আফগানিস্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ‘ভণ্ডামি’ বন্ধ করতে বললেন আইসিসির সাবেক চেয়ারম্যান
আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না অস্ট্রেলিয়া। তালেবানরা ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর নারীদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া পূর্বনির্ধারিত সিরিজ বাতিল করে দেয়। তবে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে কখনোই আপত্তি করেনি অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তান প্রসঙ্গে অস্ট্রেলীয়দের এই দ্বিমুখী নীতিই মানতে পারছেন না আইসিসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে।
নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেট প্রশাসক বলেছেন, কোনো দলের সঙ্গে নীতিগত কারণে না খেলার সিদ্ধান্ত নিলে ভণ্ডামি না করে কোনো ধরনের টুর্নামেন্টেই খেলা উচিত নয়।
২০২০ সালের নভেম্বরে আইসিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া বার্কলে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছিলেন দায়িত্বে। এরপর ভারতের জয় শাহ নিয়েছেন আইসিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। দায়িত্ব ছাড়ার পর যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বার্কলে। সেখানেই বলেছেন আইসিসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিয়েছে আফগানিস্তানের পূর্ণ সদস্য থাকা না থাকা নিয়ে ওঠা বিতর্ক।
তালেবান দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করার পর আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দেশটিতে মেয়েদের ক্রিকেটের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। নারী ক্রিকেটারদের অনেককেই অস্ট্রেলিয়ায় ও অন্যান্য কিছু দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন অবস্থায় নিজেদের বিধি মেনে আইসিসি আফগানিস্তানের পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা কেড়ে নিতে পারত। কিন্তু তারা সেটি করেনি।
তবে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের সঙ্গে সব সংস্করণেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা বন্ধ করে দিয়েছে, বাতিল করেছে পূর্বনির্ধারিত কিছু সিরিজ। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ডও বলে দিয়েছেন আফগানিস্তান মেয়েদের খেলতে না দিলে ইংল্যান্ডও একই কাজ করবে। যদিও আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনায় (এফটিপি) আপাতত আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নেই।
আপনারা যদি সত্যি সত্যিই কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নিতে চান, তবে ওদের সঙ্গে বিশ্বকাপেও খেলবেন না। এটা ঠিক, এতে হয়তো তারা সেমিফাইনালে না–ও উঠতে পারে। তবে নীতি তো নীতিই, অর্ধেক নীতি বলতে তো কিছু নেই।
তবে অস্ট্রেলিয়া ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ও এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বার্কলে এই দুই ম্যাচের উদাহরণ দিয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, ‘আপনারা যদি সত্যি সত্যিই কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নিতে চান, তবে ওদের সঙ্গে বিশ্বকাপেও খেলবেন না। এটা ঠিক, এতে হয়তো তারা সেমিফাইনালে না–ও উঠতে পারে। তবে নীতি তো নীতিই, অর্ধেক নীতি বলতে তো কিছু নেই।’
বার্কলে আরও বলেছেন, আফগানিস্তানে যে মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারছেন না, তাতে তিনি আফগান ক্রিকেট বোর্ডের কোনো দায় দেখেন না। আর এ কারণেই আইসিসি আফগানিস্তানের পূর্ণ সদস্যপদ খারিজ করেনি, ‘এটা তো আফগানিস্তান বোর্ডের দোষ নয়। তাদের মেয়েদের ক্রিকেট ছিল। আমি মনে করি, আমাদের অবস্থান ঠিক ছিল। আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধ করা তো কোনো ব্যাপারই নয়, তবে ওদের বোর্ড তো ভুল কিছু করেনি। তারা শুধু রাষ্ট্রীয় একটি ফরমান পালন করছে মাত্র, যেখানে বলা হয়েছে কী কী করা যাবে না।’
২৫ বছরে শরণার্থীশিবির থেকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়াটা অনুপ্রেরণাদায়ী গল্পই। আপনি কি সত্যিই সেই গল্পের ইতি টেনে দিতে চান?গ্রেগ বার্কলে, আইসিসি চেয়ারম্যান
বার্কলে আরও বলেন, আফগানদের জীবনে ক্রিকেটের প্রভাবও বড় ভূমিকা রেখেছে, ‘আমি হয়তো কথাবার্তায় একটু কাঁচা, তবে আমি মনে করি, ক্রিকেট আফগানিস্তানে ভালো কিছু করতে ক্রিকেট বড় একটা শক্তি। ক্রিকেট সেখানে অনেক মানুষের আনন্দের খোরাক। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আমাদের আশা করা উচিত, ক্রিকেট হয়তো সেখানে কিছু পরিবর্তন নিয়েও আসতে পারে। ২৫ বছরে শরণার্থীশিবির থেকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়াটা অনুপ্রেরণাদায়ী গল্পই। আপনি কি সত্যিই সেই গল্পের ইতি টেনে দিতে চান?’
বার্কলের সমালোচনার উত্তর দিয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড, ‘মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য থাকবেই। তবে আমরা আমাদের অবস্থান নিয়ে গর্বিত।’