আগের দুইবার অধিনায়ক হিসেবে কেমন ছিলেন সাকিব
তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কত্ব পেলেন সাকিব আল হাসান। মুমিনুল হক দায়িত্ব ছাড়ার পর নতুন টেস্ট অধিনায়ক করা হয়েছে এ অলরাউন্ডারকে। তাঁর সহকারীর দায়িত্ব পালন করবেন লিটন দাস।
প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে হুট করেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাকিব, ২০১১ সাল পর্যন্ত সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সাকিবকে টেস্ট অধিনায়কত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয় ২০১৮ সালে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন দ্বিতীয় মেয়াদে। প্রথম দুই মেয়াদে কেমন ছিল সাকিবের অধিনায়কত্ব?
প্রথম মেয়াদ (২০০৯-২০১১)
ম্যাচ: ৯
জয়: ১
পরাজয়: ৮
ড্র: ০
জয়ের হার: ১১.১ শতাংশ
২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিংসটাউনে প্রথম টেস্টে ৬.৩ ওভার বোলিং করেই চোটের কারণে উঠে যান মাশরাফি, ম্যাচের বাকি অংশ অধিনায়কত্ব করেন তখনকার সহ-অধিনায়ক সাকিব। তবে ‘অফিশিয়াল’ অধিনায়ক নন বলে সাকিবের অধিনায়কত্বের রেকর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো সে ম্যাচটি নেই।
দ্বিতীয় টেস্টেও ছিলেন না মাশরাফি, আদতে ওই সফরের প্রথম টেস্টের পর আর এ সংস্করণে খেলা হয়নি তাঁর। দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে সেন্ট জর্জেসের দ্বিতীয় টেস্টেও হারায় বাংলাদেশ, আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কত্বের প্রথম টেস্টেই জয় পান সাকিব। চতুর্থ ইনিংসে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংসের সঙ্গে ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হন তিনি।
সাকিবের প্রথম মেয়াদের অধিনায়কত্ব ‘ব্যক্তিগত অর্জনে কিছুটা প্রাপ্তি কিন্তু দলীয় অর্জনে হতাশা’র মোড়কে মোড়া। দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হারের পর নিউজিল্যান্ড সফরের একমাত্র টেস্টেও হারে বাংলাদেশ। যদিও হ্যামিল্টনে সে টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮৭ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পান সাকিব।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশে ও বিদেশে এরপর দুটি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৯ উইকেটে হারা ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হন সাকিব—৪৯ ও ৯৬ রানের ইনিংসের সঙ্গে নেন ৪ উইকেট। ফিরতি সফর মূলত স্মরণীয় হয়ে আছে তামিম ইকবালের লর্ডস ও ওল্ড ট্রাফোর্ডের সেঞ্চুরির কারণে।
ইংল্যান্ডের পর জিম্বাবুয়ে সফরে যায় বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্টের পর ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ হারে ৩-২ ব্যবধানে। এর আগে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স মিলিয়ে বেশ চাপেই ছিলেন সাকিব। জিম্বাবুয়ের ওই সফরের পর অধিনায়ক সাকিব ও সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবালকে বরখাস্ত করে বিসিবি। সাকিবের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকে।
দ্বিতীয় মেয়াদ (২০১৮-২০১৯)
ম্যাচ: ৫
জয়: ২
পরাজয়: ৩
ড্র: ০
জয়ের হার: ৪০ শতাংশ
সাত বছর পর মুশফিকুর রহিমের জায়গাতেই আবারও টেস্টে নেতৃত্ব পান সাকিব। দ্বিতীয় মেয়াদে সাকিবের অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতাকে ‘মিশ্র’ই বলতে হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়েই শুরু হয় সাকিবের দ্বিতীয় মেয়াদ। দুই টেস্টেই বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ, নর্থ সাউন্ডে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তো গুটিয়ে যায় ৪৩ রানেই। দুই টেস্ট সিরিজে অবশ্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান (৯৮) ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট (৮) ছিল সাকিবেরই।
২০১৮ সালের নভেম্বরে ফিরতি সফরে বাংলাদেশে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার ক্যারিবীয়দের আগের সিরিজের ফলটা ফিরিয়ে দেয় সাকিবের বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে ৬৪ রানের পর মিরপুরে ইনিংস ও ১৯৪ রানের জয় পায় স্বাগতিকেরা।
চোটের কারণে এরপর নিউজিল্যান্ড সফরের দুটি টেস্ট মিস করেন সাকিব, ক্রাইস্টচার্চে তৃতীয় টেস্টটি পরিত্যক্ত হয় মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার কারণে।
অধিনায়ক সাকিবের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ‘আলোচিত’ টেস্টটি আসে এরপর। চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশ নামে কোনো বিশেষজ্ঞ পেসার ছাড়াই। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেও আফগানিস্তানকে আটকে রাখতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ, ২২৪ রানে হারে তারা।
অধিনায়ক সাকিবের পরের সফর হওয়ার কথা ছিল ভারতে। এরপরই ফাটে বোমা—জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব। সাকিবের জায়গায় টেস্টে দায়িত্ব দেওয়া হয় মুমিনুলকে। করোনাভাইরাসের কারণে অবশ্য নিষেধাজ্ঞার সময়ে যা মিস করার কথা ছিল, এর চেয়ে বেশ কম ম্যাচ মিস করেন সাকিব। ২০২১ সালে ফেরেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
তৃতীয় মেয়াদ (২০২২-)
প্রথম দুই মেয়াদে সাকিবের অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানেই তৃতীয় মেয়াদ শুরু হতে যাচ্ছে অধিনায়ক সাকিবের। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে রানখরায় ভুগতে থাকা মুমিনুল হক অধিনায়কত্ব করতে চান না, এমন ঘোষণার পর থেকেই সাকিবের নামটি ঘুরেফিরে আসছিল।
অবশেষে ২ জুন বিসিবির বোর্ড সভার পর সিদ্ধান্ত আসে, সাকিবের কাঁধেই পড়ছে নেতৃত্বের ভার।