‘ভালো–মন্দ যাচাই না করে শুধু “মারার ইনটেন্ট” নিয়ে খেলা কাজের ব্যাপার হতে পারে না।…ম্যাচের পরিস্থিতিও তো মাথায় রাখতে হবে, টি-টোয়েন্টিতেও অনেক সময় ইনিংস পুনর্গঠন করতে হয়।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রকাশিতব্য প্রথম আলোর ম্যাগাজিন ‘বিশ্বকাপের ছক্কা’য় লিখেছেন সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন। ‘ইনটেন্ট’, ‘ইমপ্যাক্ট’ বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঘুরছে কয়েক দিন থেকেই। গাজী আশরাফের কথা এ প্রসঙ্গেই।
ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটার দিকে ফিরে তাকালেই গাজী আশরাফের কথাটার যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের ব্যাটিং ডুবেছে মূলত ম্যাচের পরিস্থিতি না বুঝে অতি-আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই। যে কারণে একের পর এক উইকেট পড়েছে। স্কোরবোর্ডে রান উঠেছে মাত্র ১৩৭। হেসেখেলে যা পেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের সহজ সেই রান তাড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ডেভন কনওয়ে। যাঁর ইনিংসটা বাংলাদেশ দলের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। এই বাঁহাতি সময় নিয়েছেন, পিচের গতি ও বাউন্স বুঝে ফেলার পর চড়াও হয়েছেন বোলারদের ওপর। ৫১ বলে ৭০ রানের ইনিংসে বলতে গেলে সেভাবে ঝুঁকিই নেননি। তাঁর ১৩৭.২৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের জয় এসেছে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ আজ ওপেনিংয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে পাঠায় নাজমুল হোসেনকে, যিনি আসেন সাব্বির রহমানের জায়গায়। মিরাজ আবারও ব্যর্থ,এবার দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেছেন। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই আবার একটা ‘লাইফ’–ও আছে।
মিরাজের ফেরার পর একটা ভিত্তি গড়ার কাজটা মোটামুটি ভালোই করেছিলেন নাজমুল ও লিটন দাস। শুরুতে টাইমিংয়ে গড়বড় হচ্ছিল নাজমুলের, এরপর ভালোই মানিয়ে নিয়েছিলেন। লিটন শুরুতেই জীবন পেয়েছিলেন। মিরাজের মতো তা কাজে লাগাতে পারেননি তিনিও। পাওয়ারপ্লেতে ৪১ রান ওঠার পর অষ্টম ওভারে অফ স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েলকে আনেন উইলিয়ামসন। বাংলাদেশের পথ হারানোর শুরুও তাতেই।
বলের গতি বিবেচনায় না এনে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ব্রেসওয়েলকে ফিরতি ক্যাচ দেন লিটন। নাজমুল ক্যাচ দিয়েছেন ইস সোধির গুগলিতে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে। মোসাদ্দেক নেমেই মারতে চেষ্টা করেন, সোধিকে তুলে মারার চেষ্টা দৃষ্টিকটু রকম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বল কোথায় পড়ছে, সেদিকে খেয়ালই ছিল না তাঁর। যেটির মূল্য দিতে হয় সোধির ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেটে পরিণত হয়ে।
ব্রেসওয়েলকে কাট করে চার মারার ঠিক পরের বলে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন ইয়াসির। এবার তাঁর হিটিং জোনের বাইরে বল ফেলেছিলেন ব্রেসওয়েল, ইয়াসির ধরা পড়েন তাতেই। ৬ ওভারে ২৫ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ, মাঝের ওভারের এ বিপর্যয়ের পরের ব্যাটসম্যানরা আর সামাল দিতে পারেননি।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এসেছেন ৭ নম্বরে, ক্যারিয়ারে এর আগে মাত্র দুবার এত নিচে খেলেছিলেন তিনি—২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে। সাকিবের সঙ্গে আফিফ হোসেনের জুটি বড় হয়নি, সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন আফিফও। জীবন পেয়েছিলেন, তবে ট্রেন্ট বোল্টের গতির কাছে হার মেনে হন বোল্ড।
সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসানকে পাঠানো হয় ৮ নম্বরে, শেষ পর্যন্ত তাঁর ১২ বলে ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংসেই বাংলাদেশ যায় ১৩৭ রান পর্যন্ত। এশিয়া কাপের পর প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামা সাকিব এর আগে ফেরেন ১৬ বলে ১৬ রান করেই।
ঠিক বাংলাদেশের মতো অত দ্রুত না হলেও ওপেনার ফিন অ্যালেনকে পাওয়ারপ্লের মধ্যে হারায় নিউজিল্যান্ড। শিশিরের কারণে গতকালও পরে ব্যাটিং তুলনামূলক সহজ হয়ে এসেছিল, তবে আজ শুরুতে টাইমিংয়ে সুবিধা করতে পারছিলেন না কনওয়ে-উইলিয়ামসনরা। তবে লক্ষ্যটা বড় ছিল না বলে সময় নিতে পেরেছেন তাঁরা।
শুরুতে সুইপ-রিভার্স সুইপের চেষ্টায় থাকা কনওয়ে পরে খেলা শুরু করেছেন সোজা ব্যাটে। উইলিয়ামসনের সঙ্গে তাঁর ৬৬ বলে ৮৫ রানের জুটি অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। শেষ দিকে উইলিয়ামসন ফিরলেও কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত। দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজকেও সামলেছেন দারুণভাবে। শেষ দিকে গ্লেন ফিলিপস খেলেছেন ৯ বলে ২৩ রানের ক্যামিও, নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়েছে ১৩ বল বাকি থাকতেই।
আগের ম্যাচে খরুচে বোলিং করলেও আজ হিসাবি বোলিংই করেছেন হাসান মাহমুদ; ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন উইলিয়ামসনের উইকেট। মোস্তাফিজের জায়গায় দলে আসা বিশ্বকাপের স্ট্যান্ডবাই শরীফুল শুরুটা ভালোই করেছিলেন। প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান, দ্বিতীয় ওভারে ফিন অ্যালেনকে আউট করে প্রথম ব্রেক–থ্রুও দিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য তিনিও মার খেয়েছেন।
এই ম্যাচে এসব খুচরো–খাচরা ব্যাপারের অবশ্য দিন শেষে আর কোনো মূল্যই থাকেনি। বরং টি–টোয়েন্টিতে হাবুডুবু খাওয়া বাংলাদেশ দলকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বদলে তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।