কোন দলের কেমন সম্ভাবনা, আগেই বা কী করেছে

৮ দলের টুর্নামেন্ট, যাদের মধ্যে ৫টি দলই আগে  পেয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের স্বাদ। এবার কি মিলবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়নের দেখা? উত্তর পাওয়া যাবে ৯ মার্চের ফাইনাল শেষে। তবে এর আগে জেনে নিতে পারেন এবারের আট দলের অতীত রেকর্ড ও শক্তি-দুর্বলতা...


‘আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যাব চ্যাম্পিয়ন হতেই’—দেশ ছাড়ার আগে বড় স্বপ্নের কথাই বলে গেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। সেটি তিনি বলতেই পারেন! আট বছর আগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবে, এটা কে ভাবতে পেরেছিল। তবে গতবারের মতো এবারও সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারলে বড় অর্জনই হবে। নিজেদের প্রিয় সংস্করণে গত এক বছর ভালো করেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে সিরিজে তো ধবলধোলাই-ই হয়েছে। সাকিব-তামিম-মাশরাফিকে ছাড়া খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ এবারের দলটি যেমন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের মতো অভিজ্ঞদের দিকে তাকিয়ে, তেমনি তাকিয়ে একঝাঁক তরুণ তুর্কির দিকে। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দলটি কি পারবে নতুন যুগের সূচনা করতে?

চোটের সঙ্গে লড়াই করা যশপ্রীত বুমরার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে ভারত। শেষ পর্যন্ত বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলারকে ছাড়াই দুবাইয়ে উড়াল দিতে হয়েছে গৌতম গম্ভীরদের। বুমরাকে হারিয়ে বড় ধাক্কাই খেয়েছে ভারত। দলটির পেস বোলিংয়ের দায়িত্ব এখন অর্শদীপ সিং, হর্ষিত রানা ও চোট কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ শামির ওপর ন্যস্ত। তবে দলে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার রেখে ভারতীয়রা জানিয়ে দিয়েছে তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের অভিযানে এবার পেস আক্রমণ নিয়ে বেশি ভাবছে না তারা। দলটির মূল ভরসা বরাবরের মতো এবারও ব্যাটিং। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে রানখরা থেকে বের হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ভারতীয়দের চাওয়া আরেক অভিজ্ঞ বিরাট কোহলির ব্যাটও হাসবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।

আরও পড়ুন

২৯ বছর পর দেশের মাটিতে বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্ট খেলবে পাকিস্তান। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা তো শিরোপা ধরে রেখেই উপলক্ষটা রাঙাতে চাইবে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল কাগজে-কলমে ফেবারিট না হলেও তাদের হিসাবে রাখতেই হবে। পাকিস্তান কাদের নিয়ে খেলতে নামছে, সেটি যে কোনো ব্যাপারই নয়, তার প্রমাণ তো অসংখ্যবারই দিয়েছে দলটি। তবে এবার সাবেক অধিনায়ক বাবর আজমের ফর্ম নিয়ে পাকিস্তান একটু চিন্তিতই। বড় উপলক্ষে জ্বলে ওঠা যাঁর অভ্যাস, সেই ফখর জামানের ফেরাটা অবশ্য একটু সাহস দিচ্ছে। কামরান গুলাম, সৌদ শাকিল, আগা সালমানরা বাবর-ফখরদের কতটা সাহায্য করতে পারবেন, কে জানে। বোলিংয়ে শাহিন আফ্রিদি-নাসিম শাহরা আছেন। তবে আরেক পেসার হারিস রউফের চোট একটু ভাবাচ্ছে।

আরও পড়ুন

পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়েই নিউজিল্যান্ড জানিয়ে দিয়েছে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ে তারা অন্যতম ফেবারিট। মিচেল স্যান্টনারের দলের ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন, ওপেনার ডেভন কনওয়ে, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম, অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপস—সবাই ব্যাটিংয়ে ভালো করছেন। বোলিংয়ে ম্যাট হেনরি ও উইলিয়াম ও’রুর্কের মতো পেসার আছে। স্পিন বিভাগে সর্বেসর্বা অধিনায়ক স্যান্টনার। পাকিস্তান সিরিজে ভালো না করলেও রাচিন রবীন্দ্র নিজের দিনে কতটা ভয়ংকর, সেটি তো জানাই। কিউইদের এই তরুণ দলটির কাঁধে ২৫ বছরের অপেক্ষা ফুরানোর ভারী জোয়াল। ২০০০ সালে কেনিয়ায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা দলটির চোখে আরেকবার ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার স্বপ্ন।

