সাকিবকে ওয়ানডে দলে রাখতে ‘না’ করেছে বিসিবি
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে শেষ টেস্টটা দেশের মাটিতে খেলতে চেয়েও সরকার নিরাপত্তা দিতে না পারায় সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি সাকিব আল হাসানের। তাঁর শেষ টেস্ট হয়ে থাকছে তাই গত সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে খেলা কানপুর টেস্টই।
তবে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে এখনো অবসর নেননি সাকিব। তাঁর ইচ্ছা, এ সংস্করণের ক্রিকেটটা চালিয়ে যাবেন আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। কিন্তু সেই সুযোগ কি পাবেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার?
সম্ভাবনা ক্রমেই কমে আসছে। কারণ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বাংলাদেশ যে একটিমাত্র ওয়ানডে সিরিজ খেলবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই তিন ওয়ানডের সিরিজেই তাঁকে ছাড়া দল ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচকেরা এরই মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল বোর্ডে জমা দিয়েছেন। সাকিবকে দলে না রাখতে বোর্ডের নির্দেশনা থাকায় তাতে নেই সাকিবের নাম।
কেন নেই, তা নিয়ে নানা রকম আলোচনাই আছে। সংবাদমাধ্যমের খবর, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে খেলার ব্যাপারে সাকিব কিছু শর্ত দিয়েছিলেন বিসিবিকে। বিসিবি তাতে সাড়া দেয়নি, তাই সাকিবেরও খেলার সম্ভাবনা নেই ৮ ডিসেম্বর শুরু ওয়ানডে সিরিজে। বর্তমানে বাংলা টাইগার্সের হয়ে আবুধাবি টি-টেন লিগে খেলছেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের পর হত্যা মামলায় আসামি করা হয় সাকিবকে। শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি তাঁকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে সাকিব ও তাঁর স্ত্রীর। এ অবস্থায় সাকিব নাকি বিসিবির মাধ্যমে সরকারের কাছে দেশের মাটিতে খেলার স্বাধীনতা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং দেশে ফেরা ও বিদেশে যাওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
তবে বিসিবির দায়িত্বশীল একটি সূত্র আজ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সাকিব এ রকম কোনো শর্ত দিয়েছেন বলে তাঁদের জানা নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বোর্ড কর্মকর্তা সাকিবের ওয়ানডে দলে না থাকার কারণ হিসেবে বরং অন্য কথাই বলেছেন।
মুঠোফোনে প্রথম আলোকে ওই বোর্ড কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, নানা কারণে এ মুহূর্তে সাকিবের যে মানসিক স্থিতি, সেটি ঠিক খেলার মতো অবস্থায় নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টেন লিগ খেলা আর জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা এক জিনিস নয়। সে কারণেই আমরা মনে করেছি, সাকিবের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে না খেলাটাই ভালো। নির্বাচক কমিটিকে বোর্ডের এই মনোভাবের কথা জানানো হয়েছে।’
ক্রিকেটীয় বিবেচনায় সাকিবকে বাদ দেওয়ার কোনো কারণ না দেখলেও বোর্ডের এমন মনোভাবের কারণেই গাজী আশরাফ হোসেনের নির্বাচক কমিটি শেষ পর্যন্ত দলে রাখেনি সাকিবকে। এমনিতে দল নির্বাচনে নির্বাচক কমিটির সিদ্ধান্তে বাইরের প্রভাব থাকার কথা নয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, সাকিবের বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’, তাঁকে দলে না রাখার সিদ্ধান্ত তাই ‘নীতিনির্ধারণী’ বিষয়ের পর্যায়ে পড়ে। সে কারণেই নির্বাচক কমিটিকে বোর্ড থেকে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন সাকিবকে বাদ দিয়ে ওয়ানডে সিরিজের দল নির্বাচন করে। নির্বাচকেরাও সেভাবেই তা করেছেন। এখন শুধু দলটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হওয়া বাকি।
এর আগে ৬, ৯ ও ১১ নভেম্বর শারজায় অনুষ্ঠিত তিন ওয়ানডের সিরিজেও খেলেননি সাকিব। সেটা অবশ্য ছিল তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত। আফগানিস্তান সিরিজের দল ঘোষণার আগে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সাকিব যখন চেষ্টা করেও দেশে শেষ টেস্ট খেলতে পারল না, এর পর থেকে মনে হয় সে অনুশীলনেও খুব একটা নেই। নিজেকে প্রস্তুত করতে কিছু সময় দরকার তার। পরের সিরিজে (আফগানিস্তান) তার খেলার সম্ভাবনা কম। এটা তার মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দলে সাকিবের না থাকা নিয়েও অনানুষ্ঠানিকভাবে একই কথা বলছে বিসিবি—সাকিব নাকি খেলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। তবে এবারও সাকিব নিজে বিসিবিকে এ রকম কিছু জানিয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি তাঁকে। মন্তব্য করতে রাজি হননি বিসিবির কেউও।