অস্ট্রেলিয়ান পেসার 'ব্যাটসম্যান' হয়ে ওঠায় কোহলিরা অপেক্ষায়

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে লায়নকে নিয়ে বীরের মতো মাঠ ছাড়ছেন কামিন্স। ছবি: এএফপি
চতুর্থ দিনের খেলা শেষে লায়নকে নিয়ে বীরের মতো মাঠ ছাড়ছেন কামিন্স। ছবি: এএফপি
>মেলবোর্ন টেস্টে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ভারত। তবে প্যাট কামিন্সের বীরত্বে ম্যাচটা পঞ্চম দিনে টানতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। হাতে ২ উইকেট রেখে অস্ট্রেলিয়া এখনো ১৪১ রানের দূরত্বে

আগামীকাল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে মেলবোর্নে। জয়ের জন্য বিরাট কোহলি তাই ঝুঁকিটা নিয়ে নেন। আজ চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৬ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ভারত। এই অবস্থায় ইনিংস ঘোষণা করে কিছুটা চমকেই দেন ভারতের অধিনায়ক। যদিও স্কোরবোর্ডে লিড তখন ৩৯৮ রানের প্রায় ‘অসম্ভব’ দূরত্ব। অসম্ভব বলার কারণ, মেলবোর্নে এত রান তাড়া করে কেউ কখনো জিততে পারেনি। তা ছাড়া গত চার বছরে ভারতের বিপক্ষে কোনো দলই চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে জিততে পারেনি। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা হলেও এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ড্র-ই জয়ের সমান। কিন্তু সেই কাজটি এখন প্রায় অসাধ্যে পরিণত হলেও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এক পেসার!

অসাধ্যসাধনে অস্ট্রেলিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল প্রায় ছয় সেশন ব্যাটিংয়ের। এমন পরিস্থিতিতে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকাটাই শেষ কথা। কিন্তু দলীয় ৬৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই পথচ্যুত হয় টিম পেইনের দল। দুই ওপেনার মার্কাস হ্যারিস, অ্যারন ফিঞ্চ এবং তিনে নামা উসমান খাজা দ্রুত ফিরে গেলে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে ৫১ রানের জুটিতে বিপর্যয় জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন শন মার্শ ও ট্রাভিস হেড। কিন্তু মিডলঅর্ডারে মার্শ ভাইয়েরা কিংবা অধিনায়ক পেইন বড় ইনিংস খেলতে না পারায় ভারত আজই জয় তুলে নেওয়ার সুবাস পাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষায় রাখার কাজটি করেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের ‘লেজ’—লোয়ার অর্ডার।

এই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া যেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’—আর সেই ‘আর্মি’ অবশ্যই প্যাট কামিন্স। ভারতের দুই ইনিংসে এই পেসার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যেমন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তেমনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক! আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৩ বলে কামিন্সের অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস ভীষণ মূল্যবান ইনিংসটাই ম্যাচে বাঁচিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়াকে। ভালো অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেওয়া কামিন্সের এই ইনিংসের জন্যই ৮ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। হাতে মাত্র ২ উইকেট রেখে জয় থেকে অস্ট্রেলিয়া এখনো ১৪১ রানের দূরত্বে। কাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস সত্য না হলে, মানে দিনের বেশির ভাগ সময় বৃষ্টিতে ধুয়ে না গেলে কিংবা লোয়ার অর্ডার অলৌকিক কিছু করে না বসলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ম্যাচ বাঁচানো অসম্ভব—কথাটা বলাই যায়।

অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডার আজ যেভাবে লড়েছে কাল তার পূর্ণ বিকাশ ঘটলে ভিন্ন সমীকরণ। ম্যাচ ক্ষীরের মতো জমে যাবে, কে পাতে তুলবে—তা নিয়েও হয়তো দুই দলের কাড়াকাড়ি চলবে। কিন্তু আপাতত এসবই সম্ভাবনার কথা। অস্ট্রেলিয়া এই সম্ভাবনার নিশ্চয়ই পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায়। কামিন্সের বুক চিতিয়ে লড়াই দলটির এই চাওয়ার ভিত। এখন বাকিরা যোগ্য সঙ্গ দিতে পারবে কিনা কিংবা কাল কামিন্স নিজেই কতক্ষণ টিকবেন সেটি বড় প্রশ্ন।

দুই ইনিংস মিলিয়ে এরই মধ্যে ১৫১ বল খেলেছেন কামিন্স। কাল ব্যাটিংয়ে কিছুক্ষণ টিকলে বল খেলায় ছাপিয়ে যাবেন সতীর্থদের সবাইকে। তার আগে ২০৬ ওভারের মতো ফিল্ডিং করা, ৪৫ ওভার বোলিং করে ৯ উইকেট নেওয়া (এর মধ্যে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং) আর ফিফটি করে ম্যাচটা পঞ্চম দিনে টেনে নেওয়া—কামিন্স ছাড়া এই অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ আর কে! চলতি বছর এক টেস্টে ইনিংসে ন্যূনতম ৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ফিফটি তুলে নেওয়ার দ্বিতীয় নজির গড়লেন কামিন্স।

ভারত আজই জয় তুলে নিতে মরিয়া ছিল। নির্ধারিত সময়ের পরও আধঘণ্টা বেশি বোলিং করেছে কোহলির দল। কিন্তু নবম উইকেটে স্পিনার নাথান লায়ন ও কামিন্সের অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রানের জুটিতে তা আর হয়নি। কাল এখান থেকেই অলৌকিক কিছু ঘটানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে কামিন্স-লায়নদের। আর ভারতের লক্ষ্য প্রত্যাশিত ফলের—জয়।