আরও পড়ুন

দুবারের চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা-স্বপ্ন বড় ধাক্কাই খেয়েছে। প্রথম পছন্দের পাঁচজন খেলোয়াড়কেই যে পাচ্ছে না ওয়ানডের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। মূল অধিনায়ক প্যাট কামিন্স নেই চোটের কারণে, একই কারণে আরেক পেসার জশ হ্যাজলউড ও অলরাউন্ডার মিচেল মার্শও। হঠাৎ করেই ওয়ানডে ছেড়েছেন পেস-বোলিং অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস। আর সর্বশেষ বাঁহাতি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যক্তিগত কারণে পাকিস্তানে যাবেন না তিনি। আর তাতে হঠাৎ করেই অনেকটা হীনবল হয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। এত এত বড় নামের পরিবর্তে যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের এখন নিজেদের চেনানোর সুযোগ। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ কি পারবেন একঝাঁক অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিয়ে ২০০৯ সালের পর দলকে প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতাতে?

আরও পড়ুন

প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখছে ইংল্যান্ড, যদিও তা পূরণ হওয়াটা এখন আরও কঠিন মনে হচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে ভারতের কাছে তিন ম্যাচে সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে জস বাটলারের দল। তিন ম্যাচেই ব্যর্থ দলটির বোলাররা। ব্যাটসম্যানদেরও সফল বলা যাবে না। তবে বাটলার, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, বেন ডাকেট, লিয়াম লিভিংস্টোন, আদিল রশিদরা জ্বলে উঠলে বড় কিছু করতেই পারে দলটি। বোলিংয়ে ইংল্যান্ড দলটি মূল ভরসা পেস বোলিং। মার্ক উড, জফরা আর্চার, সাকিব মেহমুদরা আছেন। সে তুলনায় স্পিনে একমাত্র ভরসা আদিল রশিদ। তবে দলটি পাকিস্তানের কন্ডিশনে রুট ও লিভিংস্টোনের স্পিনকেও কাজে লাগাতে চাইবে। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে গড়া দলটিকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিততে হলে অবশ্য ব্যাটসম্যানদের ওপরই বেশি ভরসা করতে হবে।

আরও পড়ুন

দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই ১৯৯৮ সালে পর্দা উঠেছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির। সে সময় অবশ্য নাম ছিল ইন্টারন্যাশনাল কাপ। নকআউট বিশ্বকাপ বা মিনি বিশ্বকাপ নামেই যা বেশি পরিচিতি পেয়েছিল। এরপর টুর্নামেন্টের নাম বদলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকাও থেকে গেছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন হয়েই। ২৭ বছর পর দলটি আবারও ট্রফি জয়ের অভিযানে নামবে টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বে। বরাবরের মতোই দলটির পেস আক্রমণ খুব সমৃদ্ধ। কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, উইয়ান মুল্ডার, মার্কো ইয়ানসেনরা আছেন। তবে আনরিখ নর্কিয়াকে হারিয়ে ফেলাটাকে বড় আঘাতই বলতে হবে। স্পিন আক্রমণে ভরসা তাব্রেইজ শামসি ও কেশব মহারাজ আর ব্যাটিংয়ে এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলার ও রেসি ফন ডার ডুসেন। নিজেদের দিনে যাঁরা যেকোনো প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণ ধ্বংস করে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন

১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যখন শুরু হয়, ক্রিকেট মানচিত্রে আফগানিস্তান বলে কিছু ছিল না। সেই দেশটির ক্রিকেট দলটিই ২৭ বছর পর প্রথমবার জায়গা করে নিয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। গত এক দশকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিয়মিত দলটি এবার আট দলের অভিজাত টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স বা কালো ঘোড়া। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা দলটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শেষ চারেও উঠে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। হাশমতউল্লাহ শহীদির দলে ইব্রাহিম জাদরান, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, ফজলহক ফারুকির মতো একঝাঁক তারকা ক্রিকেটার। তাঁদের প্রত্যেকেই ম্যাচের গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। চোটের কারণে শেষ মুহূর্তে রহস্য স্পিনার আল্লাহ গজনফরকে হারিয়ে ফেলাটা একটু আঘাত হয়েই এসেছে।