ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তামিমের ৮ হাজার
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত জুলাইয়ে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ৩৪ রানে আউট হন তামিম ইকবাল। ৫২ বলের সে ইনিংসে ভালো শুরু পেলেও নিজের কাজটা করে আসতে পারেননি। ভালো শুরু পেয়েও হতাশ করা—তামিমের এমন ইনিংসের সংখ্যা কম নয়।
দেশসেরা ওপেনার হলেও আক্ষেপটা তাই থাকেই তাঁকে ঘিরে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম আজ যেন সেখান থেকে শুরু করলেন!
দেখেশুনে শুরু বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। হারারের উইকেটে বল শুরুতে একটু ওঠায় প্রথম তিন ওভারে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ স্ট্রোক খেলেননি তামিম। বলের বাউন্স ও গতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর চতুর্থ ওভারে ভিক্টর নিয়াউচির যে বলে প্রথম চারটা মারলেন, সেটি যে কেউ-ই ড্রাইভ খেলতেন।
ক্রিকেট-পরিসংখ্যানের নানা তথ্য-উপাত্ত মনে রাখা তামিমের এ সাবধানি শুরুর পেছনে একটি কারণ খুঁজে নিতে পারেন কেউ কেউ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের জন্য খেলার বিষয়টি তো মুখ্যই, এর পাশাপাশি নিজের একটি পরিসংখ্যানও নিশ্চয়ই তাঁর জানা ছিল!
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগে এই সংস্করণে ২২৮ ম্যাচে তামিমের রানসংখ্যা ছিল ৭৯৪৩। অর্থাৎ, ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের দেখা পেতে আর ৫৭ রান দরকার। লক্ষ্যটা তামিমকে হাতছানি দেওয়াতেই কি জমাট ব্যাটিং করছেন? উত্তরটা শুধু তামিমই জানেন। তাতে অবশ্য বাংলাদেশেরই লাভ হয়েছে। ওপেনিং জুটিতে এক শ পেরিয়ে যাওয়া জুটির দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর তামিমও ইতিহাসের নবম ওপেনার হিসেবে ওয়ানডেতে নাম যোগ দিয়েছেন ৮ হাজার রানের ক্লাবে।
ওয়ানডেতে তামিম এমনিতেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আজ ২৪ওভারে সিকান্দার রাজার বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৮ হাজার রানের মাইলফলকের দেখা পান তামিম। সে সঙ্গে বাংলাদেশও ওয়ানডে দেখা পায় নতুন এক মাইলফলকের।
ওয়ানডেতে তামিমের আগে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানই যে এ ক্লাবের দেখা পাননি। ৮ হাজারি ক্লাব কেন, তামিম ছাড়া ৭ হাজারি ক্লাবের দেখাও যে আর কেউ পাননি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭৫৫ রান করেছেন সাকিব আল হাসান।
তামিম ওয়ানডেতে ওপেনিং পজিশন ছাড়া আর কোথাও ব্যাট করেননি। ওপেনার হিসেবে এ সংস্করণে সর্বোচ্চ রান ভারতের কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের। ৩৪৪ ম্যাচে ৩৪০ ইনিংসে ব্যাট করে ৪৮.২৯ গড়ে ১৫৩১০ রান করেছেন টেন্ডুলকার। ৮৮.০৪ স্ট্রাইকরেটে শতক ৪৫টি ও অর্ধশতক ৭৫টি।
টেন্ডুলকারের পর ওপেনার হিসেবে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকাটি এমন—সনাথ জয়াসুরিয়া, ক্রিস গেইল, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, সৌরভ গাঙ্গুলী, ডেসমন্ড হেইন্স, সাঈদ আনোয়ার, হাশিম আমলা ও তামিম ইকবাল।
এ তো গেল শীর্ষ নয়ের তালিকা। তামিম এই পথে যাঁদের পেছনে ফেললেন, সেই নামগুলো একবার দেখুন—বীরেন্দর শেবাগ, রোহিত শর্মা, তিলকারত্নে দিলশান, গ্রায়েম স্মিথ, গ্যারি কারস্টেন, হার্শেল গিবস, ম্যাথু হেইডেনের মতো তারকারা। বোঝাই যাচ্ছে, ফিটনেস, ফর্ম—এসব মিলিয়ে পথটা পাড়ি দেওয়া মোটেও সহজ ছিল না তামিমের জন্য। হেইডেন, মার্ক ওয়াহর মতো ওপেনারেরাই তো এ পর্যন্ত আসতে পারেননি!
