শেন ওয়ার্নের পুরোনো গুদাম থেকে যা খুঁজে পেলেন তাঁর ছেলে
সর্বকালের সেরা লিগ স্পিনার—শেন ওয়ার্নের এই তকমা নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির ক্রিকেটের পর গলফ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল, এটাও অনেকের জানা।
সুযোগ পেলেই তিনি গলফ কোর্সে ছুটে যেতেন। যুক্তরাষ্ট্রের অগাস্টায় মাস্টার্স টুর্নামেন্টে অংশও নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়ার পর গলফের পেছনে আরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন ওয়ার্ন। বিশ্বের নানা প্রান্ত চষে বেড়িয়ে সংগ্রহ করেছেন গলফের অনেক স্মারক ও সরঞ্জাম। সেগুলো নিজের সংগ্রহশালায় যত্ন করে রেখেও দিয়েছেন।
সম্প্রতি সেখান থেকেই কয়েক শ গলফ ড্রাইভার্স, পুটার্স ও ব্যাগ খুঁজে পেয়েছেন শেন ওয়ার্নের ছেলে জ্যাকসন ওয়ার্ন। আজ অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ৭–কে বিষয়টি জানিয়েছেন জ্যাকসন।
গত বছরের ৪ মার্চ থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওয়ার্ন। বাবার মতো পরিণতি যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে তাঁর তিন সন্তান সামার, জ্যাকসন ও ব্রুক হৃদ্রোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি শেন ওয়ার্ন লিগ্যাসি (এসডব্লুএল) নামের একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন।
আজ ওয়ার্নের ঘরের মাঠ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়া–পাকিস্তানের বক্সিং ডে টেস্ট শুরু হয়েছে। টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিকে (৭০৮ উইকেট) স্মরণ করতে এমসিজিতে বিনা মূল্যে দর্শকদের হৃৎপিণ্ড, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্টেডিয়ামের ২৩টি জায়গায় স্থাপন করা হেলথ স্টেশনে মাত্র চার মিনিটেই এসব পরীক্ষা করতে পেরেছেন দর্শকেরা। এ ছাড়া ওয়ার্নের ৩৫০ নম্বর সাদা ফ্লপি হ্যাটের সঙ্গে মিল রেখে স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে দর্শকেরা তাঁদের পরিহিত ক্যাপ মাথা থেকে খুলে ওপরে তুলে ধরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
শেন ওয়ার্ন লিগ্যাসি ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি উদ্বোধন করতে গিয়ে বাবার ক্রীড়াপ্রেম নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন তাঁর ছেলে জ্যাকসন। জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি ও তাঁর দুই বোন সামার ওয়ার্ন ও ব্রুক ওয়ার্ন বাবার পুরোনো গুদাম ঘরে গিয়ে গলফের বিশাল সংগ্রহ আবিষ্কার করেন, ‘আমরা তাঁর গুদামঘরে ঢুকেছিলাম। ঘরটা অসংখ্য জিনিসে ভরা। ঘরে ঢুকে আমরা আশ্চর্য হয়েছি। শুধু সংগ্রহের পর সংগ্রহ করে গেছেন। সেখানে সম্ভবত ৩০০ ড্রাইভার্স, ৪০০ পুটার্স ও অন্তত ৫ কোটি গলফ ব্যাগ আছে। আমি মজা করছি না। তাঁর সংগ্রহের প্রাচুর্য দেখলে সে রকমই মনে হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে ২৩ নম্বর জার্সি পরে খেলতেন ওয়ার্ন। সে কারণেই এমসিজির ২৩টি জায়গায় হেলথ স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জ্যাকসন, ‘আমরা ঠিক ২৩টি স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্র স্থাপন করেছি। কেউ যদি খেলা দেখার জন্য টিকিট না–ও পেয়ে থাকেন, তাঁদের জন্যও স্টেডিয়ামের বাইরে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মানে, আপনি যদি বাসায় বসে টিভিতে খেলা দেখে থাকেন, তাঁরাও এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন।’
হৃৎপিণ্ড পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে মানুষের মনে যে ভুল ধারণা জন্মেছে, সেটাও ভেঙে দিতে চান জ্যাকসন, ‘বহু মানুষ মনে করে থাকেন, হৃৎপিণ্ড পরীক্ষার সময় কাপড় খুলতে হয় কিংবা রক্ত দিতে হয়। আসলে এসবের দরকার পড়ে না। চার মিনিটেরও কম সময়ে পরীক্ষা করানো যায়। আপনি শুধু হ্যান্ডেল বারগুলো আঁকড়ে ধরুন এবং স্লিভটি পরে নিয়ে বাহু ভাঁজ করে সংকোচন করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখতে পারবেন আপনার জীবনধারায় কী পরিবর্তন আনতে হবে অথবা কী যোগ করতে হবে।’
সন্তানদের জনসেবামূলক কাজগুলো ওয়ার্ন ওপার থেকে দেখে খুশি হয়েছেন বলে মনে করেন জ্যাকসন, ‘সবাই জানে, বাবা এ ধরনের কাজ কতটা ভালোবাসতেন। এমসিজির সবচেয়ে বড় স্ট্যান্ডটা তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে, যেটা দক্ষিণ গোলার্ধেরও সবচেয়ে বড়। আমার মনে হয়, তিনি এসব দেখে হাসছেন।’