টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের দাবিও উঠেছে পাকিস্তানে
২০২৩ এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারত—বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ এ কথা বলার পর গর্জে উঠেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা। সাঈদ আনোয়ার, শহীদ আফ্রিদি থেকে কামরান আকমল ও ইউনিস খানরা মুখ খুলেছেন। শুধু পাকিস্তানের সাবেকরাই নন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসও ব্যাট ধরেছেন পাকিস্তানের পক্ষে।
বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮ অক্টোবর। সে সভায় ২০২৩ সালে ভারত খেলবে, এমন টুর্নামেন্টগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। আলোচনার তালিকায় ছিল পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ এশিয়া কাপও। তবে বিসিসিআইয়ের পুনর্নির্বাচিত সচিব ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি জয় শাহ মঙ্গলবার দাবি করেন, পাকিস্তানে নয়, এশিয়া কাপ হবে অন্য কোনো ভেন্যুতে। যদিও আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর সূচি (এফটিপি) অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এশিয়া কাপ পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
কিন্তু জয় শাহ বলেছিলেন, ‘আমি এসিসির সভাপতি হিসেবে বলছি, ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। আমরা পাকিস্তানে যাব না। তারাও ভারতে আসবে না। এশিয়া কাপ আগেও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হয়েছে।’
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এরপর চুপ থাকেনি। আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ বর্জনের হুমকিও দিয়েছে পিসিবি। সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ম্যাচের আগে জয় শাহর এ মন্তব্যের সমালোচনা করেন। সাবেক অধিনায়ক ইউনিস খান এবং উইকেটকিপার কামরান আকমল এআরওয়াই নিউজের একটি টক শোতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
পিসিবির প্রতি ইউনিস খান বলেছেন, ‘জয় শাহর এমন কথা বলা ঠিক হয়নি। কিন্তু বন্দুক থেকে গুলি তো বেরিয়েই গেছে, তাই আমি বলব, পিসিবি এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিক। যেভাবে আমরা অতীতেও এমন অবস্থান নিয়েছি। আর দলগুলো তো আমাদের দেশ সফরও শুরু করেছে।’
ইউনিস এরপর সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘তবে তারা (ভারত) যদি নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাতেও আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ভারত যদি এশিয়া কাপে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদেরও ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাওয়া উচিত নয় কিংবা এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনেও সম্মত হওয়া ঠিক হবে না।’
কামরান আকমল অবশ্য আরও কঠোর হতে বলছেন পিসিবিকে। তাঁর দাবি, ভারতকে পুরোপুরি বর্জন করা উচিত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোববার ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। কামরানের মতে, পাকিস্তান দলের এই ম্যাচও বর্জন করা উচিত, ‘এশিয়া কাপ শুধু পাকিস্তানেরই আয়োজন করা উচিত হবে এবং সেটি না হলে ভারতের সঙ্গে কোনো পর্যায়েই খেলা উচিত হবে না পাকিস্তানের। সেটা আইসিসির কোনো ইভেন্টের ম্যাচ, এশিয়া কাপ কিংবা ২৩ অক্টোবরের ম্যাচ—যা–ই হোক না কেন।’
পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার সাঈদ আনোয়ার টুইট করেন, ‘যখন সব আন্তর্জাতিক দল পাকিস্তানে খেলতে আসছে, তখন বিসিসিআইয়ের কী সমস্যা। বিসিসিআই যদি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে চায়, তাহলে পিসিবিরও উচিত হবে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার দাবি করা।’
সাঈদ আনোয়ারের একসময়ের সতীর্থ এবং সাবেক অধিনায়ক আফ্রিদি এমন মন্তব্যে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রশাসনের অভিজ্ঞতার অভাব দেখছেন। তাঁর টুইট, ‘১২ মাস ধরে দুই দলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে আনন্দময় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তবে কেন বিসিসিআই সচিব বিশ্বকাপ ম্যাচের আগমুহূর্তে এমন মন্তব্য করল? এটি ভারতের ক্রিকেট প্রশাসনে অভিজ্ঞতার অভাবের প্রতিফলন।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডস এখন পাকিস্তান জুনিয়র লিগে (পিজেএল) গদর শার্কস দলের ‘মেন্টর’–এর ভূমিকা পালন করছেন। তিনিও ব্যাট ধরেছেন পাকিস্তানের পক্ষেই।
সংবাদমাধ্যমকে ভিভ বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে নিজের ঘর বলেই মনে হয়। এখানে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি এবং জায়গাটা নিরাপদ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে সব সময়ই ভালো লাগে। এই দল আরও বেশি ম্যাচ খেলুক, সেটা চাই এবং ভবিষ্যতে আশা করি অনেক কিছুই পাল্টাবে।’