অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪-এর পর ক্যালিসের কথা, ‘ওরা ১৫ রান কম করেছে’
ক্রিকেটকেই কি বদলে দিয়েছে ম্যাচটা? নিশ্চিতভাবেই!
যে যুগে আগে ব্যাট করে ৩০০ মানেই ম্যাচ জেতা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যেত, ৩৫০ পার করার উদাহরণ ছিলই না, সে যুগে একটা দল ৪৩৪ করে ফেলাই ছিল অকল্পনীয়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল, যখন সেদিনই ৪৩৪ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও হয়ে গেল! এই টি-টোয়েন্টির যুগেও তো আর এমন কীর্তি হয়নি!
২০০৬ সালের ১২ মার্চ জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ইতিহাস রাঙানো সেই ম্যাচের গল্প এখন আবার আসছে কেন? জ্যাক ক্যালিসের চমকে দেওয়া কথার কারণে। সেদিন আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৪৩৪ রান করে ফেলার পর যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে অবিশ্বাস-হতাশা মিলেমিশে একাকার, ক্যালিস নাকি ম্যাচের বিরতিতে সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘ওরা ১৫টা রান কম করেছে!’ সে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ স্মৃতিচারণায় তা-ই বলেছেন।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৪৪ বলে ৫৫), সাইমন ক্যাটিচ (৯০ বলে ৭৯), মাইক হাসির (৫১ বলে ৮১) অর্ধশতক আর অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের শতকে (১০৫ বলে ১৬৪) যখন ইনিংস শেষে অস্ট্রেলিয়ার নামের পাশে ৪ উইকেটে ৪৩৪ রান, স্মিথের মাথা ঘোরার দশা! একে তো সিরিজ–নির্ধারণী পঞ্চম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার এমন বেধড়ক পিটুনির পর সিরিজ হারের শঙ্কা, তার ওপর অধিনায়ক হিসেবে দলকে ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বীবিত করার দায়িত্বও স্মিথের।
শেষ পর্যন্ত স্মিথের ৫৫ বলে ৯০, তিনে নামা হার্শেল গিবসের ১১১ বলে ১৭৫, মার্ক বাউচারের ৪৩ বলে অপরাজিত ৫০ আর ইয়োহান ফন ডার ওয়াথের ১৮ বলে ৩৫ রানে ১ বল আর ১ উইকেট হাতে রেখেই রূপকথা লেখে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু অবিশ্বাস্য গল্পটা তো ম্যাচ শেষে হয়েছে, বিরতিতে দলের অবস্থা কী ছিল, ক্রিকেটডটকমকে তা-ই জানিয়েছেন স্মিথ।
‘আমাদের হাতে (মানসিক দিক থেকে) ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বেশি সময় ছিল না। আমি ভাবছিলাম, আগে আমি নিজে প্যাড পরে প্রস্তুত হই। যেহেতু আমাকেই ব্যাটিং উদ্বোধনে নামতে হবে, আগে সেটাই করি। আগে নিজে ব্যাটিংয়ের জন্য মাথাটা পরিষ্কার করি, তারপর পুরো দলের মানসিক অবস্থা ঠিক অবস্থায় আনার চেষ্টা করা যাবে’—অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পরের অবস্থার বর্ণনায় বলছিলেন স্মিথ।
কিন্তু স্মিথের থমথমে ড্রেসিংরুমকে উজ্জ্বীবিত করার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায় জ্যাক ক্যালিসের উপস্থিতিতে। কীভাবে? স্মিথের স্মৃতিচারণা, ‘আমি যখন প্যাড পরছিলাম, জ্যাক ক্যালিস ড্রেসিংরুমে এসেই বলল, “বোলাররা অসাধারণ করেছ, অস্ট্রেলিয়া ১৫ রান কম করেছে!’’’ প্রতিপক্ষ ৪৩৪ রান করার পর এমন একটা কথা ড্রেসিংরুমের থমথমে অবস্থার মধ্যে অনেকটা বরফ গলানোর কাজ করেছে। সবাই তখন হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার দশা! এরপর নিজেরা কিছু ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করলাম, সেখানে আবার সবার হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়।’
হাসি যে যেকোনো পরিস্থিতি অনেকটা সহজ করে দেয়, সে তো পুরোনো কথাই। ক্যালিসের ‘বরফ গলানো’ কথার পর দক্ষিণ আফ্রিকার পরিকল্পনাও সহজ হয়ে গেল। ‘তখন ব্যাপারটা হয়ে গেল কে কী করবে, সেটা ঠিক করা। ‘‘আমি প্রথমে নামছি, সে ক্ষেত্রে আমি কীভাবে ভালো একটা শুরু এনে দিয়ে দলকে একটা মোমেন্টাম এনে দিতে পারি। তবে কী একটা রোলারকোস্টারই না ছিল ম্যাচটা!’, স্মিথের কথার সঙ্গে দ্বিমত করার মানুষ সম্ভবত নেই।
দ্বিমত সম্ভবত কেউ করবেন না স্মিথের পরের কথার সঙ্গেও, ‘হার্শেল গিবস অবিশ্বাস্য খেলেছে, রিকি পন্টিংও। যেভাবে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে ম্যাচটা, শেষ বলে (শেষ ওভারের পঞ্চম বলে) সমাপ্তি, ওয়ান্ডারার্সে আবেগের আর বাঁধ না মানা...সব মিলিয়ে আমার চোখে সর্বকালের সেরা ওয়ানডে এটিই।’