হয়। ২০২১ আইপিএলেও থাকার কথা ছিল উডের। কিন্তু ইংল্যান্ড দল নিয়ে ব্যস্ততা আর টানা জৈব সুরক্ষাবলয়ের কথা ভেবে আগমুহূর্তে নাম কাটিয়ে নিয়েছিলেন উড।
জাতীয় দলের প্রতি মনোযোগ ফল দিয়েছে। এবারের অ্যাশেজে ইংলিশ কোনো ক্রিকেটার যদি মাথা উঁচু করে দেশে ফিরতে পারেন, সেটা মার্ক উড। সবগুলো ম্যাচ খেলেননি, তবু ১৭ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার। দুর্দান্ত পেসে বিভ্রান্তিকর ফুট ওয়ার্কের মারনাস লাবুশেনকেও কাবু করেছেন। সে সুবাদে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিতে সুবিধা বেড়েছে। আইপিএল তো জীবনই বদলে দিল।
গতবারের মতো এবারও আইপিএলে ২ কোটি ভিত্তিমূল্য ছিল উডের। পরিকল্পনা ছিল, স্থানীয় সময় সকাল ১০টার মধ্যে নিজের ভাগ্য নির্ধারণ দেখে বাসা থেকে বের হবেন, ‘আমরা সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে বের হচ্ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি আমার, সে উদ্দেশ্যেই যাচ্ছিলাম।’
কিন্তু নিলামের প্রথম দিনে ঘটে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। সঞ্চালক হিউ এডমিডস অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় দুই ঘণ্টা নিলাম বন্ধ থাকে। ফলে পরিকল্পনায় একটু পরিবর্তন আসে, সঞ্চালক মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং আমাদের যাওয়াও পিছিয়ে গেল। নিলামের কারণেই তাঁর দুই বছরের সন্তানের রুটিনেও হালকা বদল হয়েছিল, ‘হ্যারির গাড়িতে ঘুমানোর কথা ছিল, কিন্তু নিলামে আমার নাম ওঠার আগে সে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ল।’
বাড়তি সময়টা কাজে লাগাতে কাপ-প্লেট ধোয়ার আয়োজন করছিলেন উড। এ সময় নাম ওঠে তাঁর। স্ত্রী সারাহ তাঁকে ঠিকভাবে ডাকতেও পারেননি, পাছে ঘুম ভেঙে যায় ছেলের, ‘আমার মনে আছে সারাহ চিৎকার করল-আবার ফিসফিস করে ডাকছিল, “এখনই ফিরে আস।” আমি তখন প্লেট সিঙ্কে ধোয়ার জন্য রাখছিলাম। নিলামের শুরুটা খুব ধীর ছিল। হঠাৎ গতি বেড়ে গেল এবং সংখ্যা চড়তে লাগল।’
চড়তে চড়তে সেটা থামল ৭ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে। ইংল্যান্ড লায়ন্সে (ইংল্যান্ড এ দল) এক সঙ্গে কাজ করা কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের আগ্রহই তাঁকে নিয়ে গেছে লক্ষ্ণৌতে। নিলাম যখন থামল, তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না উডের, ‘যখন সব চূড়ান্ত হলো, সারাহ জিজ্ঞেস করল, “পাউন্ডে এটা কত হয়।” আমাকে হয়তো আমার সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রাখতে হবে, যাতে এটা (নিলামের অর্থ) হারিয়ে না যায়। আমরা খুবই খুশি। এটা খুব অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। মনে হচ্ছিল কম্পিউটারের কোনো গেম, প্রায় অবিশ্বাস্য, ফুটবল ম্যানেজারের দলবদলের মতো। কিন্তু যখন চুক্তি স্বাক্ষর হয়, তখনই বোঝেন এটা কত বাস্তব।’
আইপিএলে ভালো খেলে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতিটা সেরে নিতে চাইছেন ৩২ বছর বয়সী উড। সারাহর প্রশ্নের সূত্র ধরে বলা যায়, ৭ লাখ ৩৫ হাজার পাউন্ডের এক চুক্তি আর্থিকভাবে তাঁর ভবিষ্যতের দায়িত্ব তো নিয়েই নিচ্ছে!