২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মুশফিকদের চান্দু স্টেডিয়ামে আর খেলবে না বিসিবি

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের বিভিন্ন আসবাব ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। মাঠের ভেতর তাই কাভার্ডভ্যানছবি: সোয়েল রানা

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা পায় বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। পরের মাসেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকও হয়ে যায় ওই সময়ে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামটির।

কিন্তু ওই বছরেরই ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে চলে যায় স্টেডিয়ামটি। আর এখন তো এই স্টেডিয়ামে বিসিবি আর কখনো ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করবে কি না, সেটিই অনিশ্চিত।

আরও পড়ুন

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বে স্টেডিয়ামের আসল মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। গতকাল এনএসসি সচিব বরাবর পাঠানো বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার ‘অসহযোগিতার’ কারণে বিসিবি শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে নিয়মিতভাবে লিগ ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারছে না। বিসিবি তাই রক্ষণাবেক্ষণসহ স্টেডিয়ামটির যাবতীয় দায়দায়িত্ব এনএসসির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কর্মরত বিসিবির ১৭ জন কর্মকর্তা–কর্মচারীকেও বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে তাঁদের মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে থাকা রোলার, সুপার সপার, পিচ কাভারসহ মাঠ ও খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম এবং ড্রেসিংরুমের আসবাবও ঢাকায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।

কাভার্ডভ্যানে তোলা হচ্ছে পিচ কাভারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম
ছবি: সোয়েল রানা

গতকাল রাতে নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে বিসিবি বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই অসহযোগিতা অনেক দিন ধরেই করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে বিসিবি প্রতি মাসে বিপুল অর্থ ব্যয় করে আসছে। এই মাঠ নিয়ে বিসিবির বড় পরিকল্পনা ছিল। ইতিমধ্যেই আমরা বেশ কিছু সংস্কারকাজ শুরুও করেছিলাম। কিন্তু মাঠে শেখ কামাল যুব ক্রিকেট আয়োজন করতে গেলে স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা অসহযোগিতা করেছে। ক্রীড়া সংস্থা সহযোগিতা না করায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা বিসিবির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।’

আরও পড়ুন

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন নিয়ে স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিসিবির দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। সূত্র জানিয়েছে, চার–পাঁচ বছর আগে একবার বগুড়ায় ইয়ুথ ক্রিকেট লিগের খেলা দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু হুট করে স্থানীয় লিগের তারিখ দিয়ে দেওয়ায় না খেলেই বগুড়া থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল ক্রিকেটারদের।

এবারও সে রকমই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিসিবি শেষ পর্যন্ত স্টেডিয়ামটি ছেড়েই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিসিবির সূচি অনুযায়ী শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত হওয়ার কথা শেখ কামাল জাতীয় যুব ক্রিকেট লিগের খেলা। এই সূচি পূর্বনির্ধারিত হলেও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিসিবিকে চিঠি দিয়ে জানায়, ১ মার্চ থেকে স্থানীয় প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ শুরু হবে বলে যুব ক্রিকেটের জন্য মাঠ দেওয়া সম্ভব নয়। তারাও লিগের সূচি করেছে ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। সেই লিগ ১ মার্চ থেকে শুরুও হয়ে গেছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। এরপরই বিসিবির ওই সিদ্ধান্ত।

বিসিবি স্টেডিয়ামটির দায়দায়িত্ব এনএসসির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে
ছবি: সোয়েল রানা

ওদিকে গতকালই বিসিবির প্রধান নির্বাহীকে পাঠানো এক চিঠিতে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ১৬ বছর ধরে এই স্টেডিয়ামে বিসিবি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করেনি। স্টেডিয়ামের সংস্কার বা উন্নয়নকাজও করেনি। তিনি উল্টো বিসিবির বিরুদ্ধেই ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ এনে চিঠিতে লিখেছেন, বগুড়ার ক্রিকেটাররা জাতীয় পর্যায়ে খেলেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তাঁরা বগুড়ায় একমাত্র এই মাঠটিই ব্যবহার করেন।

বগুড়ায় সাংবাদিকদের মাসুদুর রহমান বলেন, ‘স্টেডিয়াম বিসিবির নয়; জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। এত দিন তারা (বিসিবি) ম্যাচ আয়োজন ছাড়াও তত্ত্বাবধান করত। এখন বিসিবি তাদের জনবল প্রত্যাহার করবে নাকি থাকবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা চলে গেলেও খেলা আয়োজনে কোনো সমস্যা হবে না।’

শুধু সরঞ্জাম নয় বিসিবির কর্মকর্তা–কর্মচারীকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে
ছবি: সোয়েল রানা

২০০৬ সালের পর থেকে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলেও জাতীয় লীগ, যুব ক্রিকেট লিগ, প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ এবং করপোরেট লিগের ম্যাচ হয়েছে এ মাঠে। এ ছাড়া হয়েছে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পও।

জাতীয় দলের মুশফিকুর রহিম, শফিউল ইসলাম ও সদ্য দলে সুযোগ পাওয়া তৌহিদ হৃদয় বগুড়া থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার। এ ছাড়া জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের রিতু মনি, শারমিন সুলতানা ও খাদিজাতুল কুবরা, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য তানজিদ হাসানও বগুড়ার ক্রিকেটার।