‘অবহেলিত’ আবিদ আলীই এখন পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে

টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণেই অভিষেকে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার আবিদছবি : প্রথম আলো

চট্টগ্রামে টেস্টে পাকিস্তানের জয়ে বড় ভূমিকা আবিদ আলীর। প্রথম ইনিংসে শতরানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শতকের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। দারুণ এক গৌরব থেকে বঞ্চিত হলেও তিনিই হয়েছেন ম্যাচসেরা। অথচ এই আবিদই পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ করেও হয়েছিলেন অবহেলার শিকার। এখন সেই আবিদেরই টেস্টে পঞ্চাশের চেয়ে শতকের সংখ্যা বেশি। ঘরোয়া ক্রিকেটেরই দারুণ এক আবিষ্কার পাকিস্তানের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

৩১ বছর বয়সে এসে ২০১৯ সালে সুযোগ পান পাকিস্তান টেস্ট দলে। অভিষেকেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে শতরান করেন তিনি। করাচিতে নিজের দ্বিতীয় টেস্ট ও তৃতীয় ইনিংসেই খেলেছেন ১৭৪ রানের এক ইনিংস। টেস্টের উদ্বোধনী ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান দলের একটা বড় সমস্যারই সমাধান যেন এই আবিদ। ১৫টি টেস্ট খেলে ২৫ ইনিংসে ৪ শতক আর ৩ পঞ্চাশে ৪৯.৬০ গড়ে ১ হাজার ১৪১ রান সেটিরই বড় প্রমাণ। এ বছরেরই মে মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে অপরাজিত ২১৫ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের যোগ্যতার বড় প্রমাণ তিনি রেখেছেন।

পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ৮ হাজার ৮০০ রান আবিদের
ছবি : শামসুল হক

কাল চট্টগ্রাম টেস্টের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে আবিদ বলেছেন, ‘আমার পারফরম্যান্সের কৃতিত্বটা পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটকেই দিতে হবে।’ সত্যিই ঘরোয়া ক্রিকেট যে একজন ক্রিকেটারকে কতটা গড়ে তুলতে পারে, ঘরোয়া ক্রিকেট যে ভালো ক্রিকেটার তুলে নিয়ে আসায় কতটা প্রয়োজনীয়, আবিদ আলী যেন সেই ধারণারই বড় প্রমাণ।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৪ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন আবিদ আলী। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট কায়েদে আজম ট্রফিতে তাঁর অভিষেক। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ইসলামাবাদের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের একটি ইনিংসে আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের রেকর্ড আছে তাঁর। সে ম্যাচে তিনি করেছিলেন অপরাজিত ২৩১। কিছুদিন পর আরও একটি ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ২৪৯ রানের একটি ইনিংস।

৩১ বছর বয়সে পাকিস্তান দলে সুযোগ হয় আবিদ আলীর। তার আগে এক যুগ খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে
ছবি : শামসুল হক

এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় এক যুগ কাটিয়ে দিয়েছিলেন। কখনোই সুযোগ পাননি পাকিস্তান দলে। নির্বাচকদের নজরেই আসেননি কখনো। কিন্তু যখন সুযোগ পেলেন, তখন তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন এক যুগ ধরে তাঁর প্রতি অন্যায়-অবিচারের ব্যাপারটি। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ বলতে চান আবিদকে? তিনিই যে ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি তাঁর টেস্ট আর ওয়ানডে—দুই অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছেন। ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি তাঁর দুবাইয়ে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে। অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই তিনি নিজেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন এরই মধ্যে।

১২৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৮ হাজার ৮০০ রান, ২৫টি শতক, ৩৫টি পঞ্চাশ, গড় ৪১.৩১—ঘরোয়া ক্রিকেট যে পারফরমার তৈরি করে, আবিদ আলীর ক্যারিয়ারের সংখ্যাগুলোই তার প্রামাণ্য দলিল।