‘ব্যাটিং এনে দেবে স্পনসর, বোলিং দেবে শিরোপা’
এ সময়ে বোলারদের কাজ সহজ নয়, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আর এবারের আইপিএল তো বোলারদের জন্য হয়ে উঠেছে বিভীষিকা। গতকাল দিল্লির বিপক্ষে আরেকবার রেকর্ড গড়েছে হায়দরাবাদ। দলটির অধিনায়ক পেসার প্যাট কামিন্স নিজেই বলছেন, তাঁর একটা অংশ দলের এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্সে রোমাঞ্চিত। আবার আরেকটা অংশ ভাবনায় পড়ে গেছে, সেখানে যে বোলিং করতে হবে তাঁকেও!
ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতা, উইকেটের ধরন তো আছেই, আইপিএলে এখন আছে ইমপ্যাক্ট বদলির নিয়মও। যে নিয়ম কাজে লাগিয়ে প্রায় প্রতি দলই সুযোগ পাচ্ছে বাড়তি একজন করে ব্যাটসম্যান খেলানোর। বিশ্লেষকদের মতে, লোয়ার অর্ডারে বিশেষজ্ঞ একজন ব্যাটসম্যানের উপস্থিতিতে ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা এখন আরও মেলে ধরছেন নিজেদের, খেলছেন শট। তবে ভুবনেশ্বর কুমার মনে করিয়ে দিলেন, দিন শেষে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে দরকার বোলারদেরই।
দিল্লির বিপক্ষে কাল প্রথম ৬ ওভারে ১২৫ রান তুলে টি-টোয়েন্টির নতুন রেকর্ড গড়েছে হায়দরাবাদ। বিশাল লক্ষ্যে দিল্লির শুরুটাও হয়েছিল দারুণ, পাওয়ারপ্লেতে তারা তোলে ৮৮ রান। তবে এরপর আর পেরে ওঠেনি দিল্লি। এমন ম্যাচে বোলাররা মার খাবেন, সেটি মেনেই নিয়েছেন ভুবনেশ্বর। হায়দরাবাদ পেসার বলেছেন, ‘এত রান ডিফেন্ড করতে গেলে হয় আপনি অনেক রান দেবেন, অথবা উইকেট পাবেন। আমরা মেনে নিয়েছি এত রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে আমরা অনেক রান দেব। কিন্তু পরিকল্পনা সব সময় বাস্তবায়ন করাই লক্ষ্য ছিল।’
এমন পরিস্থিতিতে পাদপ্রদীপের আলো যে ব্যাটসম্যানদের ওপরই, এ মৌসুমে প্রথম ৭ ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া ভুবনেশ্বর জানেন সেটিও। তাঁর মতে, ‘অনেক বছর পর আমাদের ব্যাটসম্যানরা এভাবে কার্যকর হয়ে উঠছে। বোলিং বিভাগ হিসেবে পেছনের সারিতে থাকতে আপত্তি নেই, ১৮০ বা এমন রান ডিফেন্ড করতে গেলে মনে হবে কমই।’
এ মৌসুমে তিনবার আগে ব্যাটিং করে ২৫০ পেরিয়েছে হায়দরাবাদ, জিতেছে তিনটি ম্যাচই। আগে ব্যাটিং করে এখন পর্যন্ত তাদের সর্বনিম্ন স্কোর ১৬২, যেটি ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ হয়েছে হায়দরাবাদ। তবে এখন পেছনের সারিতে থাকলেও তাঁরাই ‘মূল’ চরিত্র দীর্ঘ মেয়াদে, ভুবনেশ্বর মনে করেন সেটিও, ‘বোলিংয়ের তো একটা কিছু আছে…কেউ বলছিল, ব্যাটিং আপনাকে স্পনসর এনে দেবে কিন্তু বোলিং আপনাকে শিরোপা এনে দেবে। এ মুহূর্তে আমরা যেমন বোলিং করছি, সেটি স্কোরকার্ডে খারাপ দেখালেও আমাদের জন্য বেশ ভালোই।’
কিন্তু বোলারদের এই ভূমিকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কতটা উৎসাহী করে তুলবে ক্রিকেটে এ ভূমিকা বেছে নিতে, সে প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন অবশ্য বলেছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, ‘আমি মজা করে বলতেই পারি, অবসর নিয়েছি বলে এখন আর বোলিং করছি না, ফলে আমি খুশি। কিন্তু…বোলার হওয়াটা সব সময়ই দারুণ। আপনি যদি নিজেকে সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে আপনি নশ্বরদের মধ্যে ঈশ্বর হয়ে উঠবেন, যাকে সবাই চায়। ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবের মধ্যে হয়ে উঠবেন খুনে। (বোলার হওয়ার) আকর্ষণ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনই বেশি।’
স্টেইনের মতো করে কজন ভাববেন, প্রশ্ন সেটিই। কিন্তু ভুবনেশ্বররা যদি হায়দরাবাদকে এনে দিতে পারেন শিরোপা, তাহলে হয়তো প্রমাণিত হবে আরেকবার—বোলাররাই এনে দেন শিরোপা!