অস্ট্রেলিয়ায় আর একটি সেঞ্চুরি পেলেই যে রেকর্ড গড়বেন কোহলি

রানখরা কাটিয়ে উঠতে অনুশীলনে আরও বেশি সময় দিচ্ছেন বিরাট কোহলিবিসিসিআই

শুক্রবার পার্থ টেস্ট দিয়ে শুরু হচ্ছে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ অস্ট্রেলিয়া–ভারত দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাট হাতে দুঃসময় পার করতে থাকা বিরাট কোহলির জন্য তো সিরিজটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।

টানা তৃতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিততে ভারতের সমর্থকেরা নিশ্চয় কোহলির ব্যাটে রান ফোয়ারা দেখতে চাইবেন। এই সিরিজে সেঞ্চুরি পেলে কোহলি একটা জায়গায় তাঁর আদর্শ শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যাবেন।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে টেন্ডুলকার–কোহলি দুজনেরই সেঞ্চুরির সংখ্যা ৬টি, যা ভারতীয় হিসেবে তো বটেই, এশিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। পার্থ, অ্যাডিলেড, ব্রিসবেন, মেলবোর্ন অথবা সিডনি—যেকোনো এক টেস্টে সেঞ্চুরি পেলেই রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেবেন কোহলি।

টেন্ডুলকার–কোহলি যখন ভারতীয় দলে সতীর্থ ছিলেন
এএফপি

টেস্ট খেলতে এ নিয়ে কোহলি পঞ্চমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফর করছেন। আগের চার সফরে ১৩ টেস্টে ২৫ ইনিংসে ১৩৫২ রান করার পথে পেয়েছেন ৬ সেঞ্চুরি। টেন্ডুলকারের ৬ সেঞ্চুরি পেতে খেলতে হয়েছে ২০ টেস্ট ও ৩৮ ইনিংস।

আরও পড়ুন

২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নিজের প্রথম টেস্ট খেলেন কোহলি। ২০১১–১২ মৌসুম থেকে ২০১৮–১৯ মৌসুম পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের খেলা ১২ টেস্টেই তিনি ছিলেন। কিন্তু ২০২০–২১ মৌসুমে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট খেলেই দেশে ফিরে গেছেন। কারণ, প্রথম সন্তান ভামিকা জন্ম নেওয়ার সময় স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকতে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে আগেই ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন। ওই সিরিজের শেষ ৩ ম্যাচ খেলতে পারলে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি সংখ্যায় টেন্ডুলকারকে হয়তো তখনই ছাড়িয়ে যেতেন।

অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানের টেস্ট সেঞ্চুরি (শীর্ষ ৫)

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফরকারী ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় কোহলি অবশ্য যৌথভাবে তিন নম্বরে। ৯ সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে ইংল্যান্ডের স্যার জ্যাক হবস। দুইয়ে আরেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান ওয়ালি হ্যামন্ড। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৭ বার। টেন্ডুলকার–কোহলির মতো ৬টি সেঞ্চুরি আছে ইংল্যান্ডের হার্বার্ট সাটক্লিফেরও। হবস, হ্যামন্ড ও সাটক্লিফ আগের শতাব্দীতেই ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁরাও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোহলির চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানেরই সেঞ্চুরি সবচেয়ে বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। এ তালিকায় সবার ওপরে রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়কের ৪১ টেস্ট সেঞ্চুরির ২৩টিই দেশে। এখনো টেস্ট খেলছেন, এমন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি স্টিভেন স্মিথের—১৬টি। ৩৫ বছর পেরোনো স্মিথ না পারলে অদূর ভবিষ্যতে পন্টিংকে অন্য কারও পক্ষে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে রিকি পন্টিংকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন বিরাট কোহলি
এএফপি

তবে এবারের বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে আর দুটি সেঞ্চুরি পেলেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়া–ভারত টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি সংখ্যায় পন্টিংকে টপকে যাবেন কোহলি। নিজেদের মাঠে ভারতের বিপক্ষে পন্টিং ১৫ টেস্ট খেলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৭ বার।

অস্ট্রেলিয়া–ভারত টেস্টে শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের তালিকায়ও পন্টিংকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে কোহলির। ক্রিকেটের বনেদি সংস্করণে এই দুই দলের লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি রান শচীন টেন্ডুলকারের (৩৬৩০)। পন্টিং দুইয়ে আছেন ২৫৫৫ রান নিয়ে। কোহলির রান ২০৪২। অর্থাৎ পন্টিংকে ছাড়িয়ে যেতে আগামী পাঁচ টেস্টে কোহলির দরকার ৫১৪ রান।

অস্ট্রেলিয়ায় সফরকারী ব্যাটসম্যানের টেস্ট সেঞ্চুরি (শীর্ষ ৫)

২০১৯–২০ মৌসুমে কোহলির অধিনায়কত্বেই এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জেতে ভারত। দলটি এরপর কোহলির নেতৃত্বে জায়গা করে নেয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রের ফাইনালে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩০০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়ার সম্ভাবনা আছে কোহলির। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করতে হবে ৫৭৩ রান।

তবে ব্যাট হাতে কোহলির ফর্ম তাঁর হয়ে কথা বলছে না। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে তাঁর রান ১৯২, ফিফটি মাত্র একটি। তাই বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে একাধিক রেকর্ড গড়া কিংবা মাইলফলক স্পর্শ করা আপাতদৃষ্টে কঠিন মনে হচ্ছে।

বিরাট কোহলির মনোবল সবসময়ই ইস্পাত–দৃঢ়
বিসিসিআই

কিন্তু কোহলি তো কোহলিই। তিনি যে সহজে হাল ছাড়ার মানুষ নন, তা অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেই আবারও দেখিয়ে চলেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, প্রথম টেস্টের ভেন্যু পার্থের অপ্টাস স্টেডিয়ামে আজ প্রথমবারের মতো অনুশীলন করেছেন কোহলি-পন্ত-বুমরা-অশ্বিনরা। এমন সময় বৃষ্টি নামলে সবাই যখন ড্রেসিংরুমের দিকে ছুটেছেন, কোহলি তখনো নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করে গেছেন। একপর্যায়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হলে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।