অথচ দুর্ঘটনায় থমকে গিয়েছিল চিটাগং ব্যাটসম্যানের জীবনটাই
>আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে এবারের বিপিএলে প্রথম ফিফটি এসেছে ইয়াসিরের ব্যাট থেকে। অথচ সাত-আট মাস আগে তাঁর জীবনটাই তো থেমে যেতে বসেছিল
ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি পরিচিত মুখ। জাতীয় লিগ, বিসিএল এমনকি বিসিবির বিভিন্ন দলে নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। এই তো কদিন আগে খেলে এসেছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপ। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৫০ গড় বলে দিচ্ছে তিনি এখানে ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি।
তবে ইয়াসির আলীকে একটু অন্যভাবে চেনা হচ্ছে এবারের বিপিএলে। তিন মৌসুম পর বিপিএলে ফিরেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। খেলছেন চিটাগং ভাইকিংসে। বিপিএলে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে খেলার পর তাঁর জায়গাটা নিয়ে নিয়েছেন ইয়াসির। অভিজ্ঞতার বদলে তারুণ্যেও যে ভরসা রাখা যায় সেটি তিনি নিজের প্রথম ম্যাচেই ৪১ করে বুঝিয়েছিলেন। কাল খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ফিফটি করে দলকে এনে দিয়েছেন বড় স্কোরের ভিত্তি। তাঁর সঙ্গে মুশফিকুর রহিমও আলো ছড়ানোয় প্রথমবারের মতো দুই শ পার করা ইনিংস দেখল এবারের বিপিএল।
ইয়াসির ভালো খেলছেন, ধীরে ধীরে আলোচনায় আসছেন। নিজেও অবাক হন এই ভেবে, ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা থেকে কীভাবে তিনি উদ্ধার হয়েছেন! সাত-আট মাস আগে তাঁর জীবনটাই তো থেমে যেতে বসেছিল। ভীষণ অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন আর ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন কি না। গত জুনে মিরপুরে সিএনজি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন ইয়াসির। মারাত্মক আহত হয়েছিলেন, আঘাত পেয়েছিলেন বাঁ পায়ে।
দুর্ঘটনাটা কতটা ধাক্কা ছিল, সেটিই কাল রাতে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন ইয়াসির, ‘দুর্ঘটনাটা আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায় বলতে পারেন। চার মাস (মাঠের বাইরে ছিলেন) অনেক বড় একটা গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি ভেঙে পড়ি, ভাবি কী হবে আসলে। “এ” দলের দুটো সফর ছিল। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশে এসেছিল, আয়ারল্যান্ড সফর ছিল। আমি হাতছাড়া করি। যেহেতু ভালো খেলছিলাম, আশা ছিল যাব (আয়ারল্যান্ডে)। আমাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন আমার বাবা-মা। তাঁরা বলেছেন “কিচ্ছু হয়নি, চার মাসই তো গেছে। সামনে আরও অনেক খেলা আছে।” আমি আবার ফিরে এসেছি।’
ফেরাটা তাঁর ভালোই হচ্ছে। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ভালো খেলেন। এবার দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টিও তিনি ভালো খেলতে জানেন। আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে এবারের বিপিএলে প্রথম ফিফটি এসেছে ইয়াসিরের ব্যাট থেকে। চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা এ তরুণ ব্যাটসম্যান কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন সতীর্থদের, ‘প্রথম এক ম্যাচ বা দুইটা ম্যাচে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগলেও আমাকে মুশফিক ভাই অনেক সহায়তা করছে, মোসাদ্দেকও। পুরো দল সহায়তা করছে। এবং মানিতে নিতে পারছিও।’
ইয়াসির মানিয়ে যে নিতে পেরেছেন সেটি তাঁর ব্যাটিং বলে দিচ্ছে। এখন তাঁর কাজ হচ্ছে এটা ধরে রাখা।