হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের সংবাদ সম্মেলনকক্ষটা স্মারকে মোড়ানো। বিশাল দেয়ালজুড়ে সাজানো ছবিতে ছবিতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এক পাশের বড় দেয়ালে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের ২০০১ সালের একটি ছবিতে চোখ আটকে গেল। নাঈমুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল সেবার প্রথমবার জিম্বাবুয়ে সফর করে। হিথ স্ট্রিক ছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। গ্রান্ট ফ্লাওয়ার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ডগলাস ম্যারিলিয়ার, ব্রায়ান স্ট্র্যাং, ডিওন ইব্রাহিমের মতো ক্রিকেটাররা সে ছবিটার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
জিম্বাবুয়ের মাটিতে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে সংস্করণে ধবলধোলাই হওয়ার ঘটনা সর্বশেষ সেই সিরিজেই। একই বছর সেই তারকাময় দলটা বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। ঘরের মাঠেও টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র দুই বছরের পুরোনো দলটিকে সব কটি ম্যাচে হারায় জিম্বাবুয়ে। এরপর ঘরের মাঠে কিংবা জিম্বাবুয়ের মাটিতে, বাংলাদেশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে আর ধবলধোলাই করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ২০২২ সালে এসে বাংলাদেশ দল সেই ২০০১–এর সেই ভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি জিতে জিম্বাবুয়ে এর মধ্যেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে। এবার তাদের চোখ ৩-০–এ।
অথচ সেই জিম্বাবুয়ের শানশওকতের সঙ্গে এই জিম্বাবুয়ের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। গত দুই দশকে বাংলাদেশ ক্রিকেট যতটা এগিয়েছে, ঠিক ততটাই হয়তো পিছিয়েছে জিম্বাবুয়ে। দুই দেশের ক্রিকেটের যখন এমন বৈপরীত্য, তখন ২০২২ সালের বাংলাদেশ দলের জিম্বাবুয়ে সফরটা সমর্থকদের ঠিক বিশ্বাসই হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা এটাই। বিজয়ী দলের আত্মবিশ্বাস এখন জিম্বাবুয়ের পক্ষে। অন্যদিকে সিরিজজুড়ে ব্যর্থতায় বাংলাদেশের হাঁটু গেড়ে বসে পড়ার অবস্থা।
তৃতীয় ম্যাচের আগের দিন হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে দুই দলের অনুশীলনের শরীরী ভাষা অনুবাদ করলে অর্থটা এমনই দাঁড়াবে। সকালে জিম্বাবুয়ের পুরো দল মাঠে এলেও আমেজটা ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলনের। ডেভিড হটন যেন পুরো দলকে ছেড়ে দিয়েছেন, যে যা ইচ্ছে করুক। ক্রিকেটাররাও হালকা অনুশীলন করে মাঠ ছাড়েন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দল মাঠে এসেই সরাসরি নেট সেশন শুরু করেছে। মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদ ছাড়া সবাই ছিলেন ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনে ব্যস্ত। দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া দুই নতুন সদস্য ইবাদত হোসেন ও মোহাম্মদ নাঈমের দিকে ছিল কোচদের বাড়তি নজর। মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালও তাঁদের রুটিন কাজ সেরেছেন জাতীয় দলের পেসারদের বোলিংয়ের বিপক্ষে। মাঝমাঠে এনামুল হক সারাক্ষণ ছক্কা মারার অনুশীলন করে গেলেন।
আমরা এই দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নিয়ে কথা বলেছি। সিরিজ হেরেছি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস নেওয়ার জন্য জিততে হবেঅ্যালান ডোনাল্ড
দলের এই ছবিগুলোয় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাই মনে হবে। বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড ম্যাচটাকে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন। ম্যাচটাকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর পরীক্ষা হিসেবেও দেখছেন তিনি, ‘আমরা এই দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নিয়ে কথা বলেছি। সিরিজ হেরেছি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস নেওয়ার জন্য জিততে হবে।’
ম্যাচটা বাংলাদেশের মান বাঁচানোরও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ নয়। তাই ১০ পয়েন্ট অর্জনের লড়াই বলার কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশের যা পাওয়া বা হারানোর আছে, সেটার নাম সম্মান ছাড়া কিছুই নয়।