বাংলাদেশের ধবলধোলাই না হওয়ার স্বস্তির সঙ্গে আরও কিছু
৩–০ আর ২–১ এ সিরিজ হারে পার্থক্যটা শুধু হারের ব্যবধানেই থাকে না। বিশেষ করে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে গিয়ে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও শেষ ম্যাচ জিতলে তাতে ফিরে আসার একটা বার্তাও থাকে।
বলতে পারেন, সিরিজই তো শেষ! ফিরে আর কোথায় আসবে? ফিরে আসে আসলে আত্মবিশ্বাস এবং সেটা কাজে লাগে। এরপর যখন আবার আপনি এই একই প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবেন তখন। আসন্ন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের। তার আগে সিলেটে এই সিরিজেই আছে দুটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ।
সব মিলিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ নিজেদের ফিরে পেয়ে অর্জিত জয়টা একেবারে অমূল্য নয় বাংলাদেশ দলের জন্য। এই জয় এ কারণেও গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশ আফগানদের ধবলধোলাইয়ের উৎসবে মাততে দেয়নি। অবশ্য ধবলধোলাইয়ের মুখে যে বাংলাদেশ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেটা তো আগেই বলা হয়েছে।
ঘুরে দাঁড়ানো এই জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান অবশ্যই পেসার শরীফুল ইসলামের। ইবাদত হোসেনের চোট এবং মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদকে বিশ্রাম দেওয়ার পর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে থাকলেন শুধু শরীফুল আর তাসকিন আহমেদ। বোলিংয়ে বাড়তি স্পিনার হিসেবে যোগ হন বাঁহাতি তাইজুল ইসলামও। নতুন বলে জুটি বেঁধে সফল দুই পেসারই, বেশি সফল ওয়ানডেতে তৃতীয়বারের মতো ৪ উইকেট নেওয়া শরীফুল। তাসকিন নিয়েছেন ২ উইকেট।
৫ ওভারের প্রথম স্পেলেই মাত্র ৮ রান দিয়ে ১ মেডেনসহ শরীফুল তুলে নেন ৩ উইকেট। আগের ম্যাচে ২৫৬ করা আফগান ওপেনিং জুটি ভেঙে দেন ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই, দলের ৩ রানের সময়। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড ইব্রাহিম জাদরান। ওই ওভারেরই পঞ্চম বলটা একটু বাড়তি বাউন্স নিয়েছিল, এবার ব্যাটের কানায় লাগিয়ে কট বিহাইন্ড রহমত শাহও।
এক ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে সেই যে চাপে পড়ল সিরিজজয়ী আফগানরা, সেটা আর কাটাতে পারল না। ষষ্ঠ ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজও তাসকিনের বলে উইকেটের পেছেন ক্যাচ দেওয়ার পর নবম ওভারে আবার শরীফুলের আঘাত। আম্পায়ারের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তে রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি মোহাম্মদ নবীর।
শরীফুলের শেষ উইকেটটা এসেছে তাঁর পরের স্পেলে, ২৭তম ওভারে আবদুল রহমানকে ডিপ স্কয়ার লেগে তাইজুলের ক্যাচ বানিয়ে। আক্রমণাত্মক মানিসকতার সঙ্গে গতি আর বাউন্স মিলিয়ে ৯ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নেওয়া শরীফুল আজ ওয়ানডে ক্রিকেটেই করলেন নিজের সেরা বোলিং।
আগের ম্যাচে ৩৩১ রানের পাহাড় গড়া আফগানিস্তানকে বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। শরীফুলের বোলিং তোপে পড়ে শুরুটা ওই রকম এলোমেলো হয়ে যাওয়াতে আফগানিস্তানের ওপর যে চাপটা তৈরি হলো, অন্য পেসার তাসকিন আর তিন স্পিনার সাকিব আল হাসান, তাইজুল ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেটগুলো আসে তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।
৮৯ রানে ৮ উইকেট হারানো আফগানিস্তান এক শ পার হবে কি না, তা নিয়ে একটা পর্যায়ে বেশ সংশয়ই ছিল। সেটা দূর করেছেন মূলত এর আগে ১১ ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই ব্যাট করার সুযোগ না পাওয়া লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ৭ নম্বরে নেমে ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটি করেছেন (৫৬), মুজিব উর রেহমানের সঙ্গে নবম উইকেটে গড়েছেন ৩৭ রানের জুটি।
খুব নাটকীয় কিছু না হলে ১২৬ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ সহজে পার হয়ে যাবে, সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। হলোও অনেকটা তা–ই। সাকিবের (৩৯) সঙ্গে ৬১ ও তৌহিদ হৃদয়ের (২২*) সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটিতে অধিনায়ক লিটন দাস ফিরেছেন দলকে ম্যাচ জিতিয়ে, সঙ্গে অলঙ্কার হিসেবে নামের পাশে অপরাজিত ৫৩ রান।
বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে আলোচনায় মোহাম্মদ নাঈমের প্রসঙ্গটাও একটু আসা উচিত। ১২৬ তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফজলহক ফারুকির বলে তাঁর বোল্ড হয়ে যাওয়া হতাশা ছড়িয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
তামিম ইকবাল না থাকায় সিরিজের শেষ দুটি ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পান এই বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরে দুই সুযোগের কোনোটিই পারলেন না কাজে লাগাতে। বরং দুই ম্যাচেই ফারুকির বলে প্রায় একই রকম আউট, স্টাম্পে বল টেনে এনে বোল্ড। আগের ম্যাচে করেছিলেন ২১ বলে ৯, যে ইনিংস এবং আউট দেখে সেদিন এক বোর্ড পরিচালক বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, ‘নেট প্র্যাকটিসে নাকি ও ফাটিয়ে ফেলে। মাঠে খেলা দেখে তো সেটা বোঝাই যায় না!’
সেই বিস্ময়কেই আরও গাঢ় করে দিয়ে আজ নাঈম ৮ বল খেলে বিদায় নিয়েছেন কোনো রান না করেই। আউট হয়েছেন বলের লাইনে না গিয়ে শরীর থেকে অনেক দূরে ব্যাট চালিয়ে। অল্প রানের ম্যাচটা জিতিয়ে আসতে পারতেন নাজমুল হোসেন কিংবা সাকিবও। নাজমুল ভালো শুরু করেও সেটা ধরে রাখতে পারেননি। সাকিবও লিটনের সঙ্গে ম্যাচ জিতিয়ে আসার পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন নবীর বলে আকাশে বল তুলে দিয়ে।
ধবলধোলাই না হওয়ায় বাংলাদেশ শিবিরে যে স্বস্তির বাতাবরণ, ম্যাচটা আরেকটু দাপট দেখিয়ে জিতলে সেটি আরও বেশি উপভোগ্য হতে পারত খেলোয়াড়দের কাছেই।