২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এবারের আইপিএলকে বদলে দেবে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’

একসঙ্গে আইপিএলের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরাছবি : বিসিসিআই

এককালে ছিল সুপার সাব, ২০২০–২১ মৌসুমে বিগ ব্যাশে এলো এক্স-ফ্যাক্টর প্লেয়ার, এবার আইপিএলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার। মূল ধারণা একই—দ্বাদশ ক্রিকেটার। আজ থেকে শুরু আইপিএলে চালু হচ্ছে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ ব্যবস্থা। দলগুলো চাইলে ১২তম ক্রিকেটারকে খেলাতে পারবে।

ধরা যাক, কলকাতা নাইট রাইডার্স-দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচ চলছে। কলকাতার একাদশে লিটন দাস নেই, দিল্লিতে নেই মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথমে ব্যাট করে দুই শর বেশি রানের লক্ষ্য দিয়েছে দিল্লি। এই রান তাড়া করতে বাড়তি ব্যাটসম্যান দরকার কলকাতার। এ সময় চাইলে একজন বোলারের জায়গায় লিটনকে খেলাতে পারবে কলকাতা। আবার ব্যাটিংয়ের কাজ যেহেতু শেষ, দিল্লি চাইলে বোলিংয়ের জন্য মোস্তাফিজকে খেলাতে পারবে।

শুধু ইনিংসের বিরতিতেই নয়, ম্যাচের মাঝেও খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে পারবে দলগুলো। ম্যাচের গতিপথ নিজেদের অনুকূলে আনার এই পরিবর্তনই ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার।

ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন শিমরন হেটমায়ার
ছবি : টুইটার

ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার কী?

আরেকটু খোলাসা করে বললে, ব্যাপারটা ফুটবলের খেলোয়াড় বদলির মতোই। দলগুলো চাইলে ম্যাচের ভেতরে খেলোয়াড় বদলাতে পারবে। বদলি করা হয় যেহেতু ম্যাচে প্রভাব রাখার জন্য, সে জন্য এটির নাম ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’।

ম্যাচে অংশ নেওয়া উভয় দল টসের সময় চারজন সাবস্টিটিউট খেলোয়াড়ের তালিকা দেবে। এ চারজনের ভেতর থেকে যেকোনো একজনকে ম্যাচের মধ্যে বদলি হিসেবে নামানো যাবে। ব্যাটসম্যানের বদলে ব্যাটসম্যান বা বোলারের বদলে বোলার জাতীয় নিয়ম নেই এখানে। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার মাঠে নামলে আম্পায়ার দুই হাত মাথার ওপরে তুলে ক্রস চিহ্ন দিয়ে সংকেত দেবেন।

আরও পড়ুন

ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার কখন নামতে পারবে?

ব্যাটিং দল ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নামাতে পারবে তিন সময়ে—ইনিংসের শুরুতে, ইনিংসের বিরতিতে এবং উইকেট পতনের পর। বোলিং দল ইমপ্যাক্ট নামাতে পারবে উইকেট পতনের পর, ওভারের শেষে এবং ইনিংসের শুরু ও বিরতিতে। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করতে পারবেন। তবে একটি দল এগারোজনের বেশি খেলোয়াড়েকে ব্যাটিং করাতে পারবে না। যে খেলোয়াড়ের বদলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নামানো হবে, তিনি ফিল্ডিংয়ের জন্যও আর মাঠে নামতে পারবেন না।

কখন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার কার্যকর হবে না?

ম্যাচের দৈর্ঘ্য ১০ ওভারের নিচে নেমে এলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার খেলানো যাবে না। প্রথম একাদশে চারজন বিদেশি রাখা হলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে বিদেশি নামানো যাবে না। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারসহ মোট ১২ জন খেলানোর সুযোগ থাকলেও ম্যাচে বিদেশি খেলোয়াড় চারজনেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

১২ জনের খেলা
বিসিসিআই আইপিএলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছে গত বছর। এর পর থেকেই এ নিয়ে নানা আলোচনা। দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিংয়ের মতে, এর মাধ্যমে অলরাউন্ডারদের প্রভাব কমবে। বাড়বে স্পেশালিস্ট খেলোয়াড়দের কদর, ‘এখন আর একাদশে অলরাউন্ডার নিতে হবে না। ব্যাটিং বা বোলিংনির্ভর একাদশ বানালেই চলবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে একজনের জায়গায় আরেকজনকে নামাতে হবে।’ মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অধিনায়ক রোহিত শর্মা এটিকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন। যদিও ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে বলে মন্তব্য তাঁর, ‘সময়ই বলে দেবে দলগুলো নতুন নিয়মের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেয়। তবে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের ধারণাটা আমার পছন্দ হয়েছে। সঙ্গে টসের পর একাদশ বদলের নিয়মও।’ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারকে অভিহিত করেছেন বৃহত্তর অর্থে, ‘খেলাটা এখন ১২ জন বনাম ১২ জনের হয়ে যাবে। কারণ বেশির ভাগ দলই ব্যাটিং বা বোলিং স্লটে স্পেশালিস্ট খেলাতে চাইবে।’

শিরোপা ধরে রাখার অভিযান গুজরাট টাইটানসের
ছবি : বিসিসিআই

ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার কি সুপার সাব?
২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরীক্ষামূলকভাবে সুপার সাব নিয়ম চালু করেছিল আইসিসি। সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট কমিটির সুপারিশ ছিল, অলরাউন্ডারের ব্যবহার বাড়াতে দ্বাদশ ক্রিকেটার চালু করা উচিত। সুপার সাবে টসের আগেই একজন খেলোয়াড়ের নাম দিতে হতো। এ ক্ষেত্রে একজন অলরাউন্ডারকে সুপার সাব করা হলে ম্যাচে কাজে লাগানো যেত।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে একসময় সুপার সাব নামানো যেত
ছবি : ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

কিন্তু বেশির ভাগ দলই সুপার সাব হিসেবে রাখত স্পেশালিস্ট ক্রিকেটার, যা আবার টসের ওপর নির্ভর করে কাজে লাগত না। একপর্যায়ে সুপার সাব প্রথা বাতিল করে তখনকার জেনারেল ম্যানেজার (ক্রিকেট) ডেভ রিচার্ডসন বলেছিলেন, ‘বাস্তবে দলগুলো বদলি হিসেবে স্পেশালিস্ট খেলোয়াড়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। ১১ জনের কাজ ১২ জনকে দিয়ে চালানোর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন

সুপার সাবে স্পেশালিস্টের বদলে অলরাউন্ডারের ব্যবহার বাড়াতে চেয়েছিল আইসিসি। এবার ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের মাধ্যমে অলরাউন্ডারের বদলে স্পেশালিস্টের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে বিসিসিআই।

আইসিসির সুপার সাব টেকেনি, বিসিসিআইর ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের ভাগ্যে কী আছে?