নাজমুলরা আজ ১৮০ করতেই পারেন, তবে দিল্লি বহুদূর

লিটন আজ কেমন করবেন?বিসিসিআই

‘দুশমনি কোরো না প্রিয়তম...।’

নাজমুল হোসেন চাইলেও এমন কোনো কথা বলতে পারছেন না। কিংবা বললেও লাভ নেই। চারদিকে শুধুই দুশমন! অনেকটা ২০১৪ সালে টেলিভিশনে বহুল প্রচারিত ‘এখানেই ডটকম’–এর সেই বিজ্ঞাপনের চরিত্র প্রতীকের মতো। প্রতীক স্মৃতি হারানো নিজের সঙ্গীকে এক লাইন গান শুনিয়ে স্মৃতি ফিরিয়েছিল।

নাজমুল সেটাও পারছেন না। সতীর্থদের যা–ই বলছেন না কেন, টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামলে সবাই যেন স্মৃতিহারা সেই সঙ্গী! প্রস্তুতি যেমন কিংবা যত দিনেরই হোক, ম্যাচে গিয়ে কিছুই মনে পড়ে না।

বেচারা নাজমুল নিজেও পড়েছেন বিপদে। প্রথম ম্যাচ শেষে একটা সত্যি কথা বলে দিয়েছেন, ‘আমরা জানি না কীভাবে ১৮০ করা যায়।’ এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করা সেই অধিনায়ককে সতীর্থদের নিয়ে আজ পরের ম্যাচ যেখানে খেলতে হবে, সেই মাঠের চরিত্র শুনলে তো নাজমুলের আবার আঁতকে ওঠার কথা।

১৩৪
গত আইপিএলে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে হওয়া ৫ ম্যাচে ছক্কার সংখ্যা

তবে নাজমুল এই মাঠের পরিসংখ্যান জানেন না, সেটা ভাবলে সম্ভবত ভুল হবে। মাঠে নামলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন না, সেটা ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু যে মাঠে খেলতে নামবেন, সেই মাঠের অতীত জানবেন না, তা হয় কীভাবে!

দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হয়েছে ২০২২ সালে। সেই ম্যাচে ৪ উইকেটে ২১১ রান করেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারত জিততে পারেনি। ৫ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে জিতেছিল প্রোটিয়ারা।

আরও পড়ুন

সাম্প্রতিক সময়ে সেখানকার উইকেট কেমন, সেটা বুঝতে হলে আইপিএলে তাকাতে হবে। ২০২৪ আইপিএলে এখানে ৫টি ম্যাচ হয়েছে। যেখানে ১০ ইনিংসের ২টিতে হয়েছে ২৫০–এর বেশি রান। সর্বোচ্চ ২৬৬, দিল্লির বিপক্ষেই তুলেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৫৭।

মজার ব্যাপার, দিল্লির ২৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সেদিন করেছিল ২৪৭। সব মিলিয়ে ৮টিতেই রান হয়েছে ২০০-এর বেশি, অন্য দুটির একটিতে ১৯৯, আরেকটিতে ১৮৯। এদিকে নাজমুলের হয়েছে আরেক জ্বালা। দলের ব্যাটিং সামর্থ্যে তাকিয়ে মুখ ফুটে দুই শ রানের কথাও বলতে পারেন না। ওদিকে অরুণ জেটলির পরিসংখ্যানে তাকিয়ে কেউ কেউ হয়তো এখনই রসিকতা করে বলছেন, দিল্লি অনেক দূরের পথ।

গত আইপিএলে সর্বোচ্চ ৪২টি ছক্কা মেরেছিলেন অভিষেক শর্মা
এএফপি

এবার আইপিএলে দিল্লির এই মাঠে ৫ ম্যাচে ছক্কা হয়েছে ১৩৪টি, চার ১৯৪টি। মোট রান উঠেছে ২১৫১। অর্থাৎ এর মধ্যে ১৫৮০ রানই এসেছে চার–ছক্কা থেকে। এখানেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও ট্রাভিস হেড দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে পাওয়ারপ্লেতেই (প্রথম ৬ ওভারে) ১২৫ রান তুলেছিলেন।

অভিষেক গত আইপিএলে এই মাঠে একটি ম্যাচেই খেলেছিলেন। বল খেলেছিলেন মাত্র ১২টি। এই দুই ওভারে ছক্কা মেরেছিলেন ৬টি, চার ২টি। ৩৮৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৪৬। সেই অভিষেক আছেন ভারতীয় দলে।

আরও পড়ুন

অভিষেক ভুলে সূর্যে তাকান। অভিষেক না হয় ঝড় তুলে দ্রুত বিদায় নেবেন, সূর্য তো সেটা করবেন না। তিনি ঝড়ও তুলবেন, উইকেটেও থাকবেন। সূর্যর বাধা টপকে গেলে আবার আছেন হার্দিক পান্ডিয়া। এখানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পান্ডিয়া করেছিলেন ১২ বলে ৩১।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেছিলেন অপরাজিত ১৬ বলে ৩৯। এর মধ্যে তাসকিনের বলে একটা আপার কাট মেরে বলের দিকেও তাকাননি। চুইংগাম চিবোতে চিবোতে তাকিয়ে ছিলেন দুই হাতে মুখ লুকিয়ে ফেলা তাসকিন আহমেদের দিকে। ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখা পান্ডিয়া কতটা আত্মবিশ্বাসী, এটুকুতেই স্পষ্ট।

দিল্লিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ হন ম্যাথুস। সেই ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ।
এএফপি

দিল্লিতে মাঠে নামার আগে প্রত্যাশার চাপও আছে কিন্তু। দিল্লির এই মাঠে নাকি বাংলাদেশ হারেই না। না মানে, পরিসংখ্যানই বলছে এমন কথা। এখানে এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচই খেলেছে বাংলাদেশ, যার একটি টি-টোয়েন্টি, অন্যটি ওয়ানডে।

২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতের শক্তিশালী দলকে একবার হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন অবশ্য দিল্লির উইকেটের ধরন ছিল অনেকটা মিরপুরের মতো।

গত ম্যাচে ১৬ বলের ইনিংসে ৫ চার ২ ছয় মেরেছেন হার্দিক পান্ডিয়া
বিসিসিআই

অন্যটি গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে, শ্রীলঙ্কাকে সে ম্যাচে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তাহলে নাজমুলের জন্য হিসাবটা কী দাঁড়াল? একদিকে পরিসংখ্যানে তাকিয়ে জেতার চাপ, অন্যদিকে ব্যাটিং–স্বর্গে ভারতের ব্যাটসম্যানের কাছে চিড়েচ্যাপটা হওয়ার ভীতি। এ যেন শাঁখের করাত! বেচারা নাজমুল যাবেন কোথায়!

জিম্বাবুয়ের কাছে যেতে পারেন। ভারতকে হারানোর অনুপ্রেরণা এই মুহূর্তে শুধু জিম্বাবুয়েই দিতে পারবে। কারণ, চলতি বছরে ভারত এখন পর্যন্ত ২০ টি-টোয়েন্টি খেলেছে। এর মধ্যে হেরেছে একটি ম্যাচে, সেটা এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল ভারত। বাংলাদেশ কি সেই জিম্বাবুয়ে হতে পারবে?

আরও পড়ুন