রাবাদা-ইয়ানসেনে পাকিস্তানকে অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

অবিশ্বাস্যভাবে পাকিস্তানকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো ইয়ানসেন (বাঁয়ে) ও কাগিসো রাবাদার উদ্‌যাপন। মাঝে হতাশ পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ আব্বাসএএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকার চাই ১২১ রান, পাকিস্তানের ৭ উইকেট। রোমাঞ্চকর এক সমাপ্তির আভাস নিয়েই আজ সেঞ্চুরিয়নে শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান প্রথম দিনের চতুর্থ দিনের খেলা।

যারা আজ সুপারস্পোর্ট পার্কে খেলা দেখতে গেছেন, তাঁরা হতাশ হননি। হতাশ হননি যাঁরা টেলিভিশনের সামনে বসে এই খেলা দেখেছেন তাঁরাও। কী রোমাঞ্চকর এক লড়াই-ই না উপহার দিল দুই দল!

রুদ্ধশ্বাস সেই লড়াই শেষে শেষ হাসিটা হাসল দক্ষিণ আফ্রিকা।  ১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা প্রোটিয়ারা ৯৯ রানেই হারিয়ে ফেলে ৮ উইকেট। তিন বছর পর পাকিস্তানের টেস্ট দলে ফেলা পেসার মোহাম্মদ আব্বাস ৬ উইকেট নিয়েই দারুণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন পাকিস্তানকে। কিন্তু মার্কো ইয়ানসেনের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানিদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিলেন কাগিসো রাবাদা।

আরও পড়ুন

আব্বাসের করা ইনিংসের ৪০তম ওভারের তৃতীয় বলটাকে মার্কো ইয়ানসেন পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে সীমানাছাড়া করতেই ‘বিশ্বজয়ের’ উদ্‌যাপনে মাতল দক্ষিণ আফ্রিকানরা। প্রায় হেরে বসা ম্যাচে এমনভাবে জিতেই বিশ্বজয়ের আরেকটু কাছে পৌঁছে গেল দলটি। ২ উইকেটের এই জয়েই যে প্রথম দল হিসেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাউন্ডারি মেরে দলকে জেতানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো ইয়ানসেন
এএফপি

শেষ চারটি মেরে যখন দলকে জেতালেন ইয়ানসেন, তাঁর নামের পাশে অপরাজিত ১৬ রান। ৫০ রানের নবম উইকেট জুটিতে সঙ্গী রাবাদার রান ২৬ বলে ৩১।

আরও পড়ুন

দক্ষিণ আফ্রিকা দিনটা শুরু করেছিল ৩ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে। দলটির ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন এইডেন মার্করাম। আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা ২৭ রানের ২২-ই এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। সেই মার্করাম আজ অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে দিনের প্রথম ঘণ্টাটা নিরাপদেই পাড়ি দেন। ৩ উইকেটে ৬২ রান নিয়ে ড্রিংকস বিরতিতে যায় প্রোটিয়ারা।

টেম্বা বাভুমাকে ফেরানোর পর পাকিস্তানিদের উল্লাস
এএফপি

বিরতির পর খেলা শুরু হতেই বদলে যায় সব। প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ আব্বাসের কিছুটা নিচু হয়ে যাওয়া নিখুঁত লেংথের এক বলে বোল্ড মার্করাম (৬৩ বলে ৩৭ রান)। মার্করাম বিদায় নিলেও অবিচলই ছিলেন বাভুমা। ডেভিড বেডিংহামকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৩৪ রান যোগ করে ফেলেন অধিনায়ক।

এরপর কী যেন হলো বাভুমার। আব্বাসের করা মোটামুটি নিরীহ এক বলকে আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়ে মিড উইকেট দিয়ে সীমানাছাড়া করতে চেয়েছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। কিন্তু বলটি বাভুমার ব্যাটে বাতাস লাগিয়ে চলে যায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে। হালকা শব্দ শুনেই আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার। সেটি মেনে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান বাভুমা। সেখানে ফিরে নিশ্চিত সতীর্থদের ভর্ৎসনা শুনেছেন বাভুমা, টিভি রিপ্লেতে যে আলট্রা এজ প্রযুক্তি বল ব্যাটের সংযোগের প্রমাণ দিতে পারেনি। এই ঘটনার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ২৯.৪ ওভারে ৯৬/৫।

আরও পড়ুন

পরের ওভারের নাসিম শাহ বোল্ড করে দেন কাইল ভেরেইনাকে। ৯৯ রানের প্রতিপক্ষের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে হঠাৎই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করা পাকিস্তানকে পরের ওভারে আরও ২টি উইকেট এনে দেন আব্বাস। ডেভিড বেডিংহামকে কিছুটা শর্ট বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করার পরের বলেই অভিষিক্ত করবিন বশকেও একইভাবে ফেরান আব্বাস।

৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন তিন বছর পর টেস্ট খেলা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আব্বাস
এএফপি

তাতে ৪ বলের মধ্যে ৯৯/৫ থেকে ৯৯/৮ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তিন বছর পর টেস্টে ফিরেই ক্যারিয়ারসেরা বোলিং পেয়ে যান আব্বাস। ২৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৬ উইকেট পেয়ে পেছনে ফেলেন ২০১৮ সালে আবুধাবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গড়া রেকর্ডকে (৫/৩৩)।

ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে বারবার চাপের মুখে ভেঙে পড়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করছে দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনটাই মনে হচ্ছিল তখন। কিন্তু রাবাদা ও ইয়ানসেনের ইতিহাসের উল্টো স্রোতে হাঁটার ইচ্ছেই হলো। আব্বাসের সেই ওভারে চতুর্থ বলে চার মেরেই চাপটাপ সব দূরে সরানোর কাজ শুরু করেন রাবাদা। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে দলের স্কোরটাকে ১১৬ রানে নিয়ে লাঞ্চে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

আরও পড়ুন

এরপর খেয়েদেয়ে মাঠে ফিরে ৬ ওভারের মধ্যেই পাকিস্তানের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে অবিশ্বাস্য সেই জয় রাবাদা-ইয়ানসেনদের।

৩ জানুয়ারি কেপটাউনে শুরু হবে সিরিজের শেষ টেস্ট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান: ২১১ ও ২৩৭। দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০১ ও ৩৯.৩ ওভারে ১৫০/৮ (বাভুমা ৪০, মার্করাম ৩৭, রাবাদা ৩১*, ইয়ানসেন ১৬*, বেডিংহাম ১৪; আব্বাস ৬/৫৪, নাসিম ১/৩৪, খুররম ১/৪৭)। ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এইডেন মার্করাম।
আরও পড়ুন