নেটে ব্যাটিং করেছেন। হাতও ঘুরিয়েছেন বেশ কয়েকবার। যদিও তা প্রায় হেঁটে হেঁটে এসে। বেন স্টোকস খেলবেন কি খেলবেন না, ঝুলিয়ে রেখে একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা তাই খেলতেই পারতেন জস বাটলার। ইংল্যান্ড অধিনায়ক তার ধারেকাছেও গেলেন না। হয় এ ধরনের খেলায় তাঁর বিশ্বাস নেই অথবা প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পরও আত্মবিশ্বাস এমনই উত্তুঙ্গ যে মনে করেছেন, গত বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়কের না খেলার কথা আগেই জানিয়ে দেওয়ায় কিছু আসে-যায় না।
কারণ যেটাই হোক, এতে একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে গেল। পাহাড়ের পশ্চাৎপট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বের অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়াম আজ বিশ্বের সেরা দুই অলরাউন্ডারের লড়াই দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেরা দুই অলরাউন্ডারের একজন বেন স্টোকস হলে আরেকজন কে, এটা কোনো প্রশ্নই নয়। সাকিব আল হাসান অনেক দিনই অলরাউন্ডার হিসেবে বর্তমানের সীমানা ছাড়িয়ে চিরকালীন ইতিহাসের দরজায় কড়া নাড়ছেন। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও ক্রমেই বাড়ছে। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিয়ে যেকোনো ক্রিকেট–বিশেষজ্ঞের কথাই শুরু হচ্ছে সাকিবকে দিয়ে। এউইন মরগান যাতে সর্বশেষ সংযোজন। কাল রোদে পুড়তে থাকা ধর্মশালার গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সাকিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
বেন স্টোকসেরও এমন অনেক অনুরাগী আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই যাঁদের মধ্যে সবার আগে নাম করতে হয় সাকিব আল হাসানের। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বিপ্লব করে ফেলার অনেক আগে থেকেই যিনি স্টোকসে মুগ্ধ। এতটাই যে ‘স্টোকস না সাকিব’, এই আলোচনাতেই যেতে রাজি নন। বছর দুয়েক আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘যেকোনো দিন আমি অলরাউন্ডার হিসেবে আমার আগে স্টোকসকে বেছে নেব।’
বেন স্টোকসের না খেলাটা বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য তাই বড় এক স্বস্তিই হওয়ার কথা। কতটা স্বস্তি, তা সাকিবের মুখ থেকে শোনার সুযোগ ছিল। ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আগে এসে স্টোকসের না খেলার কথা জানিয়ে গেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। এরপর বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে এই প্রশ্ন অবশ্যই কেউ না কেউ করত। কিন্তু সাকিব সংবাদ সম্মেলনে এলেই না করবেন!
সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। বাংলাদেশের নেট প্র্যাকটিসেও দেখা নেই। অনেকক্ষণ পর দেখা দিলেন বটে, তবে নেটের ধারেকাছেও গেলেন না। যতক্ষণ ছিলেন, ছাউনির নিচে একটা চেয়ারে বসে ম্যারাথন আড্ডা দিয়ে গেলেন। ম্যাচের আগের দিন কোনো সমস্যা নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন বোধ না করলে এমন কিছু সাকিবের জন্য নতুন নয়। তবে একটা শঙ্কা তো তখন জাগেই, কোনো চোট-টোট নেই তো আবার!
খোঁজ করেও তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। চোটের প্রসঙ্গ যখন এলই, এই ম্যাচের আগে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টা জানিয়ে দেওয়ার এটাই সুযোগ। কারণ, তাতেও চোটের ব্যাপারটা আছে। আলোচনাটা চোট পাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। মানে এই ম্যাচে কোনো ক্রিকেটার চোটে পড়বেন না তো!
