বাঁহাতিতে ঠাসাঠাসি, বাঁহাতিতে হাঁসফাঁস

টপ অর্ডারে চার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের একজন অধিনায়ক নাজমুলএএফপি

মধ্যাহ্নবিরতির তখনো মিনিট পাঁচেক বাকি। ভারতের ৩৭৬ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ২৬ রানে ৩ উইকেট নেই। সাদমান ইসলাম, জাকির হাসানের পর মুমিনুল হক—তিনজনই বাঁহাতি, তিনজনই রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা বলে বোল্ড। ক্রিজে তখন আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ দলের শীর্ষ সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে মাত্র দুই ডানহাতি, যাঁদের একজন মুশফিক।

নাজমুল-মুশফিকের ব্যাটিংয়ের সময় এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক ডানহাতি মাহমুদুল হাসান। সঙ্গে পেসার খালেদ আহমেদ। ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প ও বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসও ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। ছোট্ট দলটা যাচ্ছিল চিপক স্টেডিয়ামের নেটে, অনুশীলনে।

আরও পড়ুন

যাওয়ার পথেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দলের একজন, ‘দেখেছেন তিনটা আউট? একদম একই রকম, অ্যাঙ্গেলে আসা বলে তিনজন আউট।’ তিন বাঁহাতির এমন আউটের রেশ তখনো কাটেনি। এর মধ্যে প্রায় একই রকম বলে আউট আরেক বাঁহাতি নাজমুল। পার্থক্য একটাই, নাজমুল বোল্ড না হয়ে হয়েছেন কট বিহাইন্ড। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়মিত কাভার করা সাংবাদিকদের জন্য দৃশ্যগুলো খুবই চেনা। কন্ডিশন যেমনই হোক, বাঁহাতিতে ঠাসা বাংলাদেশ টপ অর্ডার নতুন বলে রাউন্ড দ্য উইকেট অ্যাঙ্গেলের বল খেলতে গেলে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। আর প্রতিপক্ষ দলে যদি বুমরা ও সিরাজের মতো বোলার থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই!

বাঁহাতির ভিড়টা একটু হালকা করতে একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান খুব দরকার। কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারের দুই ডানহাতি মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের কেউই লাল বলে টপ অর্ডারে খেলতে রাজি নন।

বাঁহাতির ভিড়টা একটু হালকা করতে একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান খুব দরকার। কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারের দুই ডানহাতি মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের কেউই লাল বলে টপ অর্ডারে খেলতে রাজি নন। বল কিছুটা নরম হলে, প্রতিপক্ষ দলের মূল বোলারের প্রথম স্পেল শেষে হলে, চ্যালেঞ্জ কমে এলেই বরং নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলেন দুজন। বাকি থাকেন মাহমুদুল। সাদমানের সঙ্গে মাহমুদুলের জুটির সৌজন্যে মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। আরেক বাঁহাতি জাকেরের সঙ্গে মাহমুদুলের জুটিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ওপেনার সাদমান ইসলামও বাঁহাতি
বিসিসিআই

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের আগে ‘এ’ দলের খেলায় কুঁচকির চোটে না পড়লে জাকিরের সঙ্গে মাহমুদুলকেই উদ্বোধনে দেখা যেত। এখন ফিটনেস ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে টপ অর্ডারের একমাত্র ডানহাতি মাহমুদুল প্রতিদিন মধ্যাহ্নবিরতিতে চেন্নাইয়ের নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। ওদিকে বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস অবস্থা।

দিন শেষে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে যিনি এসেছিলেন, তিনি মূলত ডানহাতি পেসার হলেও ব্যাটিং করেন বাঁ হাতে—তাসকিন আহমেদ। আর ব্যাটিং–ব্যর্থতার দিনে তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হতো। তাসকিন অবশ্য খুব নতুন কিছু বললেন না, ‘সবারই শক্তির জায়গা, দুর্বলতার জায়গা থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উন্নতির শেষ নেই। যার যেখানে দুর্বলতা, সেটা জয় না করলে বোলার বা ব্যাটসম্যান যে কারও জন্যই টিকে থাকা কঠিন। কারও ভেতরের বলে সমস্যা, কারও বাইরের। দুর্বলতা সবারই আছে। সবাই উন্নতির চেষ্টা করছে।’

আরও পড়ুন

অথচ টেস্ট ক্রিকেটে পদচারণের শুরুর সময়টাতে বাংলাদেশ দলে এই বাঁহাতি সমস্যা ছিল না। কারণ, দলে তখন কোনো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানই ছিলেন না! ২০০৪ সালে জাতীয় লিগের এক মৌসুমে ৬৫০–এর মতো রান করে টেস্ট দলে জায়গা করে নেওয়া ফয়সাল হোসেন সেই অভাব মেটান। তিনিই ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম বাঁহাতি বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ক্রিকইনফোর প্রোফাইলে ফয়সালের বায়োতে গেলেই লেখা দেখবেন ‘রেয়ার বাংলাদেশি লেফট-হ্যান্ড ব্যাটসম্যান।’

২০ বছর পর এখন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ দেখলে অবশ্য সেই ‘রেয়ার’ শব্দটাকে বিস্ময়কর লাগতে পারে।