অধিনায়ক দ্রাবিড়কে সহায়তা করেননি তাঁর সতীর্থেরা?
ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে কুখ্যাত আর বিতর্কিত অধ্যায় হচ্ছে গ্রেগ চ্যাপেলের কোচিংয়ের সময়টা। সে সময়ের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে অস্ট্রেলীয় গ্রেগের বিরোধ অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। পরে তো অধিনায়কত্বই হারাতে হয় সৌরভকে। আজ এত দিন পরও গ্রেগ যে সময়টা ভোলেননি, তা বোঝা গেল তাঁর কিছু মন্তব্যে। সৌরভের প্রতিও তাঁর ক্ষোভ–বিরাগ বিন্দুমাত্র কমেনি।
ক্রিকেট লাইভ স্টোরিজ শিরোনামের একটি পডকাস্টে তিনি সে সময়ের সব সমস্যার জন্যই দায়ী করেছেন সৌরভকে। সৌরভ নিজের খেলা নিয়ে মনোযোগী ছিলেন না, তিনি কেবল নিজের ক্ষমতা নিয়ে ভাবতেন। দলে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন—সৌরভকে নিয়ে গ্রেগের অভিযোগগুলো এমনই। সৌরভের প্রতি যেমন নিজের সব ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন, ঠিক তেমনি সৌরভের বদলে অধিনায়ক হওয়া রাহুল দ্রাবিড়ের প্রতি তাঁর সন্তুষ্টি ও সহানুভূতিও গোপন রাখতে পারেননি এই সাবেক অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান।
সৌরভ–গ্রেগ সমস্যায় রাহুল কোনো পক্ষেই ছিলেন না। সৌরভের সঙ্গে বরাবরই ‘দ্য ওয়াল’ রাহুলের চমৎকার সম্পর্ক। অথচ, রাহুলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সে সময় বারবারই পড়তে হয়েছে। তাঁর অধিনায়কত্বের সময়ই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিয়েছিল ভারত।
কেবল সৌরভের সঙ্গে বিরোধই নয়, ভারতীয় দলে গ্রেগের সময়টা ছিল বিভ্রান্তি আর অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ঠাসা। এসবের কথা বিভিন্ন সময় শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণ, হরভজন সিংরা বলেছেন। টেন্ডুলকারের আত্মজীবনীতেই তো উঠে এসেছে, রাহুল দ্রাবিড় থাকতেই নাকি গ্রেগ তাঁকে ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। হরভজন সিং গ্রেগকে বলেছিলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধরনের এক কোচ।
ওই সময় (২০০৫ থেকে ২০০৭) অধিনায়ক রাহুল ভারতীয় দলের কল্যাণে সর্বান্তকরণে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন এই অস্ট্রেলীয় সাবেক নিজেই। তিনি ভারতীয় দলকে দুনিয়ার সেরা বানাতে যা যা করা দরকার, সবই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারই নাকি রাহুলকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেননি। সৌরভ গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্বের সময় ওই সিনিয়র ক্রিকেটারদের জায়গা পাকা ছিল। রাহুল অধিনায়ক হওয়ার পর তাঁদের শঙ্কা ছিল, তাঁরা হয়তো দলে নিজেদের জায়গা হারিয়ে ফেলবেন। সহায়তা তো তাঁরা রাহুলকে দেনইনি, উল্টা অনেক ক্ষেত্রে অধিনায়কের অনেক উদ্যোগের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
রাহুলের প্রতি সহানুভূতিই প্রকাশ পেয়েছে গ্রেগের কথায়, ‘ভারতকে সেরা দল বানাতে রাহুলের উদ্যোগ আর ভাবনার অভাব ছিল না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভারতীয় দলের সব ক্রিকেটারের অনুভূতি রাহুলের মতো ছিল না। তাঁরা আদতে মনোযোগী ছিলেন যেকোনো প্রকারে দলে টিকে থাকার দিকে। অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারের কাছ থেকে রাহুল তাঁর উদ্যোগগুলোর বিরোধিতা পেয়েছেন। ওই সিনিয়রদের অনেকেই তাঁদের ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’
সৌরভকে দল থেকেও বাদ পড়তে হয়েছিল গ্রেগের অধীনে। সে সময় নাকি দলের বাকি সিনিয়র ক্রিকেটারদের বেশ ভালোই বার্তা দিয়েছিলেন গ্রেগ, কোনো খেলোয়াড়ই দলে অপরিহার্য নয়। যে কেউই দল থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। ওই সময় ভারতীয় দলে কোচ হিসেবে তিনি সেরা সময় মনে করেন। সৌরভ অবশ্য সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগেই আবার দলে ফিরে আসেন, ‘ওই ১২ মাস ছিল আমার জন্য দারুণ। সৌরভকে বাদ দিয়ে দেওয়ার পর দলের বাকি খেলোয়াড়েরাও কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, সৌরভ যখন দল থেকে বাদ পড়ে গেছেন, তখন বাকিরাও বাদ পড়ে যেতে পারেন। ওই সময় খেলোয়াড়েরা দলের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন। আরও ভালো করার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন।’