পাকিস্তানের টুর্নামেন্ট, অথচ ফাইনালসহ বেশির ভাগ ম্যাচই শ্রীলঙ্কায়! পাকিস্তানের ক্ষোভ-অভিমানের জন্য এই একটা কারণই যথেষ্ট। তার ওপর টুর্নামেন্ট যত এগোচ্ছে, তাদের জেদি হয়ে ওঠার মতো ঘটনাও তত বাড়ছে। সব মিলিয়ে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল আজ সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে যে পাকিস্তানের সামনে পড়ছে, সেই পাকিস্তান হয়ে উঠতে পারে আহত বাঘ। সামনে যাকে পাবে, ঘাড় মটকাতে চাইবে তারই।
এটা ঠিক যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সর্বশেষ পাঁচ ওয়ানডের হিসাব বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলে। পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। হার শুধু ২০১৯ বিশ্বকাপে লর্ডসে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচে। কিন্তু এরপর গত চার বছরে ওয়ানডের বাংলাদেশ যেমন এগিয়েছে, পাকিস্তানও চলেছে দুর্বার গতিতে। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়েই এখন তারা ১ নম্বর দল। নিজেদের সর্বশেষ ১০ ওয়ানডেতে হার মাত্র ১টিতে।
চলতি এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচেই দেখা গেছে বাবর আজমের দলের আক্রমণাত্মক মানসিকতা। মুলতানে প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ২৩৮ রানের বিশাল জয়, পরের ম্যাচে পাল্লেকেলেতে বৃষ্টি জিততে না দিলেও ভারতকে ২৬৬ রানে অলআউট করে দিয়েছিল পাকিস্তান। দলটার বোলিং ধারের ঝলকানি দেখা গেছে দুই ম্যাচেই। সঙ্গে নেপালের বিপক্ষে অধিনায়ক বাবর আজম ও ইফতিখার আহমেদের সেঞ্চুরি জানিয়ে দিচ্ছে, সামনে যে বাধাই আসুক, ব্যাটে-বলে সব ডিঙিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস এখন সঙ্গী দলটার।
এর মধ্যেই পাকিস্তানের ক্ষোভের আগুনে তুষ ছিটিয়ে দিয়েছে আরেকটি ঘটনা। কলম্বোতে আগামী কয় দিন টানা বৃষ্টির পূর্বাভাসের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রস্তাব দিয়েছিল আজকের পর সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ এবং ফাইনালও কলম্বোর পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার আরেক শহর হাম্বানটোটায় নিয়ে যেতে। বৃষ্টির হাত থেকে খেলা বাঁচাতে এবং টেলিভিশন সম্প্রচারকারীদের দাবির মুখে এটা করতে চেয়েছিল পিসিবি। বৃষ্টির সম্ভাবনা হাম্বানটোটায়ও আছে, তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী সেটা কলম্বোর তুলনায় অনেক কমই হওয়ার কথা।
এসিসির প্রধান জয় শাহকে পাঠানো পিসিবির একটি কড়া চিঠির সূত্রে জানা গেছে, ভারত ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর সেদিনই পাল্লেকেলেতে এ ব্যাপারে এসিসির সঙ্গে এশিয়া কাপের আয়োজক পিসিবির প্রাথমিক আলোচনা হয়ে গিয়েছিল। এরপর আলোচনা এগোতে এগোতে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়েও চলে আসে।
কিন্তু পরশু কলম্বো থেকে টেলিভিশন সম্প্রচার সরঞ্জাম হাম্বানটোটায় স্থানান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার মাত্র ২৭ মিনিটের মধ্যে আসে নতুন সিদ্ধান্ত—হাম্বানটোটায় নয়, কলম্বোতেই হবে এশিয়া কাপের সব ম্যাচ। জয় শাহকে দেওয়া চিঠিতে পিসিবি এমন আচরণকে ‘অপেশাদার’ বলেও মন্তব্য করেছে।
কাল গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং পিসিবির কর্মকর্তাদের মধ্যেও এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা গেল। এসিসি মানে জয় শাহ আর জয় শাহ মানেই যেহেতু ভারত; পুরো ব্যাপারটিকে পাকিস্তান কোন সমীকরণে ফেলছে, সেটি বোধ হয় আর বলে দিতে হবে না। স্বাগতিক হয়েও পাকিস্তান মনে করেছে, এখানে তাদের ইচ্ছার কোনো দাম নেই। এশিয়া কাপ চলছে অন্যের ইশারায়।
বাংলাদেশ শিবিরে অবশ্য পাকিস্তানের এত হিসাব-নিকাশ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাদের কাছে এটাও আরেকটা ম্যাচ, যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকবে জয়ের চেষ্টা। পেসার শরীফুল ইসলাম কাল টিম হোটেল থেকে মুঠোফোনে তাঁর সহজ-সরল ভাষায় সেটাই বলছিলেন। পাকিস্তান হতে পারে বিশ্বের ১ নম্বর ওয়ানডে দল, তবে দিন শেষে লড়াইটা ব্যাট-বলের। বাংলাদেশ তাই এই ম্যাচকে আর দশটা ম্যাচের মতো করেই নিচ্ছে।
অবশ্য গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে খেলা বলেই শরীফুল সতীর্থ বোলারদের একটা বার্তা দিতে চাইলেন—এই উইকেট বোলারদের জন্য হয়ে উঠতে পারে বিপৎসংকুল উপত্যকা, ‘গত ম্যাচে উইকেট একটু ফ্ল্যাট ছিল। বোলারদের জন্যই বেশি চ্যালেঞ্জিং এই উইকেট। এখানে অনেক নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা লাগে। বাজে বোলিংয়ের সুযোগ নেই।’
লাহোরের ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে কালও অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ দল। তবে দুপুরে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের পাশের লাহোর ক্রিকেট একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেছে পাকিস্তান। অনুশীলনের আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পেসার নাসিম শাহর কথায়ও এসেছে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ‘যৌথ’ এশিয়া কাপের প্রসঙ্গ। তবে বিতর্ক এড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘কোথায় খেলছেন, কোন উইকেটে, সেটা ব্যাপার নয়। বোলিং ইউনিট হিসেবে আপনাকে সুশৃঙ্খল বোলিং করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন আছি।’
ভারত পাকিস্তানে কোনো ম্যাচ খেলতে চায়নি বলে এশিয়া কাপ এই প্রথম হচ্ছে দুই দেশ মিলিয়ে। তাতে টুর্নামেন্ট–সংশ্লিষ্ট সবারই ভ্রমণঝক্কি পোহাতে হচ্ছে, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের। নাসিম শাহ এ প্রসঙ্গেও দিয়েছেন মানিয়ে নেওয়ার স্লোগানই।
মানিয়ে নিতে হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ জিতেই সুপার ফোরে উঠে যাওয়া বাংলাদেশকেও। কলম্বো যাওয়ার পর তো বটেই, তার আগে আজ সে কাজটা করতে হবে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামেও।