স্টোকসের অ্যাশেজ খেলার প্রস্তাব ‘লল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মঈন

অবসর ভেঙে টেস্ট দলে ফিরেছেন মঈন আলীরয়টার্স

‘অ্যাশেজ?’

‘লল।’

প্রথম মেসেজটি ছিল বেন স্টোকসের। মঈন আলীকে সেটি পাঠিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। মঈন ভেবেছিলেন, স্টোকস মজা করছেন। ‘লল’ (এলওএল—লাফিং আউট লাউড বা উচ্চস্বরে হেসে ওঠা) লিখে মঈনও সেটিকে নাকি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি এ সিরিজের সময় ছুটি কাটাতে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

তবে সেই মঈনই আজ কথা বলেছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের সঙ্গে অনুশীলনের সময়। স্টোকসের ডাকে টেস্ট অবসর ভেঙে অ্যাশেজের দলে ফেরানো হয়েছে এ অলরাউন্ডারকে। মঈনকে ফেরানো হয়েছে মূলত বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ চোটের কারণে অ্যাশেজ থেকে ছিটকে যাওয়াতে। কীভাবে দলে ফিরলেন, আজ সংবাদ সম্মেলনে সেটিই খোলাখুলি বলেছেন মঈন।

তাঁর কথায়, ‘লিচি (লিচ) চোট পেয়েছে, তার জন্য ব্যাপারটি দুঃখের। স্টোকসি (স্টোকস) আমাকে প্রশ্নবোধক চিহ্নসহ মেসেজ দেয়—“অ্যাশেজ?” আমি তখনো লিচির সংবাদটা শুনিনি। ফলে স্রেফ বলেছিলাম, “এলওএল (লল)।” ভেবেছিলাম সে মজা করছে। তবে এরপরই খবরটি জানতে পারি। তার সঙ্গে কথা হয়। এই আরকি।’

মঈন ভেবেছিলেন, স্টোকস তাঁর সঙ্গে মজা করছেন
রয়টার্স

স্টোকস-ম্যাককালামের অধীনে অবশ্য এর আগেও টেস্টে ফেরার কথা উঠেছিল ২০২১ সালে এ সংস্করণ থেকে অবসরে চলে যাওয়া মঈনের। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। মঈন সর্বশেষ আইপিএলেও চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেছিলেন। স্টোকসও আইপিএলেই ছিলেন। তবে তখন দুজনের মধ্যে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি, ‘অবশ্যই আমি ভারতে আইপিএলের স্টোকসির সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তবে সে সময় একবারও আমার অবসর ভেঙে ফেরার কোনো কথা উল্লেখ করেনি। শুধু দলকে অ্যাশেজে কীভাবে এগিয়ে নেবে, সেটি বলেছে। তবে সে তো আমাকে অনুশীলন করতে দেখেছে। মনে করেছে আমি বোলিংয়ে ভালোই করব।’

৬৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২৯১৪ রান করার পাশাপাশি ১৯৫টি উইকেট নিয়েছেন মঈন। তবে শুধু রান বা উইকেটসংখ্যা নয়, মঈনের খেলার ধরনও স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও স্টোকসের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার কথা। আঁটসাঁট বোলিং বা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং মঈনের সহজাত নয় তেমন, ম্যাককালাম-স্টোকস সেটি চানও না।অবশ্য মঈনের ফেরার কারণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক—স্টোকসের মতো অধিনায়ক। দুই—অ্যাশেজ। ছুটিতে যাওয়ার পরিকল্পনাও তাই বাদ দিয়েছেন মঈন, ‘আমার পারিবারিক ছুটির জায়গা “বুকড” করাও ছিল। তবে এটি অ্যাশেজ, এত বড় সিরিজ, ছেলেরা রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলছে। তবে আমার মনে হয় না অন্য কোনো অধিনায়কের জন্য আমি অবসর ভেঙে ফিরতাম।’

আরও পড়ুন

মঈনের টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে তাঁর স্ত্রী খুব একটা উচ্ছ্বসিত ছিলেন না। তবে আশপাশের সবার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচকই ছিল, ‘আমার স্ত্রী খুব একটা আগ্রহী ছিল না, তবে বাকি সবাই ছিল। আমি স্টোকসির সঙ্গে এ নিয়েও কথা বলেছি, সে কীভাবে ব্যাটারদের সঙ্গে কথা বলে। সে শুধু বলেছে, “তুমি যেভাবে খেলো, সেটি খেললেই হবে।” যে শটই খেলুন না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। আমার ধারণা, এর মাধ্যমে আমি আরও কিছু শট খেলার লাইসেন্স পাব।’

অনুশীলনে মঈন আলী
রয়টার্স

স্টোকসের সঙ্গে বোলিং নিয়েও কথা হয়েছে মঈনের, ‘এমনকি বোলিং নিয়েও সে আগ্রাসী মনোভাবই পোষণ করে। আমি জানি আমি রান দেব। তবে এর মাঝেই এমন ডেলিভারি থাকবে, যেগুলোতে আমি উইকেট পাব, সেগুলো নিয়েই তার ভাবনা আসলে। আমি যখন নিয়মিত টেস্ট খেলতাম, তখন এমন একটা যুগ পেলে ভালো লাগত। বেন ও বাজ (ম্যাককালাম) জানে তারা আমার কাছ থেকে কী পাবে—আর যা–ই হোক, অনেকগুলো মেডেন ওভার পাবে না।’

ইংল্যান্ডের এই আক্রমণাত্মক খেলার জবাব অস্ট্রেলিয়া কীভাবে দেবে, সেটি একটি প্রশ্ন। সম্প্রতি জেমস অ্যান্ডারসন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার স্বভাব আগুনের সঙ্গে আগুন নিয়েই লড়াই করা। মঈন জানেন, তাঁর ওপরও চড়াও হবেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা, ‘শতভাগ নিশ্চিত, তারা চড়াও হবে আমার ওপর। আমিও তাই হতাম। কোনো স্পিনার এলেই তার ওপর আক্রমণ করা হবে। তারা আমাকে ডিফেন্ড করবে, সেটি আশাও করছি না। আশা করছি তারা আমার ওপর চড়াও হবে, এটি বিপজ্জনকও হবে। কারণ, স্টোকসি ফিল্ডার ওপরে রাখতে পছন্দ করে। ফলে অনেক রান বের হয়ে যেতে পারে।’

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১ ম্যাচ খেলে মঈনের উইকেট ২০টি। তবে ক্যারিয়ারে যেখানে প্রতি উইকেটের পেছনে এ অফ স্পিনার খরচ করেছেন ৩৬.৬৬ করে রান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাঁর গড় ৬৪.৬৫। অবশ্য এবার বোলিংয়ে ভিন্ন মঈনকে দেখা যাবে বলেই মনে করেন তিনি, ‘আমার মনে হয় বোলিংয়ে আমি আরেকটু বুদ্ধিদীপ্ত হয়েছি। আগে খেলার সময় স্রেফ বোলিং করে গেছি, খুব একটা চিন্তাভাবনা করিনি। তবে তখনই ভেবে রেখেছি, যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলি, তাহলে ভিন্ন কিছু করব। সেগুলোই করার চেষ্টা করব।’