পুরস্কারের ট্রফিটা মাত্র হাতে পেয়েছেন। মুখে একচিলতে হাসি আর হাতে ট্রফি নিয়ে নিজ আসনে ফিরে এসেই মুঠোফোন বের করলেন নাজমুল হোসেন। ছবি তুলে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্টোরিতে আপলোড করলেন। বুঝতেই পারছেন, ২০২৩ সালের সিটি গ্রুপ–প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা রানারআপ হয়ে নাজমুল বেশ আনন্দিত। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পরও সেই রেশ পাওয়া গেল নাজমুলের কথায়।
প্রথমবারের মতো প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার জেতার অনুভূতি জানাতে গিয়ে নাজমুল বলছিলেন, ‘খুবই ভালো লেগেছে। আমার জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। পুরো অনুষ্ঠানটা গোছানো ছিল। খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। অনেক দিন পর অন্য খেলার খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সব সময় তো ক্রিকেটারদের মধ্যেই থাকি, তাদের সঙ্গে দেখা হয়। অন্য অ্যাথলেটদের সঙ্গে দেখা হয় না। সব মিলিয়ে খুবই ভালো লেগেছে।’
প্রথমবারের পুরস্কারটা যেহেতু রানারআপের, সামনে নিশ্চয়ই বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হতে চাইবেন? প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ ভাবলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক। তারপর হাসতে হাসতে বললেন, ‘পরেরবারেরটা পরের জন্য থাক। মনের ভেতরে থাক।’ এর আগে পুরস্কার নেওয়ার পর মঞ্চে নাজমুল তাঁর প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই পুরস্কারটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। প্রতিবছরই যখন এই পুরস্কারটা দেওয়া হয়, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি, কে কে পেয়েছেন। আমি এর আগে কখনো পাইনি। এই বছর পেয়েছি। খুবই আনন্দিত।’
অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন নাজমুল, ‘গত কয়েকটা সিরিজ ধরে ওয়ানডে সংস্করণ ছাড়া অন্য সংস্করণগুলো ভালো যায়নি। কিন্তু দল হিসেবে আমরা ভালো করছি, সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমরা দল হিসেবে কখনো কোনো বড় ট্রফি জিতিনি। অধিনায়ক হিসেবে দেশের জন্য বড় ট্রফি আনতে চাইব।’
২০২৩ সালজুড়ে নাজমুল ছিলেন তিন সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান। গত বছর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন নাজমুল। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৪২ ম্যাচে ৫ শতকে করেছেন ১৬৫০ রান। এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতক করেছেন, মিরপুর টেস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছেন জোড়া শতক।
সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। শুধু টি-টোয়েন্টিতেই তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন না। তবে সেখানেও তাঁর (২১৮) ওপরে ছিলেন শুধু লিটন দাস (৩২৩)।
শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের জন্য নয়, নাজমুলের জন্য ২০২৩ সালটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর অধিনায়কত্বের জন্য। তাঁর নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে ঘরের মাঠে টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জয়ও এসেছে নাজমুলের নেতৃত্বে। নাজমুলের অনেক ‘প্রথম’–এর বছরে যোগ হলো আরও একটি প্রথম।