ওয়ানডেতে ওপেনারদের মধ্যে শুধু তিনজনেরই ১০ হাজার রানের মাইলফলক টপকে গেছেন—টেন্ডুলকার, জয়াসুরিয়া (৩৮৮ ম্যাচে ১২৭৪০) ও গেইল (২৮০ ম্যাচে ১০১৭৯)। ৯ হাজার রানের ক্লাবে আছেন দুজন—অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (২৬০ ম্যাচে ৯২০০) ও সৌরভ গাঙ্গুলী (২৪২ ম্যাচে ৯১৪৬)।
৮ হাজারি ক্লাবে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ডেসমন্ড হেইন্স (২৩৮ ম্যাচে ৮৬৪৮), সাইদ আনোয়ার (২২০ ম্যাচে ৮১৫৬) ও হাশিম আমলার (১৭৬ ম্যাচে ৮০৮৩) সঙ্গে যোগ দিলেন তামিম। ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের সামনে সম্ভবত আরও কয়েক বছর ক্রিকেট বাকি আছে। তাতে অন্তত ৯ হাজারি ক্লাবে তাঁকে দেখা যেতেই পারে।
ওপেনার হিসেবে ওয়ানডেতে রান তোলায় শীর্ষ নয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চারজনের স্ট্রাইকরেট ৮০-এর নিচে। সৌরভ গাঙ্গুলী (৭৩.৫৯), ডেসমন্ড হেইন্স (৬৩.০৯), সাঈদ আনোয়ার (৭৯.৯৩) ও তামিম (৭৮.৫৩)। ৯৮.০২ স্ট্রাইকরেট নিয়ে এ তালিকায় সবার ওপরে গিলক্রিস্ট। তবে শীর্ষ দশ বিচারে শেবাগ (১০৪.৭২) গিলির চেয়ে এগিয়ে।
রান তোলায় শীর্ষ দশ ওপেনারের মধ্যে শতকের হিসেবে তামিমের জন্য আক্ষেপ হতেই পারে। ২২৭ ইনিংসে (এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) ব্যাট করে তামিমের শতকসংখ্যা যেখানে ১৪, সেখানে ১৭৫ ইনিংসে ব্যাট করে হাশিম আমলার শতকসংখ্যা ২৭টি, ২২০ ইনিংসে ব্যাট করা সাঈদ আনোয়ারের শতকসংখ্যা ২০টি। জয়াসুরিয়া, গেইল, টেন্ডুলকারদের হিসেবে না যাওয়াই নিরাপদ।
তামিমের নামের পাশে ৫৪টি অর্ধশতকই বলে দেয়, কতবার শতক তুলে নেওয়ার মতো ভালো শুরু করেও হতাশ করেছেন নিজেকেই। আজও যেমন ৮৮ বলে ৬২ করে আউট হলেন।
তবে রান তোলার শীর্ষ দশ ওপেনারের মধ্যে ব্যাটিং গড়ে বেশ কয়েকজনের চেয়ে এগিয়ে তামিম (৩৭.১৯)। শেবাগ (৩৬.৪৯), জয়াসুরিয়া (৩৪.৬১) ও গিলক্রিস্ট (৩৬.৫০) ব্যাটিং গড়ে তামিমের চেয়ে পিছিয়ে।