মাশরাফি–লিটন ১০০, নাজমুল ৫০—বাংলাদেশের কোন টেস্ট অধিনায়কের কত শতাংশ জয়
১৩—সংখ্যাটাকে অনেকে ‘অপয়া’ বলেন। কিন্তু নাজমুল হোসেন সেটা মানবেন কেন! বাংলাদেশের ১৩তম টেস্ট অধিনায়ক তিনি। তাঁর জন্য সংখ্যাটা তো দারুণ পয়া। টেস্ট ক্রিকেটে এক ম্যাচের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বাদ দিলে নাজমুলই যে টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক।
ক্রিকেট খেলাটাই পরিসংখ্যানের। সেই পরিসংখ্যান বলছে, টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও লিটন দাস। অধিনায়ক হিসেবে তাঁদের দুজনেরই জয়ের হার ১০০ শতাংশ! এমন সফল টেস্ট অধিনায়ক হয়তো টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই বিরল।
লিটন টেস্টে বাংলাদেশকে এক ম্যাচে নেতৃত্ব দেন চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব না থাকার কারণে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে পাকাপাকিভাবে কখনো টেস্টের নেতৃত্ব পেলে শতভাগ সাফল্য লিটন ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেটা ভবিষ্যতই বলবে।
কিন্তু পরিসংখ্যান কখনো কখনো মায়াবী বিভ্রম। মাশরাফি আর লিটনের টেস্ট নেতৃত্ব আর সাফল্যের বেলায়ও বিষয়টি অনেকটা সে রকমই। কারণ, দুজনেই যে টেস্টে বাংলাদেশকে একটি করে টেস্টেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাশরাফি তো পুরো টেস্টও নয়
উল্টো ওই টেস্টটা হয়তো তিনি ভুলেই যেতে চাইবেন। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেন্ট ভিনসেন্টে সিরিজের প্রথম টেস্ট। মাত্রই অধিনায়ক হয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু সেটা উপভোগ করতে পারলেন কই! বোলিংয়ের সময় চোটে পড়ে মাঠের বাইরে ছিটকে যান মাশরাফি। ম্যাচের পরের অংশে দলকে নেতৃত্ব দেন সেই সিরিজের সহ–অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এরপর মাশরাফির আর টেস্টই খেলা হয়নি।
লিটন টেস্টে বাংলাদেশকে এক ম্যাচে নেতৃত্ব দেন চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব না থাকার কারণে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে পাকাপাকিভাবে কখনো টেস্টের নেতৃত্ব পেলে শতভাগ সাফল্য লিটন ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেটা ভবিষ্যতই বলবে।
বাংলাদেশের এক টেস্টের অধিনায়ক আছেন আরও একজন, তামিম ইকবাল। সেই ম্যাচটি তিনি হেরেছেন। তামিমের মতোই বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কোনো জয় নেই নাঈমুর রহমান, খালেদ মাসুদ, খালেদ মাহমুদ ও মোহাম্মদ আশরাফুলের।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর অধিনায়ক ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ৭ ম্যাচে, এর ৬টিতেই হার। একমাত্র ড্রটিও বৃষ্টির কল্যাণে। খালেদ মাসুদের নেতৃত্বে খেলা ১২ টেস্টের সব কটিই হেরেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক খালেদ মাহমুদও ৯ ম্যাচের ৯টিই হেরেছেন। অধিনায়ক আশরাফুলের ১৩ টেস্টের ১২টিতে বাংলাদেশ, ড্র করেছে একটি।
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম দিকের অধিনায়কদের মধ্যে জয়ের দেখা পেয়েছেন একমাত্র হাবিবুল বাশার। দলকে ১৮ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে একটি জয় তাঁর, হেরেছেন ১৩টিতে, ড্র করেছেন ৪টি। হাবিবুলের জয়ের হার ৫.৫৫ শতাংশ।
মাশরাফির জায়গায় নেতৃত্ব পাওয়া সাকিব একাধিক মেয়াদে ১৯ টেস্টে অধিনায়কত্ব করে জয় পেয়েছেন মাত্র ৪টিতে, হেরেছেন ১৫টি। জয়ের হার ২১.০৫ শতাংশ। টেস্টে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ৩৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ৭টি জয়ের পাশাপাশি ড্র ৯টি, হেরেছেন ১৮ ম্যাচে। মুশফিকের জয়ের হার ২০.৫৮ শতাংশ। মুশফিকের অধিনায়কত্বেই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ বেশির ভাগ সময় অধিনায়কত্ব করেছেন নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে। ৬ টেস্টের ৪টি হেরেছেন, একটি করে জয় ও ড্র আছে এর সঙ্গে। ২০১৯ সালে ফিক্সিং–কেলেঙ্কারিতে সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন মুমিনুল। তাঁর নেতৃত্বে প্রায় তিন বছরে ১৭ ম্যাচে খেলে বাংলাদেশ জয় পায় ৩টি, ১২টি হারের পাশাপাশি ২টি ড্র। জয়ের হার ১৬.৬৬ শতাংশ।
মুমিনুলের পরই লিটনের এক ম্যাচের নেতৃত্ব পেরিয়ে পাকাপাকিভাবে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব পান নাজমুল। রাওয়ালপিন্ডিতে আজ শেষ হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে তিনি নেতৃত্ব দিলেন ৬টি ম্যাচে। এর মধ্যে ৩টি জয়, ৩টি হার। জয়ের হার ৫০ শতাংশ।
মাশরাফি আর লিটনের এক ম্যাচের নেতৃত্বের সাফল্য বাদ দিলে নিজেদের ২৪ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নাজমুলই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। নাজমুলের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে প্রথমবারের মতো হারিয়েছে বাংলাদেশ, এবার পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ জয় ছাড়িয়ে গেছে সেই সাফল্যকেও।