ওয়েস্ট ইন্ডিজ না খেলে বার্বাডোজ খেলছে কেন কমনওয়েলথ গেমস ক্রিকেটে?
ওয়েস্ট ইন্ডিজ—এই নামটা পরিচিত করেছে ক্রিকেট। অথচ, বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমস ক্রিকেটে নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ! অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড... আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাঁদের সঙ্গে খেলে থাকে, সেসব প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো আছে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেই—কথাটা ঠিক আবার ভুলও।
ভ্রুকুটির আগে পুরোটা শুনুন। কমনওয়েলথ গেমস ক্রিকেটে চোখ রাখা হচ্ছে? বার্মিংহামে এবারে আসর দিয়ে কমনওয়েলথ গেমসে অভিষেক মেয়েদের ক্রিকেটের। কমনওয়েলথ গেমসে এর আগেও ক্রিকেট দেখা গেছে। সেটি ছেলেদের সংস্করণ, ১৯৯৮ কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত গেমসে। তবে মেয়েদের ক্রিকেটের এবার যেহেতু অভিষেক ঘটেছে, তাই এবার এই ইভেন্টে আলাদা করে চোখ থাকবেই। আর এই চোখ রাখতে গিয়েই অনেকে একটু অবাক হতে পারেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত দলগুলো আছে। ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপদেশগুলো থেকেও একটি দেশ খেলছে, কিন্তু সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওই অঞ্চল থেকে কয়েকটি দেশের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নাম গঠন করে খেলা হয়। কমনওয়েলথ গেমসে এবার মেয়েদের ক্রিকেটও আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। সে হিসেবে, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে কোনো দল খেললে নামটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজই হওয়ার কথা! সেখানে বার্বাডোজ কেন? বিষয়টি খোলাসা করে বলা যাক।
কমনওয়েলথ গেমসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে কাল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই ১৫ রানে জিতেছে বার্বাডোজ। নামে দলটি বার্বাডোজ হলেও খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নিয়মিত খেলোয়াড়েরা। ডিয়েন্ড্রা ডটিন, হেইলি ম্যাথুস, কিসিয়া নাইটরা খেলেছেন।
দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এবার কমনওয়েলথ গেমসে ৮টি দল খেলছে—‘এ’ গ্রুপে বার্বাডোজ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও পাকিস্তান। ‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিক হওয়ায় ইংল্যান্ড সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে। এবার যেহেতু টি-টোয়েন্টি সংস্করণে খেলা হচ্ছে, তাই এই মেয়েদের সংস্করণের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ছয় দল সরাসরি সুযোগ পেয়েছে খেলার। বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড, কেনিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাছাইপর্বে খেলে কমনওয়েলথ গেমস ক্রিকেটে উঠে এসেছে শ্রীলঙ্কা। এই হলো মোট ৮ দল। তবু একটি কিন্তু থেকে যায়। এই মুহূর্তে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোথায়? ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেই কিন্তু ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দল বার্বাডোজ থাকে কীভাবে?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কালই অভিষিক্ত হলো বার্বাডোজ নারী ক্রিকেট দল। এই কমনওয়েলথ গেমসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে কাল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই ১৫ রানে জিতেছে বার্বাডোজ। নামে দলটি বার্বাডোজ হলেও খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নিয়মিত খেলোয়াড়েরা। ডিয়েন্ড্রা ডটিন, হেইলি ম্যাথুস, কিসিয়া নাইটরা খেলেছেন। ম্যাথুস ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক। আসলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ছয়টি দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতাকাতলে খেলে থাকে। মানে এই ছয় দেশের খেলোয়াড়েরা মিলে একটি পতাকার অধীনে খেলে থাকেন, যার নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু কমনওয়েলথ গেমসে নিয়মটা আলাদা। প্রতিটি দেশের আলাদা প্রতিনিধিত্ব লাগবে।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ছয়টি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই)। সেই ছয়টি অ্যাসোসিয়েশনগুলো—বার্বাডোজ, গায়ানা, জ্যামাইকা, লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডস। একটি উদাহরণেই বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়। ক্রিস গেইল জ্যামাইকা থেকে উঠে এসেছেন। ত্রিনিদাদ থেকে উঠে এসেছেন ব্রায়ান লারা। দুজনেই নিজ নিজ দেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁরা খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতাকাতলে।
অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমসের মতো বৈশ্বিক এবং একাধিক ইভেন্টের আসরগুলোয় প্রতিটি দেশকে আলাদা করে প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। এ কারণে এসব আসরে ক্রিকেট থাকলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখা যায় না। ১৯৯৮ কমনওয়েলথ গেমসের কথাই ধরুন। প্রতিটি দেশকে আলাদা করে প্রতিনিধিত্ব করার নিয়ম থাকায় সেবার ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিল তিনটি দেশ—অ্যান্টিগা, বার্বাডোজ ও জ্যামাইকা। ‘লিস্ট এ’ মর্যাদা পেয়েছিল ৫০ ওভারের সে ম্যাচগুলো।
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজই নয়, এমন বৈশ্বিক আসরে আরও কিছু দেশ একই পরিস্থিতিতে পড়েছে। যেমন ধরুন, উত্তর আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের অংশ হিসেবে খেলেন। কিন্তু ১৯৯৮ কমনওয়েলথ গেমসে উত্তর আয়ারল্যান্ড অংশ নেয় এবং শুধু ওই অঞ্চলের খেলোয়াড়েরই খেলতে পেরেছেন। তেমনি ইংল্যান্ড দলেও কমনওয়েলথ গেমসে ওয়েলসের কোনো খেলোয়াড় নেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতাকাতলে যতগুলো অ্যাসোসিয়েশন (দেশ), সেখান থেকে একটি কমনওয়েলথ গেমসে সুযোগ পাওয়ার পর বাছাইপর্বের আয়োজন করেছিল ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই)। কিন্তু করোনা মহামারিতে সেটি আর মাঠে গড়ায়নি। তখন বার্বাডোজকে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েদের আঞ্চলিক টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় বার্বাডোজই সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন।