বিছানায় ট্রফি নিয়ে ঘুমিয়ে কাদের কথা মনে করিয়ে দিলেন নাজমুল

বিছানায় ট্রফিসহ নাজমুলের ঘুমানোর এ ছবিটি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়নাজমুলের ফেসবুক পেজ

সফেদ বিছানায় সোনালি ট্রফি। হাত দিয়ে ট্রফিটি আগলে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন কেউ।

দৃশ্যটিকে চাইলে রূপক উদাহরণে আরও মাধুর্যমণ্ডিত করে তোলা যায়। বিছানার সাদা চাদরটিকে যদি টেস্টের সাদা পোশাকের রূপক ধরা হয়, সোনালি ট্রফি তাহলে সাফল্যের স্বীকৃতি। সে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি, তাঁকে আপনি সিপাহসালারও বলতে পারেন। আর ‘যুদ্ধ’ জয়ের সেই স্মারক তো সিপাহসালার কিংবা সেনাপতির কাছেই থাকবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের ট্রফিটি তাই শোভা পেল বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের শিয়রে।

ছবিটি নাজমুলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে আজ। সকাল ৯টা ৪৪ মিনিটে পোস্ট করা এ ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘শুভ সকাল।’ অবশ্যই তা–ই। গতকাল পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাইয়ের তৃপ্তির ঢেকুর আজ সকাল পর্যন্তও থাকার কথা। সেই ঢেকুর তুলতে তুলতে বাংলাদেশ অধিনায়কের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ছবিটি দেখে কারও কারও লিওনেল মেসিকেও মনে পড়তে পারে!

সেই যে কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা, দেশে ফিরে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত আর্জেন্টিনা দল ঘুমাতে গিয়েছিল স্থানীয় একটি হোটেলে। আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক মেসি রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন ট্রফিটি সঙ্গে নিয়ে। শিয়রে একটি বালিশের ওপর শুইয়ে রেখেছিলেন সোনালি সেই ট্রফি। পরে এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তা ভাইরাল হয়। মেসির সেই ছবি পোস্টের পর থেকেই সম্ভবত কোনো টুর্নামেন্ট জয়ের পর এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার হার বেড়েছে খেলোয়াড়দের মধ্যে। তবে মেসির আগে যে কেউ ট্রফি নিয়ে বিছানায় ছবি তোলেননি সেটাও নয়।

মেসির ওই ছবি পোস্টের পরবর্তী কিছু ঘটনা আগে জানানো যাক। এই তো গত জুনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে বিছানায় স্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন ভারতের তারকা সূর্যকুমার যাদব। গত ২৮ আগস্ট সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলীয় ও ব্যক্তিগত ট্রফি নিয়ে বিছানায় ঘুমানোর ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলেন বাংলাদেশ দলের ফরোয়ার্ড মিরাজুল ইসলাম। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একইভাবে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের ট্রফি নিয়ে ছবি তুলে আলোচনায় এসেছিলেন সেনেগালের অধিনায়ক সাদিও মানে। বিভিন্ন খেলায় সাফল্য তুলে নেওয়ার পর খেলোয়াড়দের এমন ছবি পোস্টের নজির খুঁজলে সম্ভবত আরও পাওয়া যাবে। এবার মেসির সেই ছবি পোস্টের আগের কিছু নজির জেনে নেওয়া যাক।

১৯৭৮ ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়নস লিগ) জয়ের পর এক রাতের জন্য ট্রফিটি নিজের বিছানায় রেখে দিয়েছিলেন লিভারপুল কিংবদন্তি কেনি ডালগ্লিশ। তার পাঁচ বছর আগে ১৯৭৩ সালে সান্ডারল্যান্ডের হয়ে এফএ কাপ জয়ের পর ট্রফিটি বিছানায় রেখে সংবাদপত্র পড়ার ছবি তুলেছিলেন ক্লাবটির কিংবদন্তি ববি কার। বায়ার্ন মিউনিখের ‘দ্য বুল’খ্যাত সাবেক মিডফিল্ডার ফ্রাঞ্জ রথ ১৯৬৭ সালে অধুনালুপ্ত ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ জয়ের পর ট্রফিটি চোখের আড়াল করতে চাননি। তাই ট্রফিটি নিয়েই চলে গিয়েছিলেন বিছানায়।

সাতবার গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সুইডেনের টেনিস কিংবদন্তি ম্যাটস ভিল্যান্ডার আবার এককাঠি সরেস। তিনি নিজের শোবার কক্ষকেই বানিয়ে ফেলেছিলেন ট্রফি রাখার কামরা! টেনিসের কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস ২০০৫ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর বিছানায় ট্রফি রেখে ছবি তুলেছেন। ১৯৮৭ সালে আইবিএফ লাইট-ওয়েল্টারওয়েট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জয়সূচক বেল্টটি নিয়েই ঘুমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক বক্সার টেরি মার্শ। আর বর্তমান বার্সেলোনা তারকা রবার্ট লেভানডফস্কি বায়ার্ন মিউনিখে থাকতে ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে ছবি তুলেছিলেন বিছানায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এর আগে কেউ ট্রফি নিয়ে সম্ভবত বিছানায় ছবি তোলেননি। তথ্যটি সত্য হলে নাজমুলই এই ধারায় বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে প্রথম। কিন্তু শেষ নয়, কারণ ট্রফি তো আরও আসবে!