অনুশীলন করেই ‘ফিনিশার’ হয়েছেন আসিফ
এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম তারকা হয়ে উঠেছেন আসিফ আলী। লেট মিডল অর্ডারে পাকিস্তানের অন্যতম ভরসা এই ব্যাটসম্যানকে তাঁর ব্যাট থেকে আসা ছক্কাগুলোই পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তাঁর ব্যাটের জাদু পাকিস্তানকে এবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ জয় পেতে সহায়তা করেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দল যখন হারের মুখে, তখনই আসিফ দুটি ছক্কা মেরে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যে নিয়ে আসেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও কঠিন পরিস্থিতিতে ৭ বলে ২৫ রানের ইনিংসটিই ছিল তাঁর সামর্থ্যের বড় বিজ্ঞাপন।
এই পারফরম্যান্সই তাঁকে এনে দিয়েছে আইসিসির অক্টোবরের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার। অথচ এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসিফ সাকল্যে খেলেছেন মাত্র ১৯ বল। মাত্র কয়টি বলেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। এই ১৯ বল খেলতে তিনি সময় নিয়েছেন ৩৭ মিনিট। মেরেছেন ৭টি ছক্কা, ম্যাচ জিতিয়েছেন দুটি। এ সময় ৫১ জন ব্যাটসম্যান আসিফের চেয়ে বেশি রান করেছেন, ৯৮ জন খেলেছেন আরও বেশি বল। কিন্তু আসিফের মতো প্রভাব রেখেছেন কজন?
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান তাঁর সাফল্যের পেছনের রহস্য জানতে আসিফের সঙ্গে কথা বলেছে। আসিফ জানিয়েছেন, নেটে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মে অনুশীলন করেই তাঁর এই সাফল্য। দল তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে ম্যাচে তাঁর ভূমিকার ব্যাপারটি।
নিজের ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন বলেই তিনি সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন। নেটে তিনি ‘ফিনিশার’ ভূমিকায় অনুশীলন করেন। মেরে খেলার দক্ষতা ঝালিয়ে নেন। ম্যাচে ঠিক সেটিই করে দেখিয়েছেন। আলাদা কোনো রহস্য নেই, ‘আমি এখন নেটে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে অনুশীলন করি। দলের ম্যানেজমেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, ম্যাচে আমার ভূমিকাটা কী হবে। ম্যাচ শেষ করে আসার পরিস্থিতি তৈরি করে অনুশীলন করি। ওই পরিস্থিতিতে বোলাররা বাউন্সার দেবে, স্লোয়ার দেবে, বাইরের দিকে বোলিং করবে। আমাকে সেগুলোই খেলতে হবে। এভাবেই নিজেকে তৈরি করি। আর কিছু না।’
নতুন ভূমিকায় আসিফের যেন পুনর্জন্মই হয়েছে পাকিস্তান দলে। ২০১৮ সালে প্রথম পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর থেকে দলে আসা–যাওয়া করেছেন। সময়টাও খুব বাজে ছিল তাঁর জন্য। পারিবারিকভাবে ছিলেন এলোমেলো। মানিসক দিক দিয়ে ছিলেন বিধ্বস্ত। আদরের ছোট্ট মেয়েটি যদি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, তাহলে কীভাবে ঠিক থাকেন।
শিশুকন্যা নূর ফাতিমাকে বাঁচাতে পারেননি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত চিকিৎসাতেও ফল হয়নি। অমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে গেলে যেকোনো মানুষই মানসিকভাবে পুরোপুরি শেষ হয়ে যেতেন। এর মধ্যেই ২০১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে সুযোগ পেলেন, বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। পেয়েছিলেন দুটি ফিফটি। কিন্তু বিশ্বকাপে ফর্ম হারাতে শুরু করেন।
সমালোচনার শিকারও হয়েছেন প্রচুর। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি চলেন না—এমন কথাও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে তাঁর ব্যাটিং টেকনিকের খুঁত নিয়েও। কিন্তু আসিফ নীরবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছেন নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই।
গার্ডিয়ানকে আসিফ বলেছেন নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ছক্কা মারার অনুভূতির কথা, ‘আমি সেই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে এতটুকু বলি, ওই ছক্কাগুলোর ভিডিও আমার কাছে আছে, সেগুলো আমি কমপক্ষে ১০০ বার দেখেছি। ওটা আমার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে রইবে। আমি এক ওভারে চার ছক্কা মেরেছি, এটা আমার কাছে মাঝেমধ্যেই অবিশ্বাস্য লাগে।’
ছক্কা মেরে নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছে আসিফের। ক্রিকেটপ্রেমীদের অবিশ্বাস্য লাগে, তিনি কীভাবে ছক্কাগুলো মারেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিতে যদি একই ধরনের কিছু করতে পারেন, তাহলে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে ঠাঁই পাবেন, এটা বলাই যায়।