ব্রিসবেন টেস্ট: ২২ রানে পিছিয়ে ইনিংস ঘোষণায় চমক অস্ট্রেলিয়ার
মোট ১১ উইকেটের পতন। কেভিন সিনক্লেয়ারের স্মরণীয় অভিষেক। ২২ রানে পিছিয়ে থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস ঘোষণা! ব্রিসবেনে দিবা-রাত্রির টেস্ট সাদা পোশাকে খেলা হলেও আজ দ্বিতীয় দিনটা গোলাপি বলের মতোই রঙিন হয়ে উঠেছিল। তাতে দিনের খেলা শেষে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ সেশনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ উইকেটে ১৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে ক্রেইগ ব্রাফেটের দল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৫ রানের লিড নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দিনের ঘটনাগুলো ভেঙে বলা যাক। ৮ উইকেটে ২৬৬ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছিল সফরকারী দল। আজ সকালের সেশনে ১৯.২ ওভার টিকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস। বাকি ২ উইকেট হারিয়ে মোট ৩১১ রানে অলআউট হয় তারা।
এই ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষিক্ত সিনক্লেয়ারের লড়াকু অর্ধশতকে (৫০) ভর করে তিন শ পার হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২১৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে নামেন ২৪ বছর বয়সী এই স্পিনার। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখলেন। তবে সিনক্লেয়ার-আনন্দের এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে (২৮৯/৯ ডিক্লেয়ার) উসমান খাজাকে আউট করে দর্শনীয় ডিগবাজিও দিয়েছেন!
অস্ট্রেলিয়ার শুরু ছিল যাচ্ছেতাই। উল্টোভাবে বললে, কেমার রোচ ও আলজারি জোসেফের তোপের সামনে দাঁড়াতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার। ইনিংসের প্রথম ৫ ওভারে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ডিনার বিরতিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে হ্যাটট্রিকের সুযোগও পেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান পেসার রোচ।
ওপেনার স্টিভ স্মিথকে প্রথম ওভারে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন। পরের ওভারে মারনাস লাবুশেন ফিরেছেন জোসেফের দারুণ এক ডেলিভারিতে। উঠে আসা বল খোঁচা মেরে লাবুশেনের আউট হওয়ায় অবশ্য সিনক্লেয়ারের অবদানই বেশি। চতুর্থ স্লিপে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। পঞ্চম ওভারের শেষ দুই বলে ক্যামেরন গ্রিন ও ট্রাভিস হেডকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুবাস পাচ্ছিলেন রোচ।
নিজের পরের ওভারে অবশ্য তার দেখা আর পাননি। আর দ্বিতীয় সেশন থেকেই লড়াই শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। যদিও দ্বিতীয় সেশনে সপ্তম ওভারে জোসেফের বলে মিচেল মার্শকেও হারিয়ে গভীর বিপদে পড়েছিল স্বাগতিকেরা। কিন্তু ঠিক এরপরই প্রতি আক্রমণ শুরু করেন অ্যালেক্স ক্যারি। তাঁর ব্যাটিং দেখে কারও কারও অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে মনে পড়তে পারে।
৭৫ রান করে আউট হওয়া ক্যারি উসমান খাজার সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৯৯ বলে ৯৬ রানের জুটি গড়েন। এখানে খাজার অবদান ৫০ বলে ২২ আর ক্যারির ৪৯ বলে ৬৫! ১ ছক্কা ও ৯ চারে সাজানো এই ইনিংসে ৬৫ রানে আউট হন ক্যারি। এরপর খাজার সঙ্গে কামিন্সের অষ্টম উইকেটে ৮১ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়। ৭৩ বলে ৬৪ রান করা কামিন্সের অপরাজিত ইনিংসটা নিশ্চিতভাবেই বিরুদ্ধ-স্রোতে দাঁড়িয়ে অধিনায়কোচিত।
সিনক্লেয়ারের কথা বলা হলো না। খাজা আউট হয়েছেন স্লিপে, সিনক্লেয়ারের অফ স্পিনে। টেস্টে প্রথম উইকেট পাওয়ার আনন্দে মাঠেই জিমন্যাস্টদের মতো কয়েকটি ডিগবাজি দেন সিনক্লেয়ার।
নাথান লায়নের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েন কামিন্স। লায়ন আউট হওয়ার ৯ উইকেটে ২৮৯ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস থেকে তখনো তাঁরা ২২ রানে পিছিয়ে। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, কন্ডিশনকে কাজে লাগাতে এত দ্রুত ইনিংস ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, এরপর ২২ রানে পিছিয়ে থাকতে ইনিংস ঘোষণা—অস্ট্রেলিয়ান ঘরানার ক্রিকেটই বটে!
তবে অল্প সময়েই কন্ডিশন একটু হলেও কাজে লাগিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে তেজনারায়ন চন্দরপলকে তুলে নেন পেসার জশ হ্যাজলউড। তিনি আউট হওয়ার পর শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের খেলা। অন্য প্রান্তে ৩ রানে অপরাজিত অধিনায়ক ব্রাফেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১০৮ ওভারে ৩১১ (সিনক্লেয়ার ৫০, জোসেফ ৩২; স্টার্ক ৪/৮২, হ্যাজলউড ২/৩৮, লায়ন ২/৮১)।
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৩ ওভারে ২৮৯/৯ ডিক্লেয়ার (খাজা ৭৫, ক্যারি ৬৫, কামিন্স ৬৪* মার্শ ২১, লায়ন ১৯ ; রোচ ৩/৪৭, জোসেফ ৪/৮৪, শামার ১/৫৬, সিনক্লেয়ার ১/৫৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৭.৩ ওভারে ১৩/১ (ব্রাফেট ৩*, চন্দরপল ৪ ; হ্যাজলউড ১/২)।
—দ্বিতীয় দিন শেষে।