ভারত–ইংল্যান্ড: অশ্বিন–জাদেজাদের ঘূর্ণির পর জয়সোয়াল–ঝলক
ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ডেলিভারি, বল হাতে যশপ্রীত বুমরা, স্ট্রাইকে জ্যাক ক্রলি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল খেলারই চেষ্টা করলেন না ইংলিশ ওপেনার, উইকেটকিপার কে এস ভরত বল গ্লাভসে নিলেন কাঁধসমান উঁচু থেকে। পরের বলের দৃশ্যপটও একই।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের উইকেটে বল এভাবে উঠতে দেখে ভুল ভাববেন না! বুমরা বা মোহাম্মদ সিরাজ নন, প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টার্ন আর বাউন্সে দাপট দেখিয়েছেন আসলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা আর অক্ষর প্যাটেলরা। এই তিন স্পিনারের ঘূর্ণিতে ভারতে ‘বাজবল’ খেলার পণ করা ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস থেমেছে ২৪৬ রানে, ওভারপ্রতি ৪–এর কম রান নিয়ে।
ইংল্যান্ড নিজেদের ধারার ক্রিকেট কতটুকু খেলতে পেরেছে, সেই প্রশ্ন জোরালো করে তুলেছে শেষবেলায় ভারতের ব্যাটিং। ১০ ওভারে ৬৮ রান তুলে ফেলা ভারত দিন শেষ করেছে ১ উইকেটে ১১৯ রান নিয়ে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে যশস্বী জয়সোয়াল অপরাজিত ৭০ বলে ৭৬ রানে। সঙ্গে শুবমান গিল ১৪ রানে।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ড ১১ ওভারের মধ্যেই তুলে ফেলে ৫৩ রান। দুই ওপেনার বেন ডাকেট আর জ্যাক ক্রলিকে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করতে দেখে নবম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা আর দশম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আক্রমণে নিয়ে আসেন ভারত অধিনায়ক। দুই স্পিনার আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি। ৫৫ থেকে ৬০—এই পাঁচ রানের মধ্যেই ডাকেট, ক্রলি আর ওলি পোপের উইকেট তুলে নেন অশ্বিন-জাদেজা। এর মধ্যে জাদেজা পোপকে রোহিতের ক্যাচ বানিয়ে ফেরানোর মাধ্যমে জুটির একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেন। ভারতের হয়ে অনিল কুম্বলে-হরভজন সিং জুটির ৫০১ উইকেটের কীর্তি টপকে যান অশ্বিন-জাদেজা।
দুই ভারতীয় স্পিনারের প্রথম সেশনের এই সফলতার অন্যতম কারণ উইকেটের সহায়তা। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শুরু থেকে টার্ন ও বাউন্স পেয়েছেন স্পিনাররা। দ্বিতীয় সেশনে যা আরও বেড়েছে। ৬০ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে চতুর্থ উইকেটে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন জো রুট-জনি বেয়ারস্টো। দুজনের ৫০ ছাড়ানো জুটি ভেঙেছে অক্ষর প্যাটেলের দারুণ ডেলিভারিতে, বেয়ারস্টোর বোল্ড আউটে। এরপর আরেক দফায় ভাঙন ধরে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপে। রুটকে (৬০ বলে ২৯) জাদেজা আর বেন ফোকসকে (২৪ বলে ৪) অক্ষর তুলে নিলে ইংল্যান্ডের স্কোর পরিণত হয় ৬ উইকেটে ১৩৭ রানে।
এখান থেকে টেলএন্ডারদের সঙ্গে ছোট ছোট জুটি গড়ে ইংল্যান্ডের রান আড়াই শর কাছাকাছি নিয়ে যান স্টোকস। শুরুতে খেলেছেন দেখেশুনে। প্রথম বাউন্ডারির জন্য অপেক্ষা করেছেন ৫৩ বল পর্যন্ত। পরের দিকে রান তোলায় মনোযোগী হয়ে হাতও খুলেছেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বুমরার বলে বোল্ড হওয়ার আগে স্টোকসের ব্যাট থেকে আসে ৮৮ বলে ৭০ রান, যে ইনিংসে ছিল ৩টি ছয় ও ৬টি চার।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৬৪.৩ ওভারের ৫১টিই করেন তিন ভারতীয় স্পিনার জাদেজা, অশ্বিন ও অক্ষর। সম্মিলিতভাবে ১৮৯ রান দিয়ে নেন ৮ উইকেট। অন্য ২ উইকেট বুমরার।
দিনের তৃতীয় সেশনে ইংল্যান্ডকে অলআউট করে শেষবেলায় ২৩ ওভার ব্যাট করেছে ভারত। যেখানে অধিনায়ক রোহিতকে এক পাশে রেখে ভারতকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন জয়সোয়াল। বাঁহাতি এই ওপেনার মার্ক উডের করা ইনিংসের প্রথম বলই পাঠান বাউন্ডারিতে। পরের ওভার করতে আসা টম হার্টলির প্রথম বলও সীমানাছাড়া করেন ছয় বানিয়ে। আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা জয়সোয়ালকে থামাতে গিয়ে তৃতীয় ওভারে একটি রিভিউ নষ্ট করে ইংল্যান্ড। পরে অবশ্য রোহিত আর গিলের জন্যও রিভিউ চেয়ে তিনটি রিভিউই খরচ করে ফেলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৬৩ রান খরচ করে উইকেটশূন্য অভিষিক্ত হার্টলি। রোহিতের উইকেট নিয়েছেন জ্যাক লিচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে):
ইংল্যান্ড: ১ম ইনিংসে ৬৪.৩ ওভারে ২৪৬ (ক্রলি ২০, ডাকেট ৩৫, পোপ ১, রুট ২৯, বেয়ারস্টো ৩৭, স্টোকস ৭০, ফোকস ৪, রেহান ১৩, হার্টলি ২৩, উড ১১, লিচ ০*; বুমরা ২/২৮, সিরাজ ০/২৮, জাদেজা ৩/৮৮, অশ্বিন ৩/৬৮, অক্ষর ২/৩৩)।
ভারত: ১ম ইনিংসে ২৩ ওভারে ১১৯/১ (জয়সোয়াল ৭৬*, রোহিত ২৪, গিল ১৪*; উড ০/৯, হার্টলি ০/৬৩, লিচ ১/২৪, রেহান ০/)।