বিশ্বকাপে আফগান রূপকথা, এবার শিকার শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.৩ ওভারে ২৪১
আফগানিস্তান: ৪৫.২ ওভারে ২৪২/৩
ফল: আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
আগের দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে মাত্র একটি জয়, সেটিও ২০১৫ সালে। এবার যদি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলা হতো, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার যেকোনো একটি দলকে হারাবে আফগানিস্তান, সেটিও বড় একটা সাফল্য হিসেবেই মনে করা হতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আফগানরা অন্য কিছুই ভেবে রেখেছে! ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের পর এবার শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে দিয়েছে দলটি। পুনেতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৪২ রানের লক্ষ্য আফগানরা পেরিয়ে গেছে ৭ উইকেট ও ২৮ বল বাকি রেখে।
৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পাঁচে উঠে এসেছে আফগানিস্তান, সেমিফাইনালের স্বপ্নটা এখন দেখতেই পারে তারা। অন্যদিকে ৬ ম্যাচে চতুর্থ হারে সে স্বপ্ন প্রায় ধূলিসাৎই হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। দুই দলই অবশ্য এ ম্যাচে নেমেছিল আগের ম্যাচে দারুণ জয়ে উজ্জীবিত হয়ে। আফগানিস্তান হারিয়েছিল পাকিস্তানকে, শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে।
তবে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচের কোনো পর্যায়েই সেভাবে চড়ে বসতে দেয়নি আফগানিস্তান, নিয়ন্ত্রণ রেখেছে তাদের কাছেই। বোলারদের দারুণ কাজ আরেকবার বৃথা যেতে দেননি ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডকে বাদ দিলে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলগুলোর বিপক্ষে ২৪০ বা এর বেশি রান তাড়া করে আফগানিস্তান জিতল তৃতীয়বার, এর দুটিই এবারের বিশ্বকাপে।
অবশ্য রান তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল আফগানিস্তান, ইনিংসের চতুর্থ বলেই দিলশান মাদুশঙ্কার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। কিন্তু ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ ইনিংস মেরামতের কাজটি ৯৭ বলে ৭৩ রানের জুটিতে করেন বেশ ভালোভাবেই। মাদুশঙ্কার শর্ট বলে ইব্রাহিম ক্যাচ দেওয়ায় ভাঙে সে জুটি। রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি গড়েন আরেকটি ৫০ রানের জুটি। লক্ষ্যটা তেমন বড় না হওয়ায় রান রেটের দিকেও খুব বেশি তাকাতে হয়নি তাঁদের শুরু থেকেই।
৬২ রানে একবার জীবন পেলেও রহমত অবশ্য আর রান যোগ করতে পারেননি। তাঁর আউটের সময় আফগানিস্তানের ওভারপ্রতি লাগত ৫ ছুঁই ছুঁই রান। সেটি যদি কোনো চাপ তৈরি করেও থাকে, আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটিংয়ে সেটি মিলিয়ে গেছে। ৬৩ বলে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি, অধিনায়ক শহীদি অপরাজিত ছিলেন ৫৮ রানে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কার ইনিংসের প্রথম ভাগও ছিল আফগানিস্তানের মতোই। তবে তাদের প্রথম ৯ ব্যাটসম্যানের ৮ জনই দুই অঙ্ক ছুঁলেও অর্ধশতকের দেখা পাননি কেউ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট জুটি ৫০ পেরোলেও খুব বেশি যায়নি আর, এরপর আর বড় জুটির দেখাও পায়নি শ্রীলঙ্কা। ২ উইকেটে ১৩৪ রান থেকে কেন ২৪১ রানেই আটকে গেছে তারা, সেটি বোঝা যায় তাতেই। ষষ্ঠ ওভারে দিমুথ করুনারত্নেকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত করেন দলে ফেরা ফজলহক ফারুকি, ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার এই পেসারই।
কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিত আসালাঙ্কা—শ্রীলঙ্কা বড় স্কোরের জন্য এই তিনজনের ওপর বেশ নির্ভরশীল। ফারুকি ও মুজিব উর রেহমান তাঁদের থামান মাঝারি মানের স্কোরেই। অবশ্য ১৮৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ের একটু সম্বল পেয়েছিল অষ্টম উইকেটে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও মহীশ তিকশানার ৪২ বলে ৪৫ রানের জুটিতে।