অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড জুটির পরও দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক জয়
২০১৭ সালের শুরু থেকে এ ম্যাচের আগপর্যন্ত ৬৮টি নারী ওয়ানডে খেলে অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল মাত্র ৭টি ম্যাচ, যার সর্বশেষটি ১০ ম্যাচ আগে—গত বছরের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া কতটা শক্তিশালী, এ পরিসংখ্যানেই ফুটে ওঠে তার অনেকটাই। সেই অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্বাদ যেকোনো দলের কাছেই ভিন্ন লাগার কথা। আর সে জয় যদি হয় নিজেদের প্রথম, তাহলে তো কথাই নেই!
নর্থ সিডনি ওভালে আজ সে স্বাদই পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারলেও বুধবার অস্ট্রেলিয়াকে তারা প্রথমবার হারিয়েছে মুখোমুখি ১৭তম ম্যাচে এসে। সেটিও ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে (ডিএলএস পদ্ধতিতে)। রানের হিসাবে অস্ট্রেলিয়া এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে মাত্র দুবার।
দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে রেকর্ড হার উপহার দেওয়ার খুব কাছেই চলে গিয়েছিল। ৭১ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অ্যালিসা হিলির দল, নিজেদের সর্বনিম্ন ৭৭ রানের স্কোরও চোখ রাঙাচ্ছিল তাদের। সেটি হয়নি, উল্টো অস্ট্রেলিয়াকে অভাবনীয় এক জয়ের আশাও দেখিয়েছিলেন অ্যাশলেই গার্ডনার ও কিম গার্থ।
এলিজ-মারি মার্ক্স এসে তাঁদের জুটি ভেঙেছেন, তবে বিশ্ব রেকর্ড ঠিকই গড়েছেন গার্ডনার ও গার্থ। নবম উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেছেন রেকর্ড ৭৭ রান। মেয়েদের ওয়ানডেতে নবম উইকেটে এর আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল ইংল্যান্ডের লিনসি আস্কিউ ও ইশা গুহর ৭৩ রান, ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে গড়েছিলেন সে জুটি।
মার্ক্স জুটি ভাঙার পর মেগান শুটকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি ক্লোয়ি ট্রিওন, তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে ঐতিহাসিক জয়। যে ম্যাচটি আদতে ছিল মারিজান কাপময়। এ ম্যাচে চোটের কারণে যাঁর খেলা নিয়েই ছিল সংশয়। অ্যালিসা হিলি, ফিবি লিচফিল্ড ও বেথ মুনি—অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারের তিনজনকেই ফেরান কাপ। তাতেই নামে ধস। এ ম্যাচে কাপের বোলিং ফিগার ছিল এমন—৫ ওভার, ১ মেডেন, ১২ রান, ৩ উইকেট!
লিচফিল্ড ও তালিয়া ম্যাকগ্রা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সাত ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে কাপের পর আয়ান্ডা হিলুবি, মার্ক্স ও নাডিন ডি ক্লার্কের বোলিংয়ে খেই হারিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ পর্যন্ত ১৪৯ রানেই থামে তাদের ইনিংস।
কাপ বোলিংয়ে যেমন সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন, এর আগে ব্যাটিংয়েও করেছেন দলের সর্বোচ্চ রান! পাঁচে নেমে তিনি খেলেন ৮৭ বলে ৭৫ রানের ইনিংস।
প্রথম ওভারেই লরা ভল্ভার্টকে হারানোর পর আনিকা বোশ ও টাজমিন ব্রিটস দ্বিতীয় উইকেটে ৫৫ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুর চাপ সামাল দিয়েছিলেন ভালোভাবেই। তবে দ্রুত দুজনকে ফিরিয়ে আবার ম্যাচে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে টানেন কাপ।
সুনে লুস, ডি ক্লার্ক, ট্রিওন ও মার্ক্সকে নিয়ে চারটি জুটিতে তিনি যোগ করেন মোট ১৫৮ রান। এর মধ্যে মার্ক্সের সঙ্গে কাপের সপ্তম উইকেট জুটি ছিল অবিচ্ছিন্ন ৩১ রানের, যাতে মার্ক্স করেন মাত্র ২। কাপ দায়িত্বটা নিজের ব্যাটে তুলে নিয়েছিলেন, এরপর বোলিংয়েও করেছেন সে কাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক জয় এসেছে তাতেই।
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি, একই মাঠে।