ঢাকার টানা তৃতীয় হার, খুলনার দ্বিতীয় জয়

ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা বিনিময়শামসুল হক

৪–১–৬–৩। খুলনা টাইগার্সের ব্যাটসম্যানরা যে রান এনে দিয়েছিলেন, সেটি টপকানো এমনিতেই কঠিন ছিল ঢাকা ক্যাপিটালসের জন্য। তার ওপর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ওই বোলিং!

কিন্তু ম্যাচটা ঢাকার যতটা বাজেভাবে হারার শঙ্কা ছিল, ততটা বাজেভাবে তারা হারেনি। কারণ, ‘থিসারা পেরেরা শো’। অধিনায়ক থিসারা পেরেরার ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে শেষ দিকে লক্ষ্যের অনেকটাই কাছে চলে গিয়েছিল ঢাকা। খুলনার ৮ উইকেটে ১৭৩ রানের জবাবে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান। হার মাত্র ২০ রানে। তিন ম্যাচে ঢাকার এটি টানা তৃতীয় হার, খুলনার দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় জয়।

মিরাজের বোলিংয়ের সামনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ৪১ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল বড় হারের দিকেই এগোচ্ছে ঢাকা। কিন্তু এরপর স্বদেশি সতীর্থ চতুরাঙ্গা ডি সিলভাকে নিয়ে যেন নতুন করে লড়াই শুরু করেন অধিনায়ক থিসারা। আর একটিও উইকেট পড়তে না দিয়ে দুজনে ম্যাচ নিয়ে যান শেষ ওভার পর্যন্ত।

৬০ বলে অপরাজিত ১০৩ রান করেও ঢাকাকে জেতাতে পারেননি অধিনায়ক থিসারা পেরেরা
প্রথম আলো

১০.৩ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে সপ্তম উইকেটে ১১২ রানের জুটিতে চতুরাঙ্গা মূলত সঙ্গই দিয়ে গেছেন থিসারাকে। যা করার, থিসারা একাই করেছেন। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে জিয়াউর রহমানকে বাউন্ডারি মেরে ৩৯ বলে ফিফটি করা থিসারা অপরাজিত ছিলেন ৬০ বলে ১০৩ রানে, চতুরাঙ্গার রান সেখানে ২০ বলে ১১!

৭ ছক্কা আর ৯ বাউন্ডারির ইনিংসে পরের ৫৩ রান করতে তিনি বল খেলেন মাত্র ২১টি। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন উইলিয়াম বোসিস্টের করা ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ বলে চার মেরে। এর আগে ১৬ রান আসা ওই ওভারেই মেরেছেন আরেকটি চার ও একটি বিশাল ছক্কা।

ঢাকা–খুলনার ম্যাচ চলাকালে বিসিবির প্রেসিডেন্ট বক্সে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
বিসিবি

ঢাকা হারলেও থিসারার ব্যাটিং সম্ভাব্য একপেশে ম্যাচটাকেই করে তোলে উপভোগ্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাঁর মারকাটারি ব্যাটিং যথেষ্টই বিনোদন দিয়েছে মিরপুরের দর্শকদের। থিসারার ব্যাটিং বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে উপভোগ করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও।

এর আগে খুলনার ইনিংসে প্রথম পাঁচ ওভারে ২ উইকেটে এসেছিল ৫০ রান, পাওয়ার প্লে শেষে ৫৫/২। এরপর আবার ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে এলো ৬৭ রান। মাঝে রানের প্রবাহ খুব ভালো না থাকলেও শুরু আর শেষের ব্যাটিংই লড়াইয়ের রান এনে দেয় তাদের।

দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম আর উইলিয়াম বোসিস্ট মিলেই খুলনার শুরুটা ও রকম ভালো করে দিয়েছিলেন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে নাঈম ফিরে যাওয়ার আগেই ৪৯ রান। তবে ১৭ বলে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে নাঈম আউট হওয়ার পর উইকেট যেমন পড়তে থাকে, রানের প্রবাহও হারাতে থাকে। ১০ ওভার পর্যন্ত আরও ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২১ রানই যোগ করতে পারে খুলনা। পরের পাঁচ ওভারে অর্থাৎ ১৫ ওভারের মধ্যে পড়েছে আরও ২ উইকেট, রান যোগ হয় ৩১।

ঢাকার আরও একটি উইকেটের পতন, খুলনার খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস
প্রথম আলো

সেখান থেকে ২০ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ১৭৩/৮, ঢাকার জয়ের লক্ষ্য ১৭৪ রান। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত ৭, ৮ ও ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মাহিদুল ইসলামের ২২ বলে ৩২, জিয়াউর রহমানের ১৫ বলে ২২ ও আবু হায়দারের ৮ বলে অপরাজিত ২১ রানের সৌজন্যে।

আবু হায়দার তাঁর ২১ রানের ১৯–ই নেন ঢাকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের পেসার শুবম রঞ্জনের করা শেষ ওভারে। তাঁর তিন ছক্কার পর ওভারের শেষ বলে নাসুম আহমেদ মেরেছেন চার। ২৩ রান এসেছে শুধু শেষ ওভারেই।

এর আগে ওপেনার বোসিস্ট ১৩তম ওভার পর্যন্ত খেলে গেলেও রান করেন ২৮ বলে ২৬। কিন্তু দলের ৯৩ রানে তাঁর বিদায়ের পর সপ্তম উইকেটে মাহিদুল–জিয়াউর মিলে দ্রুত রান বাড়িয়ে নেন। তাঁদের ৫.১ ওভার স্থায়ী জুটিতে আসে ৪৩।