ক্রিকেটারদের পুরো ‘মালিকানা’ চায় টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো
দুনিয়াব্যাপী বিভিন্ন দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি লিগ এখন দারুণ জনপ্রিয়। ক্রিকেটপ্রেমীরাও মজেছেন এই টি–টোয়েন্টি লিগগুলোর উন্মাদনায়। অনেক ক্রিকেটারই এখন জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে টি–টোয়েন্টি লিগ খেলতে বেশি আগ্রহী।
অর্থের ঝনঝনানি যেখানে বেশি, আগ্রহ তো সেখানে বেশি হবেই। তবে ভবিষ্যতে টি–টোয়েন্টি লিগগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্র অনেকটাই সংকুচিত করে ফেলতে পারে। শঙ্কাটা দেখা দিয়েছে আইপিএলের কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে দলের স্বত্ব কেনায়।
ক্রিকইনফো জানিয়েছে, সম্প্রতি আইপিএলের কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে একাধিক লিগে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছে। ভবিষ্যতে ব্যাপারটি বাস্তবায়িত হলে ক্রিকেট বোর্ড বা দেশ নয়, এই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মালিকেরাই হবেন ক্রিকেটারদের মূল নিয়োগকর্তা। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম টাইমস জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের ছয় ক্রিকেটারকে নাকি এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারও আছেন।
ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্রিকেটারদের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর এই আলোচনা শুধু ইংল্যান্ডেই হয়নি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজেও একই রকম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটারদের সংগঠন ‘ফিকা’র নির্বাহী সভাপতি হিথ মিলস বলেছেন, ‘একাধিক লিগে খেলার জন্য কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি ও খেলোয়াড়দের মধ্যে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এটি (চুক্তি) ভিন্ন রকম হতে পারে। তবে ক্রিকেটে এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। এই আলোচনা চলছে এবং খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতে এমন সুযোগ থাকবে।’ হিথ মিলস বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের বিশ্বব্যাপী তিন–চারটি দল থাকতে পারে। তারা একজন খেলোয়াড়কে শুধু আইপিএল নয়, একাধিক টুর্নামেন্টে চাইতে পারে। এমন নয় যে একজন খেলোয়াড়কে সব প্রতিযোগিতার জন্যই নিতে হবে। চাইলে এর বাইরে আইপিএলের জন্য আলাদা করেও খেলোয়াড় নিতে পারবে।’
মিলস জানিয়েছেন, কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের সঙ্গে কোনো ক্রিকেটার এমন কোনো চুক্তি করেছেন বলে তাঁর জানা নেই। তবে, অল্প কিছুদিন হলো এমন আলোচনার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন।
আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, চেন্নাই সুপার কিংস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের দল আছে ক্যারিবীয় টি–টোয়েন্টি লিগ ও দক্ষিণ আফ্রিকার টি–টোয়েন্টি লিগে। এই ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলোচনার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
ক্রিকেটাররা যদি বোর্ডের অধীন থেকে বেরিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যান, তাহলে সেই ক্রিকেটারদের দেশের হয়ে খেলার কোনো বাধ্যবাধকতা হয়তো থাকবে না। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে টি–টোয়েন্টি লিগগুলো সাধারণত সারা বছর ধরেই নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করে আয়োজিত হয়। যে ফ্র্যাঞ্চাইজি আইপিএলের পাশাপাশি আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ক্যারিবীয় অঞ্চলে টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনেছে, তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়েরা তখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সময় বের করতেই হিমশিম খাবেন। নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট যেমন গত আগস্টে ফ্র্যাঞ্চাইজি ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার চাপ সামলাতে না পেরে বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন।
এ ব্যাপারটি বাস্তবায়িত হলে ক্রিকেট হয়ে যাবে ফুটবলের মতো। যেখানে ক্লাবের হয়ে খেলাটাই মুখ্য দায়িত্ব খেলোয়াড়দের। বিশ্বকাপ বা বড় কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকে হয়তো ছাড় পাবেন খেলোয়াড়েরা। তবে এটি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না।
এই সপ্তাহের শুরুতে বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল পডকাস্টে ইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের কাছে এখনো টেস্ট ক্রিকেটই অগ্রাধিকার পায়। তাই আমার মনে হয় না, নিকট ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতাভুক্ত কোনো টেস্ট ক্রিকেটার বলবেন “আমি (ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে) তিন সপ্তাহের জন্য আমেরিকায় যাচ্ছি।” আমার মনে হয় না এটা হবে। আর এই মুহূর্তে এটা হুমকির মতো কোনো বিষয়ও নয়।’
এমনিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি নিয়ে ত্যক্তবিরক্ত ক্রিকেটাররা। সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে তাঁদের। টেস্ট ক্রিকেটকে বাদ দিলে সারা বছর ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে এবং টি–টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোকে অর্থহীনই মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।
গত বছর ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্রিকেটকে ফুটবলের আদলে বদলে দেওয়ার। টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে যেখানে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শুধু বিশ্বকাপ বা বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টেই। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম সোজাসাপটাই জানিয়েছিলেন, বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেট তাঁর কাছে বিরক্তিকর।