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের পর ধর্মশালার আউটফিল্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এখানে পরের ম্যাচটাই ইংল্যান্ডের না হলে অবশ্যই এত আলোচনা হতো না। ব্রিটিশ মিডিয়া এমনিতেই খুঁত ধরার ওস্তাদ, আর এখানে তো যৌক্তিক কারণও আছে। জস বাটলারের সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্নে একসময় মনে হচ্ছিল, এটা পরদিনের ম্যাচ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনই তো, নাকি শুধুই আউটফিল্ড নিয়ে! ব্যাটিং-বোলিংয়ের ট্যাকটিকসের চেয়ে এই ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় চোট এড়াতে কী কৌশল অবলম্বন করা উচিত, এ নিয়েই তো কথা হলো বেশি। অভিযোগ-অনুযোগ সব জানিয়ে দেওয়ার পর বাটলার ‘সমস্যাটা দুই দলের জন্য একই থাকবে’ বলে একটা সমাধান দিতে চাইলেন।
কিন্তু সমস্যাটা মনে হচ্ছে শুধুই ইংল্যান্ড দলের। বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের আউটফিল্ড নিয়ে কোনো অভিযোগই নেই। এসব দেখার লোক আছে, তারা যদি মনে করে সব ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই...এমন একটা লাইনেই কথা চালিয়ে গেলেন। হেরাথের সংবাদ সম্মেলনে এই একটা বিষয়ই যা একটু মনে থাকার মতো। এমন ম্যাচের আগে অধিনায়ক এলে ম্যাচ নিয়ে দলের ভাবনাটা পরিষ্কার তুলে ধরতে পারেন। হেরাথ তা পারবেন কীভাবে! আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুজন অলরাউন্ডার আর তিনজন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ বোলিং অপশন হিসেবে আরেকজন বোলার দলে আসতে পারেন কি না, এই প্রশ্নে যেমন ক্ল্যাসিক এক উত্তর দিলেন, ‘ ষষ্ঠ বোলারের প্রয়োজন আছে কি না, ম্যাচের আগে নির্বাচকদের সঙ্গে কোচ ও অধিনায়ক আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’ একেবারেই নতুন তথ্য, একাদশ নির্বাচন যে এভাবেই হয়, এটা যেন কেউ জানতই না।
হেরাথের কথা থেকে কোনো সূত্র পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশ দল আজ আরেকজন বোলার খেলানোর কথা সিরিয়াসলিই ভাবছে। আফগানিস্তান ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে সেই বোলার একজন স্পিনার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও এই ম্যাচটা অন্য উইকেটে, যেটি নিয়ে কাল বিস্তর গবেষণা করলেন কোচ হাথুরুসিংহে। অনুশীলন শুরু করার আগে সাকিবকে নিয়ে অনেকক্ষণ। তখন যেটিতে সবুজ ঘাসের আস্তরণ। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় আবার যখন উইকেট দেখতে এলেন, তখন বলতে গেলে সবুজের চিহ্নও নেই। আলগা ঘাস ঝাড়ু দিতেই নেই হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ চাইবে, উইকেটের চরিত্রটা যেন প্রথম ম্যাচের মতোই হয়। যদিও এউইন মরগান ওই ম্যাচের উইকেটেও ধর্মশালার চিরন্তন বাড়তি বাউন্স দেখেছেন। এটি তাই ইংল্যান্ডের শক্তির অনুকূলেই কাজ করবে বলে তাঁর বিশ্বাস। ইংল্যান্ডের শক্তির জায়গা পেস বোলিং, যেখানে বাংলাদেশও এখন যথেষ্টই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। মরগানের অবশ্য বাংলাদেশের বর্তমান পেস আক্রমণ নিয়ে উচ্চ ধারণা নেই। তাঁর মতে, ২০১৫ বিশ্বকাপের অ্যাডিলেড ম্যাচের তুলনায় বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের শক্তি বরং কমেছে। অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের তিন পেসার ৮ উইকেট নিয়েছিলেন, রুবেল হোসেনের শেষ স্পেল ম্যাচের ভাগ্যও গড়ে দিয়েছিল—মরগানের হয়তো শুধু ওটাই মনে আছে।
ওই ক্ষত যে কোনো দিন শুকানোর নয়!