মিকি আর্থার মনে করেন, রংপুরকে হারানো খুব কঠিন হবে
মিকি আর্থার, পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতানো কোচ। সেই আর্থার অক্টোবরের শেষে জড়িয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে, যোগ দিয়েছেন রংপুর রাইডার্সের কোচের পদে। আর কোচ হয়েই প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে দলকে শিরোপা জিতিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গ্লোবাল সুপার লিগ জিতেছে রংপুর। এবার আর্থারের মিশন বিপিএল। ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টের জন্য কাজও শুরু করে দিয়েছেন। সেই কাজের ফাঁকেই আজ রাজধানীর বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
সেখানেই রংপুর রাইডার্স ছাড়াও বাংলাদেশের ক্রিকেট ও বিপিএল নিয়েও কথা বলেছেন ২০১৫ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে কাজ করা আর্থার। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কিনা আর্থার বললেন বাংলাদেশ ও বিপিএল তিনি উপভোগ করেন, ‘আমি বাংলাদেশ উপভোগ করি। দারুণ একটা প্রতিযোগিতা। এখানকার ক্রিকেটারদের মান অনেক বেড়েছে, দিনকে দিন আরও ভালো হচ্ছে। বিপিএল দারুণ এক প্রতিযোগিতা।’
অবশ্যই আমরা গ্লোবাল সুপার লিগের ছন্দ এখানেও ধরে রাখতে চাই। আমরা কিছুদিন সময় পেয়েছি। সবাই জানে তাদের শক্তি কোথায়, দুর্বলতা কোথায়। এই কদিন একসঙ্গে থাকায় আমরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারি।মিকি আর্থার, কোচ, রংপুর রাইডার্স
সেই দারুণ টুর্নামেন্টে নিজের দলকেই অন্যতম ফেবারিট মনে করেন আর্থার। কেন, সেই ব্যাখ্যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজে গ্লোবাল সুপার লিগ থেকেই শিরোপা জিতে আসাটাকেই সবচেয়ে বড় কারণ দেখালেন, ‘অন্য সবার মতো, আমরাও এখানে শিরোপা জিততে এসেছি। তবে এটা বুঝতে পারছি, এখানে অন্যান্য দলও ভালো। অবশ্যই আমরা গ্লোবাল সুপার লিগের ছন্দ এখানেও ধরে রাখতে চাই। আমরা কিছুদিন সময় পেয়েছি। সবাই জানে তাদের শক্তি কোথায়, দুর্বলতা কোথায়। এই কদিন একসঙ্গে থাকায় আমরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারি।’
৯ বছর পর বাংলাদেশের কোনো দলের কোচ হয়ে এসেছেন আর্থার। তবে মাঝের সময়টায় বিপিএলের খোঁজখবর রেখেছেন বলেই জানালেন, ‘অবশ্যই আমি বিপিএলের খোঁজখবর রেখেছি। আমি ২০১৫ সালে কোচিংও করিয়েছি ঢাকা ডায়নামাইটসকে। অনেক দিন হয়ে গেছে যদিও। আমি বিপিএল দেখি। যত দ্রুত সম্ভব কন্ডিশন মানিয়ে নিতে হবে। উইকেট স্লো ও লো হয়, টুর্নামেন্ট যত গভীরে যায়। এই কন্ডিশন মানিয়ে নেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।’
এমন কন্ডিশনে বিদেশিদের চেয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলেই ভাবছেন আর্থার, ‘এই লিগ জয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে লোকাল পারফর্মারদের পারফরম্যান্স। প্রতিটি একাদশে ৭ জন স্থানীয় ক্রিকেটার থাকবে। এটা অবশ্যই আপনাকে অ্যাডভান্টেজ দেবে। প্রতিটি দলই ভালো। বরিশাল আউটস্ট্যান্ডিং। অনেক ভালো বিদেশি আছে দলে সঙ্গে স্থানীয়রাও, বলতে গেলে প্রায় জাতীয় দল। সঙ্গে শাহিন আফ্রিদি, কাইল মায়ার্স, মোহাম্মদ নবী, ফাহিম আশরাফ, ডেভিড ম্যালান, জেমস ফুলার… দলটা অনেক ভালো। তবে ২০ ওভারের ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই হতে পারে।’
বরিশালকে ফেবারিট মানলেও নিজের দল নিয়েও খুব আশাবাদী ৫৬ বছর বয়সী এই কোচ, ‘আমি খেলোয়াড়দের চিনি। তাদের যথেষ্ট মেধাবী। সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে আমাদের হারানো খুব কঠিন হবে। তবে সবার আগে শেষ চারে জায়গা করে নিতে হবে।’
তবে গ্লোবাল সুপার লিগ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা সৌম্য সরকারকে টুর্নামেন্টের শুরুতে পাচ্ছে না রংপুর। বাংলাদেশের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন এই হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যান। আর্থার জানালেন সৌম্যর অভাব অনুভব করবেন তাঁরা, ‘বিপিএলের প্রথম অংশে আমরা সৌম্যকে পাচ্ছি না। গ্লোবাল সুপার লিগে সে দুর্দান্ত ফর্মে ছিল। এই ফর্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজেও নিয়ে গিয়েছিল, দেখে খুব ভালো লাগছে। হি ইজ আ গ্রেট প্লেয়ার। তাকে না পাওয়াটা অবশ্যই হতাশাজনক। তবে এটা অন্য কারও জন্য সুযোগ তৈরি করছে। আমাদের ভালো দুজন বিদেশি ওপেনার আছে, টেলর ও হেলস, যারা দায়িত্ব নিতে পারে। আফগানিস্তান থেকে আতালও আসবে। তবে সৌম্যকে শুরু থেকে পেলে খুব ভালো হতো।’
শুধু সৌম্যই নয়, আর্থার প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাঁর দলের দুই তরুণ তুর্কি নাহিদ রানা ও আজিজুল হাকিমকেও। গতিতারকা নাহিদ রানাকে সব ম্যাচেই খেলানোর ইচ্ছা তাঁর, ‘তাকে দেখে দারুণ লাগছে। প্রচণ্ড গতি। ভালো বোলার হওয়ার সব গুণ আছে। সে এখানে কী করতে পারে, তা দেখতে মুখিয়ে আছি। আমার এখন দেখতে হবে, সে ম্যাচ সিচুয়েশনে কেমন করে। স্কিল আছে তার। এখন ম্যাচ ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। কখন বাউন্সার দিতে হবে, কখন ইয়র্কার। আমি তাকে অবশ্যই পুরো টুর্নামেন্টে খেলাতে চাইব।’
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপজয়ী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আজিজুল হাকিমকে নিয়েও উচ্ছ্বসিত আর্থার, ‘দারুণ, মুগ্ধ হওয়ার মতো ক্রিকেটার। সে অনেক ভালো খেলোয়াড় হবে। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ দেখেছি। সে বল করতে পারে, ব্যাট করতে পারে। খুবই তরুণ। তার অনেক সামর্থ্য আছে ভালো খেলার।’