ভারত প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানে অলআউট হওয়ার পরই মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়েছিল দুই দল। ২২৩ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার সামনে কঠিন লড়াই ছিল। নাগপুরে আজ তৃতীয় দিনে স্পিনবান্ধব উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার জালে ফেঁসে যাওয়ার ঝুঁকিটাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ঘটেছেও ঠিক তাই। আজ এক সেশনেই ১০ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ফেঁসেছে জাদেজাতে আর দ্বিতীয় ইনিংসে ফাঁসল অশ্বিনের জালে। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানে অলআউট হয়ে নাগপুর টেস্টে ইনিংস ও ১৩২ রানের ব্যবধানে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। টেস্টে ভারতের মাটিতে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার ইনিংস।
চার টেস্টের বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার ভারত।
অস্ট্রেলিয়াকে আজ দিনের বাকি দুই সেশনের পুরোটা ব্যাট করতে দেয়নি ভারতের স্পিন ‘ত্রয়ী’ অশ্বিন-জাদেজা-অক্ষর। এই তিন স্পিনার নিজেদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ১০ উইকেটের ৮টি ভাগ করে নেন। ৩৭ রানে ৫ উইকেট নেন অশ্বিন। ৩৪ রানে ২ উইকেট জাদেজা। ২টি উইকেট পেসার মোহাম্মদ শামির ও ১টি উইকেট বাঁহাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেলের।
তবে পরিসংখ্যান দিয়ে লাবুশেন-ওয়ার্নারদের ওপর অশ্বিনদের আধিপত্য বোঝানো যাবে না। নাগপুরে প্রথম দিন থেকেই বাঁক নিয়েছে বল। আজ তৃতীয় দিনে উইকেট থেকে বাউন্সের সঙ্গে বাঁকও পেয়েছেন অশ্বিন। বল মাঝেমধ্যে নিচুও হয়েছে। আর ছিল স্পিন খেলার কৌশলগত ভুল।
জাদেজার বলে মারনাস লাবুশেনের এলবিডব্লু আউটটাই যেমন—অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় ওভারেই অশ্বিনের বেশি বাঁক নেওয়া বল অযথাই ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন উসমান খাজা (৫)। তিনে নামা লাবুশেনের তখনই সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ১১তম ওভারে জাদেজার করা বলটির লেংথই বুঝতে পারেননি। পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে বলের বাঁক বুঝতে ভুল করে আউট হন। আজ সারা দিন ভারতের স্পিনারদের কাছে ঠিক এভাবেই উইকেট দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।
স্বীকৃত সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে পাঁচজনই এলবিডব্লু। ডেভিড ওয়ার্নার, ম্যাট রেন শ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও অ্যালেক্স ক্যারিদের মধ্যে কেউই ভারতীয় স্পিনারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। পাঁচে নামা স্টিভেন স্মিথ যা একটু বুক চিতিয়ে লড়েছেন। ২৫ রানে অপরাজিত থাকা স্মিথ ক্রিজের এক প্রান্ত থেকে শুধু সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলই দেখেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু তিনজন রানের দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছেন। লাবুশেন, ওয়ার্নার (১০) ও স্মিথ (২৫)। ফিফটি দূরে থাক, ৩০ রানও কেউ করতে পারেননি। নাগপুর টেস্ট শুরুর আগে ভারতের স্পিনবান্ধব উইকেট নিয়ে নানা রকম কথা বলেছে অস্ট্রেলিয়া শিবির। নাকাল হতে হলো সেই স্পিন ‘জুজু’তেই। কিন্তু ভারতও একই উইকেটে ব্যাট করে চার শ রান তোলায় অস্ট্রেলিয়া টপ অর্ডারের স্পিন খেলার সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু তিনজন রানের দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছেন। লাবুশেন, ওয়ার্নার (১০) ও স্মিথ ()। ফিফটি দূরে থাক ৩০ রানও কেউ করতে পারেননি। নাগপুর টেস্ট শুরুর আগে ভারতের স্পিনবান্ধব উইকেট নিয়ে নানারকম কথা বলেছে অস্ট্রেলিয়া শিবির। নাকাল হতে হলো সেই স্পিন ‘জুজু’তেই। কিন্তু ভারতও একই উইকেটে ব্যাট করে চার শ রান তোলায় অস্ট্রেলিয়া টপ অর্ডারের স্পিন খেলার সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
হ্যান্ডসকম্ব ক্রিজে থাকতে অশ্বিন বল করার সময় ক্রিকইনফোর ‘লাইভ ম্যাচ’ বিবরণীতে বলা হয়েছে, ভারতের এই স্পিনার পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকে কাঁচকলা দেখিয়ে বল করছেন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে যেকোনো ডানহাতি অফ স্পিনারের এলবিডব্লু করা খুব কঠিন। উইকেটে সব সময় বল রাখতে হয়। অশ্বিন এই কাজটাই দারুণভাবে করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ৩১তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন। এর মধ্যে ভারতের মাঠে ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন ২৫ বার। ভারতের প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন জাদেজা। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের দুই ইনিংসে জাদেজা–অশ্বিনের কাছেই মূলত নাকাল হলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো, নিজেদের দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটসম্যানই ফিফটির দেখা পাননি।