৪১ বছর বয়সেও কেন ক্রিকেট খেলছেন অলক কাপালি

অলক কাপালিপ্রথম আলো

চৈত্রের খরতাপেও একাডেমি মাঠে ব্যস্ততা। কোনো টুর্নামেন্ট এলে এখানকার দৃশ্যটা পরিচিতই—গাদাগাদি করে কয়েক দলের অনুশীলন। এর মধ্যেই একজনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল তরুণ কিছু ক্রিকেটারকে। নাম শুনলে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিতে ভেসে আসতে পারে অনেক গল্পই।

অলক কাপালির বয়স এখন ৪১ হয়ে গেছে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বয়সের দিক দিয়ে তাঁর চেয়ে বড় আর কোনো ক্রিকেটার নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারের দিক দিয়েও কেউ আছেন কি না, সেটি জানতেই অলকের কাছে প্রশ্ন ছিল—ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম কবে খেলেছিলেন?

আরও পড়ুন

ঢাকার ক্রিকেটে অলকের শুরু ১৯৯৯ সালে অমরজ্যোতি ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে। পরের বছর ট্রায়াল দিয়ে সুযোগ পান ভিক্টোরিয়াতে। দুই ম্যাচেই থেমেছিল সেবারের যাত্রা। প্রথম পেশাদার চুক্তির জন্য অলককে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও দুই বছর। ভিক্টোরিয়াতে ২০০২ সালে খেলে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়নও হয়ে যান তাঁরা।

৪১ বছর বয়সে এবার প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন অলক কাপালি
শামসুল হক

২০০২ সালে জাতীয় দলে এসে এক দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে ১৭ টেস্ট এবং ৬৯ ওয়ানডের সঙ্গে খেলেছেন ৭ টি–টোয়েন্টি ম্যাচও। ওই অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে অবশ্য আরও ১৪ বছর আগে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর আর জাতীয় দলে দেখা যায়নি অলককে। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকেও বিদায় বলে দিয়েছেন ২০২২ সালে।

আরও পড়ুন

অলক গত বছর পরিকল্পনা করেছিলেন, ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে তুলে রাখবেন ব্যাট–প্যাড। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে গত প্রিমিয়ার লিগই হওয়ার কথা ছিল তাঁর শেষ প্রিমিয়ার লিগ। এবারের লিগে থাকার কথা ছিল কোচের ভূমিকায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা পাল্টে এবারও তিনি খেলছেন। কারণ, তাঁর যে ক্লাবের কোচ হওয়ার কথা ছিল, সেই ক্লাব হুট করে অন্য কোচ নিয়ে নিয়েছে। মাস দুয়েক আগে সেটা অলককে জানিয়েছে তারা। ক্রিকেটটাই যেহেতু পেশা, কোচের চাকরি না পেয়ে এবারের লিগেও ক্রিকেটারের ভূমিকায়ই থেকে যান অলক। ব্রাদার্সের হয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে করেছেন ১৮*, ৯*, ৩০, ৩৩ ও ৩১।

ব্রাদার্সের হয়ে ৫ ম্যাচে ৬ উইকেটও নিয়েছেন অলক
প্রথম আলো

অলক এখন যে ক্লাবে খেলছেন, সেই ব্রাদার্স ইউনিয়নও তাঁকে কোচ হিসেবে চেয়েছিল। কিন্তু ক্লাবের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটার হিসেবেই আছেন। ৫ ম্যাচে পেয়েছেন ৬টি উইকেটও। তা খেলে যাওয়ার এই তাড়না এখনো কোথায় পান অলক? বলেন, ‘খেলাটা তো পছন্দ করি, প্রায় তিন দশকের যাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই ছাড়তে গেলে খারাপ লাগা কাজ করে।’

আরও পড়ুন

তবে সবকিছুরই শেষ আছে। অলকেরও ক্রিকেটের মায়া কাটিয়ে এখন কোচিংয়ে চোখ। তাতে ভালো করতে পারবেন বলেও বিশ্বাস করেন মন থেকে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলছি অনেক বছর। আমার যে অভিজ্ঞতা আছে, আমি তো মনে করি, ভালো করতে পারব।’

কোচিংয়ে যাত্রাটা এ বছরই করতে না পারায় হতাশা আছে অলকের। এ বছরই ক্রিকেটার হিসেবে শেষ কি না, জানতে চাইলে তাই তাঁর জবাব, ‘আমি তো গত বছরই শেষ করে ফেলেছিলাম। এ বছর একরকম বাধ্য হয়েই ক্লাবের অনুরোধে খেলছি। এখন যখন এভাবে হোঁচট খেয়েছি, তখন আর চিন্তা করি না। বলব যে কোচিং করব, পরে যদি না হয়! খেলাটা আগে শেষ হোক, দেখি কী হয়।’

ক্রিকেটার–জীবনের নানা বাঁকে রোমাঞ্চ উপভোগ করেছেন অলক। ২৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার চালিয়ে গেছেন ‘উপভোগের’ মন্ত্রে। ৪১ বছরেও তাই খেলার মাঠে নামছেন অলক। আগামীতে কোচ অলক কাপালির আবির্ভাব ঘটলে এখানেই হয়তো শেষ ক্রিকেটার অলক কাপালির।

আরও পড়ুন