অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের তিনটিতেই হেরে অস্ট্রেলিয়ায় টানা টেস্ট হারের সংখ্যাটাকে ১৭-তে নিয়ে গেছে তারা। এবার টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ, একুশ শতকে যাদের অস্ট্রেলিয়ায় কোনো টেস্ট জয় নেই। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় খেলা ১৬ টেস্টে মাত্র দুটিতেই ড্র করতে পেরেছে ক্যারিবীয়রা।
এমন ইতিহাস সঙ্গী যাদের, সেই দলটা আবার সেরা তারকাদের পায় না সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। মোটামুটি দুর্বল দল নিয়েই টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলতে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজে ক্যারিবীয়দের কী অবস্থা হবে, সেটি ভাবতেই নাকি গা শিউরে উঠছে দলটির সাবেক তারকা জেফ ডুজনের। একসময়ের মহাপরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যানের মনে হচ্ছে, একপাল ভেড়াকে যেন কসাইখানায় পাঠানো হয়েছে।
এটা তো বিব্রতকর ঘটনা, অস্ট্রেলিয়া তো আমাদের মতো এমন পরিস্থিতিতে পড়ে না। হয়তো তাদের খেলোয়াড়েরা বেশি দেশপ্রেমিক।
ক্রেইগ ব্রাফেটের দলে সাতজনেরই এখনো টেস্ট অভিষেক হয়নি। এই তথ্যকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য বিব্রতকর বলেই মনে করছেন গত শতকের আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নিয়মিত মুখ ডুজন, ‘এটা তো বিব্রতকর ঘটনা, অস্ট্রেলিয়া তো আমাদের মতো এমন পরিস্থিতিতে পড়ে না। হয়তো তাদের খেলোয়াড়েরা বেশি দেশপ্রেমিক।’
জেফ ডুজন কথা বলেছেন জ্যামাইকান দৈনিক জ্যামাইকা গ্লিনারের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া সফরে কী দুর্দশা হতে পারে ক্যারিবীয় দলের, সেই শঙ্কা প্রকাশ করে ৮১টি টেস্ট খেলা ডুজন সেখানেই বলেছেন, ‘ভেড়ার পালকে কসাইখানায় পাঠানোর সঙ্গেই তুলনা চলে ব্যাপারটার। কোনো দুর্বল দলের বিপক্ষে এমন তরুণ একটা দল পাঠালে কোনো ক্ষতি ছিল না। কিন্তু এমন অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী একটি দলের বিপক্ষে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সাতজনকে নিয়ে গিয়ে খুব বেশি কিছু অর্জিত হবে বলে তো মনে হয় না।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়ায় সর্বশেষ টেস্ট জিতেছে ১৯৯৬-৯৭ সফরের শেষ টেস্টে। পার্থের সেই টেস্টের আগেই অবশ্য সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটি ছিল ডাউনআন্ডারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টানা তৃতীয় সিরিজ জয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলো যে টেস্টে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলছে না, তা নিয়ে বিরক্ত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহও। গত সপ্তাহে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আইসিসিকে হস্তক্ষেপও করতে বলেছিলেন সিনিয়র ওয়াহ। সেই দাবি করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রসঙ্গে ওয়াহ বলেন, ‘বছর দুয়েক ধরেই তারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) টেস্টে পূর্ণশক্তির দল দিচ্ছে না। নিকোলাস পুরানের মতো পুরোদস্তুর টেস্ট ব্যাটসম্যানও টেস্ট খেলছে না। সম্ভবত জেসন হোল্ডারই ওদের সেরা খেলোয়াড়, সেও খেলছে না এখন।’
সব তো টেস্ট ক্রিকেট ধ্বংসের আলামত। বোর্ডগুলোর খেলোয়াড়দের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। কখন ও কোথায় খেলবে, খেলোয়াড়েরাই এখন সেটি ঠিক করে।জেফ ডুজন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার
ওয়াহর সঙ্গে পুরোপুরিই একমত ডুজন, ‘সেরা খেলোয়াড়েরা না খেললে ক্রিকেট এগোবে কীভাবে? যা–ই হোক, এই সমস্যা থেকে বেরোনোটা সহজ নয়। স্টিভ ওয়াহ ঠিকই বলেছে। এসব তো টেস্ট ক্রিকেট ধ্বংসের আলামত। বোর্ডগুলোর খেলোয়াড়দের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। কখন ও কোথায় খেলবে, খেলোয়াড়েরাই এখন সেটি ঠিক করে।’
১৭ জানুয়ারি শুরু হবে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।