অ্যামব্রোস বাংলাদেশের বিপক্ষে যে দুটি ম্যাচ ভুলে গিয়েছিলেন
বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতে এসে সবাইকে অবাকই করেছেন কার্টলি অ্যামব্রোস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং কিংবদন্তি বললেন, তিনি নাকি এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। সবাই তো অবাক! আরে অ্যামব্রোস বলেন কি! তিনি তো অনেক আগেই বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। শুধু ঘুরেই যাননি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডেও খেলেছেন। সেই সফরের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন অ্যামব্রোস।
সাবেক ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার কিছুতেই মানবেন না। তিনি তাঁর এক কথা—আমি আগে বাংলাদেশে কখনোই আসিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হার মানতে হলো যখন তাঁকে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা দুটি ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখানো হলো। অ্যামব্রোস তো অবাক—‘তাহলে তো আমি এসেছি। কী করে এটা ভুলে গেলাম! সবই তো নতুন মনে হচ্ছে!
এবার বিপিএলে তিনি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। আজ থেকে ২৪ বছর আগে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। অ্যামব্রোসের ‘সবকিছু নতুন মনে হওয়া’র কারণ বোধ হয় সেটিই।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল। কিন্তু সে ম্যাচটিতে অ্যামব্রোসকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। মারভিন ডিলন, রেয়ন কিংদের সঙ্গে নিয়ে সে ম্যাচে ক্যারিবীয় গতি আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কোর্টনি ওয়ালশ। অ্যামব্রোসকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রথম খেলার সুযোগ পায় ১৯৯৯ সালের অক্টোবরের সেই সফরে। ব্রায়ান লারা নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি তিন দিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও দুটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল। অ্যামব্রোস তিন দিনের ম্যাচে খেলেননি। তিনি খেলেছিলেন দুটি ওয়ানডেতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে অ্যামব্রোসের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো উইকেটই নেই। তিনি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সেই দুই ম্যাচ মিলিয়ে মোট ১২ ওভার বোলিং করেছিলেন মাত্র। দুই ম্যাচ দিয়ে রান দিয়েছিলেন ৩০। ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে দুই-একটি নাচের মুদ্রা দেখিয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের ব্যাপক আনন্দ দিয়েছিলেন।
বলাই বাহুল্য, দুটি ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ উইকেটে ২৯২ রানের জবাবে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল ২১৯ রান। শিবনারায়ণ চন্দরপাল ৯২ করেছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়েছিলেন হাসিবুল হোসেন ও মনজুরুল ইসলাম। আল শাহরিয়ার খেলেছিলেন ৬২ রানের ইনিংস। অ্যামব্রোস মাত্র ৫ ওভার বোলিং করে দিয়েছিলেন ৯ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজে জিতেছিল ৭৩ রানে।
দ্বিতীয় ম্যাচটি বিখ্যাত ব্রায়ান লারার তাণ্ডবের জন্য। আজকে টি-টোয়েন্টির যুগে মার কাটারি ব্যাটিং পানি-ভাত হয়ে গেলেও ব্রায়ান লারা সেদিন মাত্র ৪৫ বলে শতরান করে ঢাকার দর্শকদের হতবাক করে দিয়েছিলেন। তাঁর তাণ্ডব থামিয়েছিলেন ‘অনিয়মিত বোলার’ হাবিবুল বাশার। তাঁর অফ স্পিনে ৬২ বলে ১১৭ করে বোল্ড হয়েছিলেন লারা। লারার সেই ইনিংসের ৩ বছর আগেই শহীদ আফ্রিদি নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৭ বলে শতরান করে ফেললেও, ঢাকার দর্শকদের দুর্দান্ত এক স্মৃতি হয়ে আছে সেই ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ উইকেটে ৩১৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ সেদিন করেছিল ২০৫। আমিনুল ইসলাম করেছিলেন ৬৬। দুটি ম্যাচেই শাহরিয়ার হোসেন ভালো করেছিলেন। যদিও ফিফটি পাননি। প্রথম ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৪৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৭। অ্যামব্রোস এ ম্যাচে ৭ ওভার বোলিং করে এক মেডেনে ২১ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।