রোহিত জানেন অস্ট্রেলিয়া কী করতে পারে
লিগ পর্বে ৯ ম্যাচ, সেমিফাইনালসহ মোট ১০ ম্যাচ জিতে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠেছে ভারত। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হয়েছিল টানা দুই হারে, লিগ পর্বে তৃতীয় হয়ে তবেই জায়গা হয়েছিল সেমিফাইনালে।
বিশ্বকাপজুড়ে দাপুটে ক্রিকেটের তুলনা টানলে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বড় ব্যবধানেই এগিয়ে ভারত। আজ আহমেদাবাদে ফাইনাল নিয়ে আয়োজিত রোহিত শর্মার সংবাদ সম্মেলনে তাই এক সাংবাদিক বলেই বসলেন, এই অস্ট্রেলিয়াকে তো দাপুটে দল মনে হচ্ছে না। তবে ভারত অধিনায়ক জানালেন, প্যাট কামিন্সদের তিনি এভাবে দেখছেন না। অস্ট্রেলিয়া কী করতে পারে, সেই ধারণা তাঁর আছে।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ২০ বছর পর। ২০০৩ সালে তারকায় ঠাসা রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া দল ছিল ‘অজেয়’, ভাবা হতো, কোনো দলই তাদের হারাতে পারবে না। রোহিতের কাছে সংবাদকর্মীরা জানতে চান, এবার ভারতের দলটাকে সেই অস্ট্রেলিয়ার মতো মনে হচ্ছে কি না, এমনকি সেটা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও?
রোহিত সোজাসুজিই বিষয়টি নাকচ করে দেন। ‘অজেয়’ থাকার চেয়ে ম্যাচের দিন মাঠে নেমে ভালো খেলাই বড় বিষয় বলে মন্তব্য তাঁর, ‘মাঠে নেমে ভালো ক্রিকেট খেলতে হয়। তাই গত ১০ ম্যাচে যা করেছি, সেসব নিয়ে ভাবছি না। হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাসের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ। তবু আগামীকাল কোনো ভুল করলে গত ১০ ম্যাচে যা করেছি, সব জলে যাবে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে না ভেবে শান্ত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সংবাদ সম্মেলনে রোহিতকে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করা হয় অস্ট্রেলিয়া নিয়ে। প্যাট কামিন্সের দলকে প্রভাবজাগানিয়া মনে না হলেও তাঁরা পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন—এই ব্যাপারটি আলাদা চাপ তৈরি করেছে কি না? রোহিতের উত্তর, ‘দলটা প্রভাবজাগানিয়া নয়, এই কথার সঙ্গে আমি একমত নই। তারা নিজেদের সর্বশেষ ৮ ম্যাচের সব কটিই জিতেছে। আর ভালোও খেলেছে। তাই (ফাইনালে) প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা দারুণ হবে। দুই দলই ফাইনালে ওঠার যোগ্য এবং আমরা জানি অস্ট্রেলিয়া কী করতে পারে।’
ভারত সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ২০১১ সালে, এম এস ধোনির নেতৃত্বে সেটা জিতেছেও। তবে রোহিত সেই দলে জায়গা পাননি। এখন এক যুগ পর সেই রোহিতই ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন আরেকটি ফাইনালে। এ অনুভূতি কেমন, দীর্ঘ এই ১২ বছরের অভিযাত্রাই–বা কেমন ছিল?
নতুন বলকে পিটিয়ে ছাল ছাড়া করতে রোহিত যতটা নির্মম, ২০১১ সালের সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে ঠিক ততটাই যেন নরম! কথাতেই বোঝা গেল, এক যুগ আগের ঘা এখনো শুকায়নি, ‘আমি অতীতে ফেরত যেতে চাই না। সময়টা খুবই আবেগময় ছিল। আমি নিশ্চিত, সবাই সে সম্পর্কে জানেও। খুব কঠিন সময়।’ এটুকু বলে রোহিত যেন বোঝাতে চাইলেন, ফাইনালের এই আনন্দলগ্নে কেন খামাখা হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর অভিলাষ?
কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনাল বলেই রোহিত না চাইলেও এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতেই হতো। সেটুকু বলার পর ভারত অধিনায়ক ফিরলেন বর্তমানে, ‘এখন নিজেকে সুখী লাগছে। এমন একটা মঞ্চ পর্যন্ত এসেছি, যেখানে আমার নেতৃত্বে দল ফাইনাল খেলবে। এমন কিছু হবে, তা কখনো ভাবিনি। তবে মনেপ্রাণে চাইলে ইচ্ছা পূরণ হয়, বড় স্বপ্নও দেখতে হয়।’
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আগামীকাল বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ভারত। ২০১১ সালেই সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। এরপর বিশ্বকাপ তো বটেই, ২০১৩ সালের পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টও জিততে পারেনি দলটি। রোহিত শর্মা তাই এবারের ফাইনালের গুরুত্বটা ভালোই টের পাচ্ছেন। বুঝিয়েও বললেন সে কথা, ‘আমি গুরুত্বটা জানি। তাই শান্ত ও ফুরফুরে মেজাজে আছি। ২০১১ সালে কী ঘটেছিল কিংবা আগামীকাল কী হবে, তা ভেবে আবেগপ্রবণ হতে চাই না। এই বিশ্বকাপ শুরুর সময় (দলের ভেতর) যে পরিবেশ তৈরি করেছিলাম, (ফাইনালে) সেটারই পুনরাবৃত্তি করতে চাই। সবাই ভালো ফর্মে আছে। এটা ধরে রাখতে চাই। যেটা বলে এসেছি, নিজেদের বড় কিছু মনে করতে চাই না, আবার ছোটও ভাবতে চাই না। ভারসাম্যটা ধরে রেখে কাজটা ঠিকঠাকমতো করতে চাই।’
আইসিসি ইভেন্টে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে রোহিতের। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন, জিতেছেন শিরোপাও। রোহিত তখন ২০ বছরের তরুণ এবং সেই ফাইনালের আগে অবশ্যই অধিনায়ক ধোনির মন্ত্রণা পেয়েছিলেন—সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গ তুলে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এবারের ফাইনালে ধোনির সেই দায়িত্ব তো তাঁর কাঁধে বর্তেছে। টিম মিটিংয়ে কিংবা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাপচারিতায় সবাইকে কী বার্তা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন?
ফাইনালে টিম মিটিংয়ে কী কথা হয়েছে, সেসব কোনো অধিনায়কই বলতে চান না। রোহিতকেও উত্তরে কিছুটা নিরুত্তাপই লেগেছে, ‘তেমন আলাদা কিছু নয়। যেটা আপনাদের বলেছি, আমরা যেভাবে খেলে এসেছি, সেভাবেই খেলতে চাই। আলাদা কোনো বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’ রোহিত এরপর জানান, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ধোনি আলাদা কোনো বার্তা দেননি দলকে। সে বিশ্বকাপের সঙ্গে একটি মিলও বললেন, ‘(২০০৭ সালে) আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম, ফাইনালও সেভাবেই খেলেছি।’