‘মিরাজ কি সাকিবের মতো হতে পারে? সম্ভবত’
অবিশ্বাস্য এক জয় নিশ্চিত হওয়ার পর একদফা উদ্যাপন তখন শেষ। মেহেদী হাসান মিরাজকে কাঁধে তুলে নিল বাংলাদেশ দল। তাতে নেতৃত্ব দিলেন সাকিব আল হাসান। মিরাজ ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে যা করেছিলেন, তাতে কুর্নিশ জানাতেই পারেন সাকিবও। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুর্দান্ত একটা বছরই কাটাচ্ছেন মিরাজ।
সেই মিরাজ কি হতে পারবেন ভবিষ্যতে সাকিবের বিকল্প, নিতে পারবেন দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা? প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অবশ্য আপাতত কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোর চাওয়া, যত দিন সম্ভব সাকিবকে ধরে রাখা।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে প্রথম ব্রেক থ্রুটা এনে দিয়েছিলেন মিরাজই। তবে ভারত দারুণ চাপে পড়ে যায় মূলত ১ ওভারের মধ্যেই সাকিব রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে ফেরালে। পরে আরেক ওভারেও জোড়া আঘাত করা সাকিব নিয়েছেন ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মতো ৫ উইকেট।
সাকিবের মতো অলরাউন্ডার মানেই ব্যাটিং ও বোলিং—দুই ক্ষেত্রেই অন্যতম ভরসা। তবে বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে তাঁর। বাস্তবতা হচ্ছে, একটা সময় গিয়ে থামতে হবে সাকিবকে। সাম্প্রতিক সময়ে মিরাজের যে পারফরম্যান্স, তাতে তিনি সে ভূমিকা নিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শুরুতে মজা করে ডমিঙ্গো বলেন, ‘(হ্যাঁ), যদি সে বাঁ হাতে বল করে, তাহলে...।’
অবশ্য এরপরই মনে করিয়ে দিলেন, সাকিবের মতো ক্রিকেটার পাওয়া মুখের কথা নয়, ‘দেখুন। দিন শেষে সাকিব অবিশ্বাস্য। আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক দিন কোচিং করিয়েছি। জ্যাক ক্যালিস অবসর নেওয়ার আট বছর পরও আমার মনে হয়, তারা ও রকম বিকল্প খুঁজছে। তারা নিশ্চিত হতে পারছে না, ছয় ব্যাটার খেলাবে নাকি সাতজন। অতিরিক্ত একজন বোলার খেলাবে নাকি ব্যাটার। এ ধরনের ক্রিকেটারের বিকল্প পাওয়া খুব কঠিন। যদি সে খারাপ ব্যাট করে, ভালো বল করবে। খারাপ বল করলে ব্যাট হাতে পারফর্ম করবে।’
এখনই অবশ্য সাকিবকে বিদায় বলতে চান না ডমিঙ্গো, ‘এ ধরনের ক্রিকেটার পাওয়া খুব কঠিন। এ ধরনের ক্রিকেটার খুব কম, এ জন্যই তাঁরা স্পেশাল। আমরা তাকে যত দিন সম্ভব রাখতে চাই। সে যেন সতেজ থাকে, এটা নিশ্চিত করতে চাই।’
টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়া মিরাজ এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৬৫টি ওয়ানডে ও ১৯টি টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডেতে নিয়মিত হলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনো নিজের জায়গাটা দৃঢ় করতে পারেননি।
তবে তাঁর সামর্থ্য আছে সাকিবের মতো এমন ভূমিকা নেওয়ার, সে সম্ভাবনাও দেখছেন টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করা ডমিঙ্গো, ‘যত দিন সম্ভব তাকে (সাকিবকে) বাংলাদেশের হয়ে দেখতে চাই, যত দিন আমরা এমন কাউকে খুঁজে না পাই, যে কিনা তার কাজটা করতে পারবে। মিরাজ কি তেমন হতে পারে? সম্ভবত। সে পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করতে পারে। বল হাতেও ধারাবাহিক পারফর্ম করে। সব সংস্করণে খেলার সুযোগ পেলে সে-ও কাজটা করতে পারে।’
অবশ্য মিরাজকে বেশ উঁচু নজরেই দেখেন ডমিঙ্গো, বলেছেন সেটি, ‘তাকে বেশ উঁচু মাপেরই মনে করি আমি, জানি না জনগণ বা সংবাদমাধ্যম কীভাবে দেখে। কোচ হিসেবে আমার তালিকার শুরুর দিকেই থাকে সে।’
মিরাজের প্রশংসা করতে গিয়ে এখানেই থামেননি ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের প্রধান কোচ এরপর যোগ করেন, ‘মিরাজ দলের আড়ালের একজন নায়ক। সব সংস্করণেই ধারাবাহিক। যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং করতে পারে, চাপ সামলাতে পারে। ওয়ানডে বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে ২ বা ৩-এ ছিল। তার ওপর সব সময়ই ভরসা করা যায়। রান দিলেও কঠিন মুহূর্তে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে, সে এমন পরিস্থিতি উপভোগ করে। (প্রথম ম্যাচে) সে যেভাবে খেলা ধরে রেখেছে, ইনিংসটি স্পেশাল ছিল। চিন্তাভাবনায়ও শান্ত ও পরিষ্কার ছিল এবং এমন কিছু সে এই প্রথমবার করেনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪৫ রানে ৬ উইকেট ছিল, সে দুর্দান্ত খেলেছিল এরপর। তার জন্য সত্যিই খুশি আমি, দলের জন্য দারুণ এক চরিত্র। কাজ করার জন্যও ভালো।’