টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত আমাদের যা শেখাল
বৃষ্টিতে আজ বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচই পরিত্যক্ত হলো। পয়েন্ট ভাগাভাগির কারণে গ্রুপ ১-এ এখন ৩ পয়েন্টের হিড়িক লেগেছে। ৬ দলের মধ্যে মধ্যে ৪ দলেরই পয়েন্ট ৩, পার্থক্য শুধু রানরেটে। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে কী আছে, সেটা সময়ই বলে দেবে। আজ যেহেতু খেলা হয়নি, তাই ভাবলাম এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যা দেখলাম, সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
ছোট ও বড় দলের পার্থক্য
এবারের বিশ্বকাপে বড় ও ছোট দলের পার্থক্য কমে আসাটা সবচেয়ে বড় বিষয় মনে হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই সবার নজর কেড়েছে। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, সে হিসেবে কোনো দলকেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এমনকি যে স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া সুপার টুয়েলভে আসেনি, তারাও খুব ভালো খেলেছে। এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এটাই।
আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডসের মতো দলগুলো নিজেদের মধ্যে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলে। এই দলগুলো সাধারণত আলোচনায় থাকে না। এই দলগুলোর উন্নতিটা হয়েছে সবার অলক্ষ্যে। কিন্তু তারা যে অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছে, সেটার প্রমাণ এই বিশ্বকাপ। ওদের তুলনায় বাংলাদেশ যে একই জায়গায় আছে, এবারের বিশ্বকাপে সে বাস্তবতাও উন্মোচিত হয়েছে।
ফেবারিটরা এখন আর ফেবারিট নয়
বিশ্বকাপকে নিয়ে যে ভাবনা ছিল, সেটা এখন অনেকটা ওলটপালট হয়ে গেছে। বৃষ্টি একটা কারণ। আর ছোট দলগুলোর ভালো খেলা আরেকটা। পাকিস্তান এর মধ্যে দুটি ম্যাচ হেরে কোণঠাসা অবস্থায় আছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যেকোনো একটা দল বাদ পড়তে পারে। আর বৃষ্টিতে যেভাবে ম্যাচ পরিত্যক্ত হচ্ছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো একটা মঞ্চে এতগুলো ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হবে, সেটা ভাবিনি। বৃষ্টিই যদি ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে বিশ্বকাপের সেই আমেজটা আর থাকবে না। এটা নিশ্চয়ই কেউই চাইবে না।
অস্ট্রেলীয় গ্রীষ্মের ধাঁধা
টি-টোয়েন্টির জন্য যে ব্যাটিং কন্ডিশনটা দরকার, সেটা এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দেখছি না। শুধু সিডনিতে হয়তো দুটি ম্যাচে রান হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মের একদম শুরুতে খেলা হওয়ায় কন্ডিশন খুবই লাইভলি থাকছে। বৃষ্টিও হচ্ছে। যত সময় যাবে, উইকেট তত ভালো হবে। আরও ব্যাটিং সহায়কও হবে। কিন্তু এখন যে সুইং দেখছি, সেটা সাধারণত অস্ট্রেলিয়ায় দেখি না। শর্ট অব লেংথ থেকে স্টিপ বাউন্স দেখছি। তাজা ঘাসের উইকেট দেখছি সবখানে। ব্যাটিংয়ের জন্য এই কন্ডিশন আদর্শ নয়। সে কারণে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপটা বোলারদেরই। প্রথমে ভেবেছিলাম ভালো দলগুলো ১৮০ থেকে ২০০ রান করবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
স্পিন বিভীষিকা
অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন স্পিনারদের সাধারণত সাহায্য করে না। কিন্তু স্পিন যে একেবারেই কার্যকরী নয়, সেটা ঠিক না। কিন্তু গ্রীষ্মের একদম শুরু বলেই হয়তো স্পিন একদমই কাজে লাগছে না। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একটা কারণে পিছিয়ে। বাংলাদেশের স্পিনাররা যেহেতু বল ঘোরাতে পারে না, তাই তাদের কোনো প্রভাবই এখন পর্যন্ত দেখলাম না। এবারের বিশ্বকাপে আমাদের এই দুর্বলতাটাও সামনে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের শঙ্কা ও সম্ভাবনা
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যেভাবে হারলাম, সেটা হতাশাজনক। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গেও আমরা সহজে জিতিনি। আমরা ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং করেছি। নেদারল্যান্ডসও কিছু ভুল করে। এসব আমাদের জিততে সাহায্য করেছে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে ব্যাটিং করেছি, সেটা ভালো খবর নয়। এই পরিস্থিতিতে আমাদের পরের ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচে আমাদের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে কালই পাকিস্তানকে হারিয়েছে। তাদের আত্মবিশ্বাস এখন চাঙা। আমরা যদি পরের ম্যাচটা জিততে পারি, তাহলে অ্যাডিলেডে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারব। আমাদের সামনে শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে গেলে পরের দুটি ম্যাচের আগে দল অতটা অনুপ্রাণিত থাকবে না।
চোখ এখন প্রথম দশ ওভারে
আমাদের ওপেনিং ব্যাটিং এত খারাপ ছিল, এখন যা পাচ্ছি তাতেই হয়তো খুশি হয়ে যাচ্ছি। সমস্যা হচ্ছে, আমরা একটা উইকেট হারানোর পর দ্রুত আরেকটা উইকেট হারাচ্ছি। এটা আমাদের অনেক পিছিয়ে দেয়। যে কারণে টপ অর্ডার থেকে জুটি হচ্ছে না, যা এই কন্ডিশনে খুব জরুরি। আমরা ম্যাচটাকে গভীরে নিতে পারছি না। নিতে পারলে কিন্তু এই দলের ১৬০ থেকে ১৭০ রান করার সামর্থ্য আছে। আমরা যদি ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭০ রানে নিতে পারি, তাহলে শেষ ১০ ওভারে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে পারব। উইকেট হাতে থাকলে দ্রুত রান তোলার সম্ভাবনাটাও বেড়ে যায়। এটা আমরা করতে পারি। আগে করেও দেখিয়েছি।
অন্য দলগুলোর ব্যাটিংয়েও এ ধারাটাই দেখছি। নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ে, আয়ারল্যান্ডের অ্যান্ডি বলবার্নি, পাকিস্তানের শান মাসুদের মতো অনেকেই ঠিক তা-ই করছে। এখানে ম্যাচের পরিস্থিতি ও বোলারদের সম্মান দিতেই হবে। এটাই ব্যাটিংয়ের শৃঙ্খলা। চাইলেই সব সময়ই একই ব্যাটিং করতে পারব না। ম্যাচের পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষকে কিছু সময়ের জন্য হলেও সম্মান করতে হবে।
আমরা এ ক্ষেত্রে আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারলে বোধ হয় ভালো হতো। অন্য দলের মতো বিশ্বকাপ প্রস্তুতি আমাদের ছিল না। আমরা দুই মাস আগেও অন্য ক্রিকেটারদের নিয়ে দল সাজানোর পরিকল্পনা করছিলাম। এরপর সব পাল্টে যায়। বাকি দলগুলো নিশ্চয়ই আরও সময় নিয়ে পরিকল্পনা করেছে। আমরা সেটা করতে পারিনি। তবে বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলার পর আমাদের যে অভিজ্ঞতা হলো, সেটা থেকে শিখতে পারলে বাংলাদেশের সফল না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।