‘ওয়াসিম-ওয়াকারের চেয়েও প্রতিভাবানদের হারিয়েছে পাকিস্তান’
ট্যাক্সিতে উঠতেই উৎসাহী চালকের প্রশ্ন, ‘আপনারা ক্রিকেটের লোক?’ বুঝতে পারি গলায় ঝোলানো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখেই ভদ্রলোকের এই প্রশ্ন। হ্যাঁ–সূচক উত্তর দেওয়ার পর ক্রিকেট নিয়েই কথা চলতে থাকে। জানতে পারলাম ভদ্রলোকের নাম মোহাম্মদ ইজাজ ইব্রাহীম। পাকিস্তানের পেশোয়ারে বাড়ি। জীবিকার টানে দুবাই শহরে ট্যাক্সি চালান।
তবে ক্রিকেট নিয়ে তাঁর আগ্রহের আরেকটি কারণ, তিনি নিজেও ছিলেন পেশাদার ক্রিকেটার। পেশোয়ারের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন ১৯৯৬ সালে। এরপর ডিভিশন ক্রিকেট ও ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। এর পর থেকে দুবাইতে ট্যাক্সি চালান।
আমিরাতে এসেও কাজের ফাঁকে টুকটাক ক্রিকেট খেলেছেন ইব্রাহীম। এশিয়া কাপের খোঁজখবরও রাখছেন নিয়মিত। নিজেদের দেশ পাকিস্তান ফাইনালে পৌঁছে গেছে, এ নিয়ে ইব্রাহীম বেশ গর্বিত। কথার ফাঁকে লম্বা সময় পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতার গল্পও শুনিয়েছেন। পাকিস্তান ক্রিকেটের অবিশ্বাস্য প্রতিভার বিষয়টি বারবার বলতে শোনা গেল ইব্রাহীমকে, ‘আমরা যখন খেলা শুরু করি, তখন জাতীয় দলে ওয়াসিম-ওয়াকাররা খেলত। বিশ্বাস করুন, ওদের চেয়েও আরও ভালো ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে বেড়াত। এত প্রতিভা পাকিস্তান ক্রিকেটে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে সহজে ওপরে ওঠা যেত না। অনেক দুর্দান্ত ক্রিকেটার তাই হারিয়ে গেছে।’
শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও অনেক পাকিস্তানি প্রতিভা হারিয়ে গেছেন নানা কারণে। মোহাম্মদ আসিফের উদাহরণ টেনেই ইব্রাহীম বললেন, ‘কী বোলারই না ছিল আসিফ! তার মতো বোলার পাকিস্তান আগে কখনো পায়নি। ভবিষ্যতেও পাবে বলে মনে হয় না। চাইলেই ব্যাটের পাশ দিয়ে অথবা ভেতর দিয়ে বল ঢুকিয়ে স্টাম্প ভাঙতে পারত। অবিশ্বাস্য প্রতিভা।’
তবে এখন সময় পাল্টেছে বলেই মনে করেন ইব্রাহীম। আগের মতো পাকিস্তানি প্রতিভারা এখন আর হারিয়ে যায় না। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক খেলা হয়। পাকিস্তান সুপার লিগও (পিএসএল) ভালো করছে। ইব্রাহীমের কথা, ‘আগে আমরা নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ পেতাম না। এখন অনেক খেলার কারণে সেটা হচ্ছে। এখন কাঠামোও যথেষ্ট পেশাদার। আমরা তো আগে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ঘর চালাতে পারতাম না। এখন সেটা সম্ভব।’
নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে ইব্রাহীম খুব বেশি কিছু বলতে চাইলেন না। পেশোয়ার ডিভিশন দলের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতেন। শোয়েব মালিক, কায়সার আব্বাসদের মতো জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বিপক্ষে খেলেছেন। এখনো সুযোগ পেলে ব্যাট-প্যাডে নেমে যান। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে নাকি তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা আছে।
এখন ইব্রাহীম অপেক্ষায় আছেন দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের জন্য। ১১ সেপ্টেম্বর ইব্রাহীমের দল পাকিস্তান খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের পক্ষেই বাজি ইব্রাহীমের, ‘পাকিস্তান এখন দল হিসেবে খেলছে। এক-দুইজন খেলছে না। দেখুন, বাবর রান পাচ্ছে না। কিন্তু বাকিরা কিন্তু সেই শূন্যতা বুঝতে দিচ্ছে না। এটাই দলের ছবিটা ফুটিয়ে তুলছে। শ্রীলঙ্কা এদিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে। ফাইনাল ম্যাচটা দারুণ হবে আশা করছি।’