আইপিএলের শেষ ভাগে এসে প্লে-অফে ওঠার হিসাব-নিকাশ যেন রকেট সায়েন্সের চেয়েও জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ যেমন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে প্রায় অসম্ভব গাণিতিক সমীকরণ মেলাতে মাঠে নেমেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস।
প্লে-অফে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে লক্ষ্ণৌকে কমপক্ষে ৯৬ রানে হারাতে হতো দিল্লিকে। এরপর লিগ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অমঙ্গল কামনা করতে হতো।
ঘরের মাঠ অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে মৌসুমে নিজেদের শেষ ম্যাচে ঋষভ পন্তের দিল্লি জিতেছে ঠিকই। কিন্তু ব্যবধানটা ১৯ রানের। দিল্লির দেওয়া ২০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লক্ষ্ণৌ থেমেছে ১৮৯ রানে।
এ জয়ে পয়েন্ট তালিকার ছয় থেকে পাঁচে উঠে এলেও নেট রান রেট এখনো ঋণাত্মক থাকায় অন্য দলগুলোর ম্যাচের ফল যা-ই হোক না কেন, শীর্ষ চারে উঠে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আজকের হারে লক্ষ্ণৌরও লিগ পর্ব থেকে বিদায় একরকম নিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ, শুক্রবার নিজেদের শেষ ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে জিতলেও সাতে থাকা লোকেশ রাহুলের লক্ষ্ণৌ শীর্ষ চারে উঠে আসতে পারবে না।
দিল্লি জয় আর লক্ষ্ণৌর হারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পর দ্বিতীয় দল হিসাবে প্লে-অফ পর্বে খেলা নিশ্চিত হয়েছে রাজস্থান রয়্যালসের। জস বাটলার-সঞ্জু স্যামসনের রাজস্থানের পয়েন্ট ১৬। শীর্ষে থাকা কলকাতার পয়েন্ট ১৯। আজকের ম্যাচের পর শুধু চেন্নাই সুপার কিংস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ১৬ পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার মানে, ৪ দলের বেশি ১৬ পয়েন্ট অর্জনের সম্ভাবনা না থাকায় ২ ম্যাচ বাকি রেখেই শেষ চার নিশ্চিত হলো রাজস্থানের।
নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে বাজেভাবে হারের পর মালিকপক্ষের বকাঝকা শোনা লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক রাহুল আজ টস জিতে দিল্লিকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার তরুণ প্রতিভা জেইক ফ্রেজার-ম্যাগার্ককে ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই আউট দারুণ কিছুর আভাস দিয়েছিলেন লক্ষ্ণৌর পেসার আরশাদ খান।
কিন্তু অভিষেক পোরেল আর শাই হোপের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে নিমেষেই শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠে দিল্লি। দুজনের ৯২ রানের জুটি স্বাগতিকদের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়।
হোপ ৩৮ রান করে আউট হলেও পোরেল তুলে নেন এবারের আইপিএলে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। শেষ দিকে লক্ষ্ণৌর বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে ফিফটি তুলে নেন ট্রিস্টান স্টাবসও। তাতে দিল্লি ২০০-এর গণ্ডি টপকে যায়।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেই শুরুতেই ইশান্ত শর্মার তোপের মুখে পড়ে লক্ষ্ণৌ। দলটি পাওয়ার প্লেতেই হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট, যার ৩টিই নেন দীর্ঘদেহী পেসার ইশান্ত। এরপর আরেক প্রান্তে ঝড় তুলে লক্ষ্ণৌকে আশা দেখান নিকোলাস পুরান। তবে দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছোঁয়ার পরপরই ব্যক্তিগত ৬১ রানে আউট হয়ে যান পুরান। ম্যাচ তখনই দিল্লির নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
হাল না ছাড়ার মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বোলার আরশাদ এরপরেও লক্ষ্ণৌর জয়ে ক্ষীণ সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন। ৩ চার আর ৫ ছক্কায় অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের গ্যালারি বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ করে রেখেছিলেন।
কিন্তু আরশাদকে বাকিরা সেভাবে সঙ্গ দিতে না পারায় প্রাণ ফেরে গ্যালারিতে। শেষ পর্যন্ত ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন আরশাদ। কিন্তু দল হেরে যাওয়ায় তাঁর বীরত্ব বৃথা যায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দিল্লি ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ২০৮/৪
(পোরেল ৫৮, স্টাবস ৫৭*, হোপ ৩৮, পন্ত ৩৩; নাভিন ২/৫১, বিষ্ণই ১/২৬, আরশাদ ১/৪৫)
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস: ২০ ওভারে ১৮৯/৯
(পুরান ৬১, আরশাদ ৫৮*, পান্ডিয়া ১৮; ইশান্ত ৩/৩৪, স্টাবস ১/৪, অক্ষর ১/২০, খলিল ১/২২, কুলদীপ ১/৩৩, মুকেশ ১/৩৩)
ফল: দিল্লি ক্যাপিটালস ১৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইশান্ত শর্মা (দিল্লি ক্যাপিটালস)।