আইপিএলে ফ্লপ ভারতীয় রানে ফিরে বললেন, ‘রাস্তা থেকে উঠে এসেছি, ফিরতে জানি’
টেস্ট অভিষেকেই ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন পৃথ্বী শ। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার এই ক্রিকেটার তিন বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে করেন সেঞ্চুরি। রঞ্জি আর দুলীপ ট্রফিতেও পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। পারফরম্যান্স দিয়েই নজর কেড়েছিলেন সবার।
মাঝে কিছুদিন সময় খুব একটা ভালো যায়নি পৃথ্বীর। তবে আবারও বিজয় হাজারে টুর্নামেন্ট দিয়ে ফিরেছেন স্বরূপে। আর রানে ফিরেই পৃথ্বী বললেন, ‘রাস্তার ছেলে’ বলে তিনি জানেন, কীভাবে পোড় খেয়ে আবারও ফিরে আসতে হয়। সেই আশাতেই নিজের ব্যাটের প্রতি আস্থা ধরে রেখেছেন।
সর্বশেষ ১৩তম আইপিএল কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ভারতের জার্সিতে—কোথাও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি মুম্বাইয়ের তরুণ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া সর্বশেষ আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে ১৭.৫৪ গড়ে করেন ২২৮ রান।
ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে একটিমাত্র টেস্ট খেলেই দল থেকে বাদ পড়তে হয় তরুণ ওপেনারের। অনেকে বলছিলেন তাঁর টেকনিকেই ছিল সমস্যা। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে ‘৩৬’ লজ্জার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের হারের পথে দুই ইনিংসে করেন ৪ রান।
দেশে ফিরে দিল্লি ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ প্রবীণ আমরের তত্ত্বাবধানে দিন পাঁচেক অনুশীলন করেন। পরামর্শ চেয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের কাছেও। সেই পরামর্শ কি কাজে দিয়েছে? চলতি বিজয় হাজারে ট্রফিতে পৃথ্বীর পারফরম্যান্স তো তা-ই বলে। ৭ ম্যাচে এরই মধ্যে করেছেন ১৮৮.৫০ গড়ে ৭৫৪ রান।
অপরাজিত ২২৭ রানের ইনিংস ছাড়াও আছে ১০৫, অপরাজিত ১৮৫ ও ১৬৫ রানের মূল্যবান তিনটি ইনিংস। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে পৃথ্বীর ১২২ বলে করা ১৬৫ রানের সুবাদেই ৭২ রানে কর্ণাটককে হারায় মুম্বাই। ১৪ মার্চ উত্তর প্রদেশের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে পৃথ্বীর মুম্বাই।
এতে সন্দেহ নেই যে ছন্দে ফিরেছেন পৃথ্বী। কখনোই বাজে সময়ে হাল ছাড়েননি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কীভাবে লড়াই করে ফিরতে হয়, সেটা ভালোই জানা পৃথ্বীর, ‘আমি কখনোই সহজে হাল ছাড়ি না। আমি ভিরারের (মুম্বাইয়ের উত্তরের মফস্বল) ছেলে। রাস্তা থেকে উঠে এসেছি। আমি জানি কীভাবে ফিরে আসতে হয়। সব সময় দলকে সবকিছুর ওপরে রেখেছি, সেটা ক্লাবই হোক, মুম্বাই বা ভারতীয় দলই হোক।’
দল থেকে বাদ পড়াটা সব সময়ই চাপের। কিন্তু তাই বলে ২১ বছর বয়সী ক্রিকেটার বাদ পড়লেও কখনো দমে যাননি। সব সময় চেয়েছেন ব্যাটে রান ফেরাতে। সেই চেষ্টায় সাফল্য পাওয়ার তৃপ্তি পৃথ্বীর, ‘একবার যখন কেউ দল থেকে বাদ পড়ে, অবশ্যই পারফর্ম করার চাপ থাকে তার ওপর এবং দলে ফেরার চেষ্টা করে সে। আমি রান করতে উন্মুখ ছিলাম। সব সময় বড় স্কোর করতে চেয়েছি। ব্যাটিংয়ে নামলে চেষ্টা করেছি দলকে ভালো একটা অবস্থানে রাখতে।’
সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে পৃথ্বী খেলেছেন পিঠের ব্যথা নিয়ে। এভাবে খেলতে কষ্ট হলেও পৃথ্বী ব্যাট করা থামাননি। ফিজিও তাঁকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে ব্যাট করে গেছেন। পৃথ্বীর করা অপরাজিত ১৮৫ রানের সুবাদেই সেদিন ২৮৪ রান টপকে ম্যাচ জেতে মুম্বাই। ওই ম্যাচে কষ্টের কথা বলছিলেন পৃথ্বী, ‘কোয়ার্টার ফাইনালের ওই দিন আমার পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। আমাদের ফিজিও এবং টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসতে বলেছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, না।’
লড়াকু পৃথ্বী ব্যাট দিয়েই জবাব দিচ্ছেন নির্বাচকদের। হয়তো আবারও ফিরবেন ভারতের জাতীয় দলে।