সিলেটে লেগেছে বিপিএলের রং
দৃশ্যটা দেখে কয়েক সংবাদকর্মী দাঁড়িয়ে গেলেন। মুহূর্তটার ছবি তুলতে হবে তাই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের বাইরে মানুষের ভিড়। টিকিট কিনতে লাক্কাতুরা স্টেডিয়ামের কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন ধরেছেন সমর্থকেরা।
ভিড় ছিল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের কাউন্টারেও। কিন্তু সেখানে টিকিট না পেয়ে অনেকেই ভিড় করেছে লাক্কাতুরায়। টিকিট নিয়ে এত উন্মাদনা কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য নয়, বিপিএলের জন্য।
বেশিরভাগ সময় বিপিএল ঢাকা, চট্টগ্রাম হয়ে আসে সিলেটে। কিন্তু কখনোই এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের টিকিট নিয়ে সিলেটের সাধারণ মানুষের মধ্যে এত উন্মাদনা দেখা যায়নি। এবারের গল্পটা ভিন্ন।
বিপিএলে নতুন দল হয়ে এলেও সিলেট স্ট্রাইকার্স খুব দ্রুতই স্থানীয়দের ‘নিজেদের দল’ হয়ে উঠেছে। মাঠের সাফল্য এর বড় একটি কারণ। ৭ ম্যাচ খেলে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিপিএল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে স্ট্রাইকার্স।
২০১৩ সালে সিলেট রয়্যালসের পর সিলেটের আর কোনো দল বিপিএলে এমন সাফল্য পায়নি। চায়ের শহরের অন্য চার ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট সুপার স্টারস, সিলেট সিক্সার্স, সিলেট থান্ডার ও সিলেট সানরাইজার্স যেটা পারেনি, সেটা করে দেখিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। এখন স্ট্রাইকার্সই সিলেটবাসীদের মাঠে টানছে চুম্বকের মতো। এর পেছনে মাশরাফি বিন মুর্তজার অবদানটা স্পষ্ট। বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়েও এখন পর্যন্ত সফলই। এবার সিলেটের স্থানীয় দর্শকদের সামনে সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পালা।
মাশরাফি নিজেও আছেন সে অপেক্ষায়। আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘সিলেটের দর্শকেরা তাদের দলটাকে যেভাবে চাচ্ছিল, সেভাবে হয়তো এখন পর্যন্ত পেয়েছে। এটা দলের জন্য যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনি দর্শকদের জন্যও। আমরাও চেষ্টা করব আমাদের কমিটমেন্ট রাখতে। খেলার কথা তো বলা যায় না, আমরা চেষ্টা করব শতভাগ কমিটমেন্ট রাখতে।’
১২ পয়েন্ট নিয়ে শেষ চার প্রায় নিশ্চিত করে ফেলা সিলেটের পক্ষে কি প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেছেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সিলেটের নাম দেখা যাবে কি না, সেটা তো কেউ বলতে পারবে না। আমিও না। আমরা শুধু শেষ চারে যাওয়াটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তারপর নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলে, তাদের ক্ষেত্রেই যা হওয়ার হয়। এক-দুইয়ে যেতে পারলে দুইটা সুযোগ থাকতে পারে। সেই অবস্থান তৈরি করতে পারলে মনে হবে আমরা যথেষ্ট সফল। চ্যাম্পিয়নের কথা যেটা বলা হচ্ছে, সেটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, সেটা সময়ের ওপর ছাড়তে হবে।’
যে সিলেটকে নিয়ে এখন শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় লোকজন, সেই দল অবশ্য বিপিএলের শুরুতে সম্ভাব্য ফেবারিটদের তালিকায় ছিল না। কিন্তু খেলাটা যে কাগজে–কলমে হয় না, সেটি দেখিয়ে দিয়েছে মাশরাফির দলটি, ‘কাগজে–কলমে অবশ্যই আমরা সেরা দল নই। কাগজে–কলমে খেলা হয়ও না, এটাও সত্য। মাঠে যারা ভালো খেলে, তারা জেতে।’
সিলেটকে নিয়ে উন্মাদনার মধ্যেও মাশরাফি-মুশফিকদের এখন মাঠের ক্রিকেটেই সব মনোযোগ, ‘আমাদের জন্য সিলেট পর্বের ম্যাচগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা সাত ম্যাচের ছয়টি আমরা জিতেছি। অন্যান্য দলগুলো যেভাবে খেলছে, তাতে এক-দুই নম্বরে থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেরা দুইয়ে থাকার প্রতিযোগিতাটা খুব কাছাকাছি হতে পারে। এ জন্য সিলেটের তিনটা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ।’
কাল দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেট খেলবে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। রাতের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশাল।