এক বছরে ৬২ টেস্ট
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে টেস্টের মহোৎসব
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরেই নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ টেস্ট ম্যাচ দেখবে এই ২০২৪ সাল।
ক্রিকেটের ২০২৪ বললে প্রথমে কী মনে হয় আপনার! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর, তাই না? আগামী জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ক্রিকেটের নতুন মঞ্চ মার্কিন মুলুকে ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধে নামবে ২০টি দল।
টি-টোয়েন্টির রঙিন ক্রিকেটে মাতোয়ারা হওয়ার বছরেই বসন্ত আসছে টেস্ট ক্রিকেটেও। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের জন্যও এটি রমরমা এক বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে কতগুলো টেস্ট হবে, জানেন? ৬২টি! ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এক পঞ্জিকাবর্ষে এত টেস্ট ম্যাচ আর হয়নি কখনো। এর আগে সর্বোচ্চ ৫৫টি টেস্ট হয়েছিল ২০০১ সালে।
টি-টোয়েন্টির আবির্ভাবে টেস্ট ক্রিকেটের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে অনেক দিনই। ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি লিগে তারকা ক্রিকেটারদের ধরে রাখতে নিউজিল্যান্ড সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় নতুন এক দল পাঠানোর সিদ্ধান্তে প্রশ্নটা আরও বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপট মনে রাখলে ২০২৪ সালে রেকর্ডসংখ্যক টেস্ট ম্যাচ একটু বিস্ময় তো জাগায়ই। কারণটাও হয়তো জানতে ইচ্ছা করবে সবার।
একটা কারণ তো অবশ্যই টেস্ট পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেড়ে যাওয়া। এর চেয়েও বড় অবদান সম্ভবত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের। এই চ্যাম্পিয়নশিপের দাবি মেটাতে দলগুলোকে নিয়মিতই খেলতে হচ্ছে টেস্ট। তবে এসব তো সংখ্যা দিয়েই বোঝানো যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে এত বেশি টেস্ট ম্যাচ হওয়ার আরেকটা কারণ, বিশ্বকাপটা শেষ হয়ে যাচ্ছে বছরের মাঝপথেই। টেস্ট দলগুলোর কাছে বছরের শেষ ছয় মাস টি-টোয়েন্টি তাই আর বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে না।
টেস্ট ক্রিকেটের ভক্তদের জন্য দারুণ এক বছর হতে যাচ্ছে এটি। ‘বাজবল’–প্রেমীদের জন্য আরও বেশি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকসের ইংল্যান্ড এই বাজবল দর্শনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছেন টেস্ট ক্রিকেটে। বাজবলের প্রথম ও শেষ কথা হলো আক্রমণ। এই দর্শনের ইংল্যান্ডের টেস্ট ভাগ্য বদলে দিয়েছে স্টোকসের দল। টেস্ট ক্রিকেটের মরা গাঙেও মনে হয় জোয়ার এসেছে। অন্য অনেক দলই চেষ্টা করছে বাজবল অনুসরণের। আর তাতে হার-জিত দেখা ম্যাচের সংখ্যাও বেড়ে গেছে অনেক।
প্রাণভরে সেই বাজবল দেখার সুযোগও মিলবে এ বছর। বছরে সর্বোচ্চ ১৬টি টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ডই। সর্বোচ্চ, তবে এককভাবে সর্বোচ্চ নয়। ভারতও খেলবে ১৬টি টেস্ট। ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বছর শুরু করেছে ভারত। এ মাসেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
ভারত বছরটা শেষও করবে আরেকটি পাঁচ ম্যাচের সিরিজ দিয়ে। সেই সিরিজটা হবে অস্ট্রেলিয়ায়। পাঁচ ম্যাচের এই দুই সিরিজের মাঝে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দুটি সিরিজ খেলবে ভারত। অন্যদিকে ব্যস্ত বছরে ভারতে সফরের পর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কাকে আতিথেয়তা দেবে ইংল্যান্ড। ইংলিশরা এরপর পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডে সিরিজ খেলে বছর শেষ করবে।
ভারত-ইংল্যান্ডের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্যও রেকর্ড হতে যাচ্ছে এটি। এর আগে এক বছরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১০টি টেস্ট খেলেছিল ২০২২ সালে। বাংলাদেশ এবার টেস্ট খেলবে ৭টি দেশের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ যেহেতু দুই টেস্টের বেশি সিরিজ খেলার সুযোগ পায় না বললেই চলে, সংখ্যাটা তাই সহজেই বের করা যায়। এ বছর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সাত সিরিজের তিনটি বাংলাদেশ খেলবে ঘরের মাঠে—মার্চে শ্রীলঙ্কা, এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে ও অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
টেস্ট ম্যাচ খেলার সংখ্যা তো বাড়ল। এবার যদি পাল্লা দিয়ে জয়ের সংখ্যাটাও বাড়াতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এক বছরে সর্বোচ্চ তিনটি করে টেস্ট জিতেছে তিনবার—২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে।
রেকর্ড টেস্ট খেলার বছরে রেকর্ডের রেকর্ড দেখার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে পারেন। বছর শুরুর কেপটাউন টেস্টটাই তো প্রমাণ হিসেবে হাতের কাছে আছে। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দল মিলে খেলতে পেরেছে মোট ১০৭ ওভার।
তাতে নিউল্যান্ডসের উইকেটের অবদান তো ছিলই, টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়েরও প্রভাবও কি নয়! টি-টোয়েন্টির প্রভাবেই কি আজকাল এত এত হার-জিত দেখছে না টেস্ট ক্রিকেট, এই প্রশ্নটাও করতে পারেন।
বছরটা তাই শুধু টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নয়, টেস্ট ক্রিকেটের মহোৎসবেরও।